
ছবি:সংগৃহীত
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে দেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতে গতকাল থেকে শুরু হয়েছে টানা বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, এই লঘুচাপটি সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে এবং তা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নিম্নচাপে রূপ নিতে পারে। এর ফলে নদ-নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২-৩ ফুট পানি বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা উপকূলীয় নিম্নাঞ্চলগুলোতে প্লাবন সৃষ্টি করতে পারে।
বরগুনা জেলায় গতকাল থেকেই টানা ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, এখানে ১৮০ থেকে ২৪০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হতে পারে। ফলে জেলার নিচু এলাকা, বিশেষ করে বেরিবাঁধবিহীন অঞ্চলগুলোতে পানি ঢুকে পড়ছে। অনেক ফসলি জমি ও বসতবাড়ি ইতোমধ্যেই জলমগ্ন হয়েছে।
বরগুনা জেলার ৮০৫ কিলোমিটার দীর্ঘ বেরিবাঁধের অন্তত ১০-১৫টি পয়েন্ট অতিঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। প্রতি বছর মে মাসে উপকূলের মানুষ ভাঙনের আতঙ্কে থাকে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত আটটি বড় ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে পাঁচটি মে মাসেই সৃষ্টি হয়েছিল।
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায়ও ভারী বৃষ্টিপাত চলছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এখানে ৫৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। পায়রা সমুদ্রবন্দরে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত জারি রয়েছে। বন্দরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, লঘুচাপটি এখনো ঘূর্ণিঝড়ে রূপ না নেওয়ায় বড় কোনো জাহাজ চলাচলে প্রভাব পড়েনি। তবে পরিস্থিতির অবনতি হলে কয়লাবাহী মাদার ভেসেলগুলো গভীর সমুদ্রে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে।
বিশখালী, পায়রা ও বলেশ্বর নদীর পানি বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বরগুনার তালতলি, নলটোনা ও ফুলঝুড়ি ইউনিয়নের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা এবং কলাপাড়ার খেপুপাড়া, মির্জাগঞ্জ, বাউফলের কিছু ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে ইতিমধ্যে পানি ঢুকেছে। সেখানে বসবাসরত মানুষজন আতঙ্কে রাত কাটাচ্ছেন।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বরগুনা বা পিরোজপুর জেলায় আবহাওয়া অফিস না থাকায় তারা সময়মতো সঠিক তথ্য জানতে পারেন না। কলাপাড়ার রাডার স্টেশনটিও বিকল রয়েছে। ফলে আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানতে ওয়েবসাইট নির্ভর করতে হয়, যেখানে স্থানীয় এলাকার তথ্য অনেক সময় পাওয়া যায় না।
সমুদ্রে ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি থাকায় জেলেরা আপাতত মাছ ধরায় নেই। ফলে এখন পর্যন্ত কোনো ট্রলার ডুবির খবর পাওয়া যায়নি। তবে সতর্কতা জারি থাকায় জেলেদের সাগরে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে প্রশাসন।বঙ্গোপসাগরের লঘুচাপ আরও ঘনীভূত হয়ে নিম্নচাপে রূপ নিলে পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বৃষ্টিপাতের তীব্রতাও বাড়তে পারে। তাই উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে এবং স্থানীয় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলোতে নজরদারি বাড়িয়েছে।
সূত্র:https://youtu.be/B_NU3udEAps?si=2vk261slmw95cDys
আঁখি