
হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার হলহলিয়া ঘিলানী ছড়াসহ বিভিন্ন নদী ও ছড়া থেকে প্রভাবশালী চক্রের অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। হলহলিয়া ঘিলানী ছড়ার বিভিন্ন স্থানে ও ব্রিজের গোড়া থেকে নিয়মিত বালু উত্তোলনের ফলে ব্রিজের গোড়া থেকে মাটি সরে যাচ্ছে, যা ভাঙন তৈরি করছে এবং সেতুটি ধসে পড়ার আশঙ্কা সৃষ্টি করছে। সেতুটি ভেঙে গেলে দুই পাড়ের হাজার হাজার মানুষের যোগাযোগে চরম দুর্ভোগ নেমে আসবে।
সম্প্রতি, দুই জন সাংবাদিক হলহলিয়ার রাস্তা দিয়ে সংবাদ সংগ্রহের কাজে যাওয়ার সময় ব্রিজের কাছে মোটরসাইকেল ব্রেক করা মাত্রই বালু উত্তোলনে নিয়োজিত ২০-২৫ জন লোক কোদাল ও বেলচা ফেলে দৌড়ে পালিয়ে যায়। এই ঘটনা অবৈধ বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িতদের বেপরোয়া মনোভাব এবং তাদের কর্মকাণ্ডের গোপনীয়তার ইঙ্গিত দেয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, ৫ আগস্টের পর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ‘খাই খাই’ পরিস্থিতি শুরু হওয়ার পর চুনারুঘাটেও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীসহ প্রভাবশালী মহল নদী-নালার বালুর সাথে মিশে গেছে।
একসময় প্রচলিত ছিল, "টাকা কি গাঙে দিয়ে আসে?" কিন্তু বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশি টাকা যেন গাঙ থেকেই আসছে। শুধু হলহলিয়া নয়, চুনারুঘাট উপজেলার ঘিলানী ছড়া, সুতাং নদী, খোয়াই নদী, করাঙ্গী নদী, জিবদর ছড়াসহ অসংখ্য নদী ও ছড়া থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
বালু উত্তোলনের জন্য ফাইভ এবং ডেজার মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি। এছাড়া, উত্তোলনকৃত বালু পরিবহনের জন্য বড় বড় ড্রাম ট্রাক ও ট্রাক্টর গাড়ি ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব ভারী যানবাহন গ্রামের ছোট রাস্তাগুলোতে প্রবেশ করায় রাস্তাগুলো ভেঙে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে, যার ফলে মানুষের চলাচলে চরম ভোগান্তি হচ্ছে। অনেক স্থানেই রাস্তাগুলো চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
স্থানীয়দের মতে, পুরো এলাকা যেন বালুখেকোদের সাম্রাজ্যে পরিণত হয়েছে। অথচ, এই ভয়াবহ পরিস্থিতি সত্ত্বেও প্রশাসনের কোনো নজর নেই। অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি করেছে। পরিবেশ বিপর্যয়, গ্রামীণ অবকাঠামোর ধ্বংস এবং জনদুর্ভোগ লাঘবে অনতিবিলম্বে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। অন্যথায়, চুনারুঘাট উপজেলায় এক ভয়াবহ মানবিক ও পরিবেশগত বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
রিফাত