ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৫ মে ২০২৫, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

৪০ সেকেন্ডেই ঘুম! এই ৩টি কৌশল জানলে ঘুমাতে ওষুধ লাগবে না!

প্রকাশিত: ১২:৫৭, ২৫ মে ২০২৫

৪০ সেকেন্ডেই ঘুম! এই ৩টি কৌশল জানলে ঘুমাতে ওষুধ লাগবে না!

রাত গভীর, চারপাশে নিস্তব্ধতা। কিন্তু মস্তিষ্ক যেন থামছেই না।ঘুম আসার কোনো নামগন্ধ নেই। এমন অভিজ্ঞতা কমবেশি সবাইকে পোহাতে হয়। স্লিপ ফাউন্ডেশনের এক বিশ্লেষণ বলছে, প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার ব্যবহারকারীর মধ্যে ৮০ শতাংশেরই কখনো না কখনো ঘুম আসতে সমস্যা হয়, আর ৩৭ শতাংশ মানুষ প্রায়শই ঘুমের সমস্যায় ভোগেন।

এই সমস্যার সমাধানে নিরীক্ষিত কিছু প্রশান্তিদায়ক কৌশল রয়েছে, যা অনুশীলনের মাধ্যমে মস্তিষ্ককে শান্ত করে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়তে সাহায্য করতে পারে।তাও আবার ওষুধ ছাড়াই।

নিয়ন্ত্রিত শ্বাসপ্রশ্বাসের কৌশল
ধীরে ও গভীরভাবে শ্বাস নেওয়ার মাধ্যমে শরীর ও মনকে শিথিল অবস্থায় আনা সম্ভব। এক হাতে পেটের উপর ও অন্য হাতে বুকের উপর রাখুন। এবার ধীরে শ্বাস নিন, যেন তা সরাসরি পেটের গভীরে পৌঁছায়। লক্ষ্য করুন, পেটে রাখা হাতটি ধীরে ধীরে উঠছে কিন্তু বুকে রাখা হাতটি নড়ছে না। এরপর ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন এবং দেখুন পেটের হাতটি নিচে নেমে আসছে। কয়েকবার এভাবে অভ্যাস করুন। ঘুমের আগের প্রস্তুতিতে এটি অসাধারণ কাজ করে।

বডি স্ক্যান মেডিটেশন
শরীর ও মনের মধ্যে প্রশান্তি ফিরিয়ে আনতে অনেকেই মেডিটেশন বা ধ্যান অনুশীলন করেন। এর একটি কার্যকর উপায় হলো ‘বডি স্ক্যান’। এতে আপনি কোনো পূর্বধারণা ছাড়াই শরীরের প্রতিটি অংশের প্রতি মনোযোগ দেন এবং অনুভব করেন সেখানে কী ঘটছে।

শুয়ে পড়ুন চিত হয়ে, হাতদুটি শরীরের পাশে। প্রথমে কয়েক মুহূর্ত ধরে ধীরে শ্বাস নিন। এবার মনোযোগ দিন পায়ের অনুভূতিতে।সেগুলোর ভালো বা খারাপ বিচার না করে শুধু অনুভব করুন। কল্পনা করুন, শ্বাস নিচ্ছেন এবং তা সরাসরি পৌঁছে যাচ্ছে পায়ে। শ্বাস ছাড়ার সময় পায়ের অস্তিত্ব যেন মুছে যাচ্ছে এমন কল্পনা করুন এবং মনোযোগ নিয়ে যান গোড়ালি ও পায়ের পেশিতে। এভাবে ধীরে ধীরে শরীরের প্রতিটি অংশে মনোযোগ দিন, শেষে মাথায় এসে শেষ করুন।

এই প্রক্রিয়া শেষ করার পর কয়েকবার গভীরভাবে শ্বাস নিন এবং পুরো শরীরের উপস্থিতি অনুভব করুন।

প্রগ্রেসিভ মাসল রিল্যাক্সেশন (PMR)
প্রগ্রেসিভ মাসল রিল্যাক্সেশন বা পেশি শিথিল করার কৌশলে শরীরের বিভিন্ন পেশি ইচ্ছাকৃতভাবে টান ও ছাড়ের মাধ্যমে মস্তিষ্ক ও স্নায়ু শিথিল করা হয়।

সাবধানে বসুন বা শুয়ে পড়ুন। ধীরে শ্বাস নিতে নিতে মুষ্টিবদ্ধ করুন আপনার হাত এবং অনুভব করুন এই টান। এবার শ্বাস ছাড়ার সময় মুঠো খোলার সঙ্গে সঙ্গে অনুভব করুন কীভাবে পেশির চাপ দূর হয়ে যাচ্ছে। এভাবে শ্বাস নেওয়ার সময় পেশি টানুন এবং ছাড়ার সময় শিথিল করুন। ধীরে ধীরে শরীরের অন্যান্য অংশেও একই কৌশল প্রয়োগ করুন।

মানসচিত্রের কৌশল (ইমাজিনেশন)
চোখ বন্ধ করে নিজের প্রিয় কোনো শান্ত পরিবেশ কল্পনা করুন।যেমন সাগরের ধারে একটি নিরিবিলি সন্ধ্যা। এই ‘ইমাজিনেশন’ বা মানসচিত্রের কৌশল আপনাকে প্রশান্ত করে তুলবে।

একটি আরামদায়ক ভঙ্গিতে বসে বা শুয়ে পড়ুন। চোখ বন্ধ করুন, কয়েকবার ধীরে শ্বাস নিন। এবার কল্পনায় চলে যান সেই শান্ত পরিবেশে। চারপাশের রঙ, শব্দ, গন্ধ-সব খুঁটিনাটি অনুভব করার চেষ্টা করুন। শরীর কীভাবে ধীরে ধীরে শান্ত হচ্ছে, তা অনুভব করুন।

মিলিটারি মেথড
যেকোনো জায়গায়, যেকোনো সময় ঘুমিয়ে পড়ার জন্য সেনাবাহিনীতে ব্যবহৃত এই পদ্ধতিটি কার্যকর। এটি এমনভাবে তৈরি, যাতে কঠিন পরিস্থিতিতেও সৈনিকরা ঘুমিয়ে পড়তে পারেন।

প্রথমে মুখমণ্ডলের পেশিগুলো শিথিল করুন।কপাল থেকে চোয়াল পর্যন্ত। এরপর কাঁধ ও বাহুর পেশিগুলো ছাড়ুন এবং শ্বাস নিন ধীরে। এবার ধীরে ধীরে পায়ের পেশিগুলো শিথিল করুন।নিতম্ব থেকে পায়ের আঙুল পর্যন্ত। চোখ বন্ধ রেখে কল্পনা করুন কোনো শান্ত পরিবেশ। মন যদি বিঘ্নিত হয়, মনে মনে একটি সহজ শব্দ পুনরাবৃত্তি করুন, যেমন “চুপ থাকো” বা “নীরব হও”।

৪-৭-৮ শ্বাসপ্রশ্বাস কৌশল (ড. অ্যান্ড্রু ওয়েইলের পদ্ধতি)
স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত করতে বিশেষভাবে তৈরি এই শ্বাস নিয়ন্ত্রণ কৌশলটিতে রয়েছে একটি নির্দিষ্ট ছন্দে শ্বাস নেওয়া, ধরে রাখা ও ছাড়ার অনুশীলন।

চোখ বন্ধ করুন এবং জিভের আগা উপরের পাটির ঠিক পেছনে রাখুন, পুরো অনুশীলনজুড়েই এই ভঙ্গি বজায় রাখুন। নাক দিয়ে ৪ পর্যন্ত গুনে শ্বাস নিন। এবার ৭ পর্যন্ত গুনে শ্বাস আটকে রাখুন। মুখ দিয়ে ৮ পর্যন্ত গুনে শ্বাস ছাড়ুন, যেন শরীর থেকে এক দমে বেরিয়ে যাচ্ছে। এই চক্রটি চারবার পুনরাবৃত্তি করুন।

শব্দ খেলার মাধ্যমে মনোযোগ সরান
কিছু নির্দিষ্ট শব্দ খেলার মাধ্যমে মস্তিষ্ককে অন্যদিকে ব্যস্ত রাখা যায়, যা ঘুম আনতে সাহায্য করে। গবেষক লুস বোডুইন এমন একটি শব্দ খেলার কৌশল তৈরি করেছেন, যা ঘুম আসতে সাহায্য করে।

একটি নিরপেক্ষ পাঁচ অক্ষরের শব্দ বেছে নিন, যাতে একই অক্ষর বারবার না আসে।যেমন ‘ড্রিম’। এবার শব্দটির প্রথম অক্ষর দিয়ে যত বেশি শব্দ পারেন ভেবে ফেলুন।যেমন D দিয়ে dog, duck, donut ইত্যাদি। প্রতিটি শব্দ চোখ বুজে কল্পনায় আঁকতে চেষ্টা করুন। এরপর শব্দটির পরবর্তী অক্ষরে যান এবং এভাবে পুরো শব্দটি নিয়ে অনুশীলন করুন।

যদি এর আগেই ঘুম চলে আসে, তবে নিজেকে বাধা না দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন।


ঘুমের সমস্যা আমাদের শরীর ও মনের উপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে। ওষুধে নির্ভর না করে এসব প্রাকৃতিক ও সহজ কৌশল নিয়মিত অনুশীলন করলে শরীর শিথিল হয়, মস্তিষ্ক শান্ত হয় এবং ঘুম সহজেই চলে আসে। তাই রাতভর বিছানায় ছটফট না করে এই কৌশলগুলো একবার চেষ্টা করে দেখুন হয়তো আপনি ৪০ সেকেন্ডেই ঘুমিয়ে পড়বেন।

 

 


সূত্র:https://tinyurl.com/4x5vcmtp

আফরোজা

×