ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৬ মে ২০২৫, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

শিক্ষকতা ছেড়ে কলা চাষে লাখপতি! শামীম হায়দারের গল্প এখন উদ্যোক্তাদের অনুপ্রেরণা

এম এ আজিজ, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, ঝালকাঠি

প্রকাশিত: ০০:৩৪, ২৬ মে ২০২৫; আপডেট: ০০:৪০, ২৬ মে ২০২৫

শিক্ষকতা ছেড়ে কলা চাষে লাখপতি! শামীম হায়দারের গল্প এখন উদ্যোক্তাদের অনুপ্রেরণা

শিক্ষকতা ছেড়ে কৃষিকাজ! এক সময় যা ভাবাই যেত না, আজ তা সম্ভব করে দেখিয়েছেন ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার বড়ইয়া গ্রামের মোঃ শামীম হায়দার। ঐতিহ্যবাহী ডাক্তার বাড়ির সন্তান শামীম এক সময় ছিলেন একটি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক। তবে কৃষির প্রতি টান আর নিজের কিছু করার দৃঢ় সংকল্প থেকেই ২০০৮ সালে মাত্র ২০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে শুরু করেন দেশীয় প্রজাতির কলা চাষ। বর্তমানে তিনি শুধু একজন সফল কৃষক নন, একজন উদ্যমী উদ্যোক্তাও।

শামীম হায়দার এখন ‘বড়ইয়া কৃষি খামার’ নামক একটি প্রকল্প পরিচালনা করছেন। বড়ইয়া গ্রামে অবস্থিত তার এই কৃষি খামারে ১ একর ২৬ শতাংশ জমিতে তিনি বিভিন্ন প্রজাতির কলা চাষ করছেন। এখান থেকে বার্ষিক আয় করছেন প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা। তার খামারে কাজের সুযোগ পেয়েছেন এলাকার একাধিক বেকার যুবক, যার ফলে এটি পরিণত হয়েছে একটি ছোট আকারের কর্মসংস্থান কেন্দ্রেও।

শামীম বলেন, “মানুষের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালরি, খনিজ, ভিটামিন সবই রয়েছে কলায়। স্বাস্থ্যকর ফল হিসেবে কলার চাহিদা সারাবছরই। তাই এর চাষে লাভবান হওয়া সম্ভব।”

শুধু নিজের প্রচেষ্টা নয়, শামীমের এই সফলতার পেছনে রয়েছে রাজাপুর উপজেলা কৃষি অফিসের সরাসরি সহায়তা। উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সাইফুল ইসলামের মাধ্যমে কৃষি কর্মকর্তা শাহিদা শারমিন আফরোজের নজরে আসেন শামীম। এরপর থেকেই তিনি নিয়মিত পরামর্শ ও সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। এমনকি প্রশিক্ষণ নিয়ে পেয়েছেন কৃষক কার্ড ও প্রত্যয়ন পত্র।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা বলতে গিয়ে শামীম জানান, “কৃষি পণ্যের উৎপাদন খরচ এখন অনেক বেশি। যদি সরকারি বা বেসরকারি প্রণোদনা, উন্নত চারা, সেচ পাম্প ও ঔষধসহ সরঞ্জাম পাওয়া যায়, তবে উৎপাদন আরও বাড়ানো সম্ভব।”

স্থানীয়দের মতে, শামীম এখন শুধু একজন কলা চাষি নন, এলাকার যুবসমাজের অনুপ্রেরণার নাম। তার কৃষি উদ্যোগ আরও সম্প্রসারণ হলে বেকারত্ব হ্রাসে তা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারবে বলে বিশ্বাস তাদের। উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ মেহেদী হাসান একাধিকবার শামীমের খামার পরিদর্শন করে তাকে ‘দক্ষ ও পরিশ্রমী চাষি’ হিসেবে প্রশংসা করেন।

শামীম হায়দারের এই গল্প প্রমাণ করে, শিক্ষা থাকলে শিক্ষক হওয়াই একমাত্র পথ নয়। নিজের স্বপ্ন ও পরিশ্রম থাকলে কৃষিকাজ থেকেও গড়ে তোলা যায় একটি সুন্দর ও সম্মানজনক ভবিষ্যৎ।

মিমিয়া

×