
ছবি :সংগৃহীত
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই চাকরি কেড়ে নিচ্ছে না কি তৈরি করছে—তা আসলে বৃহত্তর এক পরিবর্তনের ছোট অংশমাত্র। আসল রূপান্তরটি ঘটছে কর্মজীবনে "উদ্দেশ্য" এবং "সফলতা"র সংজ্ঞায়। আজকের দুনিয়ায় ক্যারিয়ারের সাফল্য আর ডিগ্রির উপর নির্ভর করে না। কল্পনাশক্তি ও প্রযুক্তি ব্যবহারের দক্ষতার উপর নির্ভর করে।
এখন এমন এক সময় এসেছে, যেখানে একজন ব্যক্তি সঠিক এআই টুল ব্যবহার করে একটা পূর্ণাঙ্গ টিমের কাজ করতে পারছেন। একজন একাই সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, মার্কেটিং ক্যাম্পেইন, কাস্টমার ইনসাইট বিশ্লেষণ এবং আর্থিক বিশ্লেষণ করতে পারছেন Jasper, GitHub Copilot, Akkio, Finmatic-এর মতো টুল ব্যবহার করে। এই রূপান্তর শুধু কাজের ধরন নয়, বরং কী ধরনের কাজ আমরা কল্পনা করতে পারি—সেই দৃষ্টিভঙ্গিকেও বদলে দিচ্ছে।
এআইকে হুমকি হিসেবে নয়, বরং সহযোগী হিসেবে দেখেন দেখেন তারা কেবল প্রযুক্তিকে কাজে লাগান না, বরং তারা নতুন সম্ভাবনার তৈরিও করেন। Jasper, Replit, এবং Copy.ai-এর মতো টুলস ব্যবহারে একজন ব্যক্তি আজ একাই ব্যবসা দাঁড় করাতে পারেন। ফলে একক উদ্যোক্তাদের উত্থান এখন বাস্তবতা।
প্রযুক্তির এই নতুন যুগে সবচেয়ে দুষ্প্রাপ্য দক্ষতা হলো কল্পনাশক্তি। কোড লেখা, কনটেন্ট তৈরি, ডেটা বিশ্লেষণ—এসব এআই-ও পারে। কিন্তু নতুন ধারণা সৃষ্টির ক্ষমতা এখনো মানুষের। এ কারণেই বর্তমানে ‘জেনারালিস্ট’ এবং ‘ভাইব কোডার’দের উত্থান হচ্ছে, যারা গভীর টেকনিক্যাল দক্ষতা ছাড়াই কল্পনা দিয়ে এআইকে কাজে লাগিয়ে যাচ্ছেন।
আসুন দেখি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কিভাবে কর্মসংস্থান যুগিয়ে দিচ্ছে । একসময় ক্যারিয়ার ছিল ধাপে ধাপে এগোনোর বিষয়—জুনিয়র থেকে সিনিয়র, তারপর ম্যানেজার। এখন ক্যারিয়ার মানে এক লাফে এগিয়ে যাওয়া। যেমন, স্বাস্থ্য খাতে তৈরি হচ্ছে নতুন পেশা: AI সহায়ক সার্জন, ডেটা বিশ্লেষণভিত্তিক রোগ নির্ণয় বিশেষজ্ঞ, প্রযুক্তিগত নীতিমালায় পারদর্শী মেডিকেল এথিসিস্ট। নতুন এক শ্রেণির পেশাজীবী তৈরি হচ্ছে—যারা এআইকে কগনিটিভ এক্সোস্কেলেটন বা মানসিক শক্তিবর্ধক হিসেবে ব্যবহার করছেন। Netflix-এর Tanner Christensen যেমন Notion AI ব্যবহার করে নিজের কাজের ডায়েরি থেকে ট্রেন্ড ও কেস স্টাডির রূপরেখা বের করছেন।
সফল হতে চাইলে কী করবেন?
১. যেসব দক্ষতা স্বয়ংক্রিয় নয়, সেগুলো গড়ে তুলুন—আপনার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি, সৃজনশীলতা, সংযোগ তৈরির ক্ষমতা।
২. দ্রুত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করুন—এআই দিয়ে আইডিয়া তৈরি, উন্নয়ন ও পরীক্ষার খরচ অনেক কমে গেছে।
৩. এআই-সমৃদ্ধ কল্পনাশক্তি তৈরি করুন—শুধু টুলস ব্যবহার নয়, বরং এগুলোর অপ্রচলিত ব্যবহার কল্পনা করুন।
৪. সমস্যাকেন্দ্রিক চিন্তা করুন—নিয়মিত বদলে যাওয়া স্কিলের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোন সমস্যাটি আপনি সমাধান করতে চান।
আমরা এমন এক যুগে প্রবেশ করছি, যেখানে সেরা ক্যারিয়ার সিদ্ধান্ত হবে নিজের ভবিষ্যৎ নিজেই তৈরি করা। এআই কেবল দক্ষতা নয়, কল্পনার সীমানাও বাড়িয়ে দিচ্ছে। প্রশ্ন একটাই—আপনি কি এআই ব্যবহার করে আপনার চাকরি ও ভবিষ্যৎ নতুনভাবে কল্পনা করতে পারবেন?
সা/ই