ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ৩১ মে ২০২৫, ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

যেভাবে হারিয়ে গেল ভালোবাসার চিঠি আর লাল ডাকবাক্স!

সংবাদদাতা, ঝিনাইগাতী, শেরপুর

প্রকাশিত: ০৯:২২, ৩০ মে ২০২৫

যেভাবে হারিয়ে গেল ভালোবাসার চিঠি আর লাল ডাকবাক্স!

ছবি: জনকণ্ঠ

কবিতার ভাষায় যতই বলুন, "দেরি হোক, যায়নি সময়"—তবুও বাস্তবতা হলো, সময় চলে গেছে। আবেগে লেখা দুই লাইন চিঠির দিন অনেক আগেই ফুরিয়েছে।

আমরা পেরিয়ে এসেছি চিঠির যুগ, প্রবেশ করেছি ইলেকট্রনিক বার্তার ঝলমলে জগতে। এখন আর দিনের পর দিন, মাসের পর মাস প্রিয়জনের গন্ধমাখা লেখা চিঠির জন্য কেউ অপেক্ষা করে না। মুহূর্তেই পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পৌঁছে যায় টুংটাং শব্দে ভরপুর খুদে বার্তা।

এক সময় মানুষের যোগাযোগ কিংবা মনের ভাব প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম ছিল ডাক বিভাগ। হলুদ রঙের পোস্টকার্ড কিংবা সাদা কাগজে লেখা চিঠি হলুদ খামে ভরে লাল রঙের ডাকবাক্সে ফেলা হতো প্রিয়জনের জন্য। সেই চিঠির প্রতিটি অক্ষরে থাকত আবেগ, ভালোবাসা, আর একধরনের পরম অপেক্ষা।

কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে প্রযুক্তির আধিপত্যে হারিয়ে যাচ্ছে সেই স্মৃতিময় দিনগুলো। বিলুপ্তপ্রায় হয়ে পড়েছে ঐতিহ্যবাহী হলুদ খাম আর লাল ডাকবাক্সের ব্যবহার। ঝিনাইগাতীর বিভিন্ন অলিগলিতে এখনো কিছু ডাকবাক্স দেখা গেলেও সেগুলো ভাঙাচোরা ও জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। কোথাও আবার ময়লার ভাগাড়ে খুঁজে পাওয়া যায় বিবর্ণ ডাকবাক্স। ডাকঘর ও ডাকবাক্স হারিয়ে ফেলেছে তাদের যৌবন। মরিচায় ক্ষয়ে যাওয়া লাল রঙের ডাকবাক্সে ধরেছে তামাটে ছোপ, মরিচা ধরেছে ডাকঘরের টিনের চাল ও বেড়ায়।

স্থানীয় ব্যাংকার জসিম উদ্দিন অনিক বলেন, “বিজ্ঞান দিন দিন এগিয়ে যাচ্ছে, আর আবেগ পৃথিবী থেকে বিদায় নিচ্ছে। চিঠির স্থান দখল করে নিয়েছে মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, স্কাইপি, ফেসবুক কিংবা টেলিগ্রাম। ইন্টারনেট ও ইমেইলের মাধ্যমে দ্রুত যোগাযোগ সম্ভব হওয়ায় মানুষ সে দিকেই ঝুঁকেছে।” ডিজিটাল এই যুগে ডাকঘরের আবেদন দিনদিন ফিকে হয়ে যাচ্ছে। হয়তো ভবিষ্যতের শিশুদের ডাকবাক্সের সঙ্গে দেখা হবে শুধুই জাদুঘরে।

ঝিনাইগাতী উপজেলার প্রধান ডাকঘরের পোস্টমাস্টার মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, “এখন আর আগের মতো হাতে লেখা চিঠি আদান-প্রদান হয় না। বিশেষ করে বিদেশি চিঠির সংখ্যা অনেক কমে গেছে। তবে ডাক বিভাগকে আধুনিকায়ন করা হয়েছে। পার্সেল আদান-প্রদান, মানি অর্ডার, সঞ্চয়পত্র, সরকারি ও প্রাতিষ্ঠানিক ডকুমেন্ট লেনদেন, চাকরিসংক্রান্ত সেবা ইত্যাদি দিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি সীমিত জনবল নিয়ে। এখনো মানুষের আস্থার জায়গায় রয়েছে ডাক বিভাগ।”

শহীদ

×