
ছবি: সংগৃহীত
ইতিহাসের অন্যতম করুণ ও ভয়াবহ দুর্ঘটনা হিসেবে টাইটানিকের নাম সকলের মুখে মুখে। ১৯১২ সালে বিলাসবহুল ওই জাহাজের ডুবে যাওয়ার ঘটনায় প্রাণ হারান প্রায় দেড় হাজার মানুষ। সেই হৃদয়বিদারক ঘটনা নিয়ে তৈরি হয়েছে উপন্যাস, গবেষণা, এমনকি বিশ্বখ্যাত সিনেমাও। কিন্তু ইতিহাসের পাতায় এমন এক জাহাজডুবির ঘটনা রয়েছে—যেখানে প্রাণহানি ঘটেছিল টাইটানিকের চেয়েও ছয় গুণ বেশি। অথচ সেই মর্মান্তিক ঘটনা আজও অনেকের কাছেই অজানা।
ঘটনাটি এমভি উইলহেম গুস্টলফ নামের জাহাজডুবির, যা ঘটেছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্তিম লগ্নে। ১৯৪৫ সালের ৩০ জানুয়ারি, জার্মানির কিয়েল বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল এই জাহাজটি, পোল্যান্ডের গডিনিয়া বন্দর থেকে। জাহাজে ছিল প্রায় ১০ হাজার শরণার্থী, সৈনিক ও চিকিৎসাকর্মী। উদ্দেশ্য ছিল সোভিয়েত বাহিনীর অগ্রগতি থেকে প্রাণ বাঁচিয়ে জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলে পৌঁছানো।
কিন্তু বাল্টিক সাগরে যাত্রার সময় সোভিয়েত সাবমেরিন এস-১৩ জাহাজটির ওপর তিনটি টর্পেডো নিক্ষেপ করে। সাবমেরিনটির কমান্ডার ছিলেন আলেকজান্ডার মারিনেস্কো। মাত্র ৪০ থেকে ৬০ মিনিটের মধ্যেই বিশাল জাহাজটি সাগরের অতল গভীরে ডুবে যায়। সাগরের ঠান্ডা পানিতে হাইপোথার্মিয়া ও ডুবে প্রাণ হারান প্রায় ৯ হাজার যাত্রী। তাদের মধ্যে প্রায় ৫ হাজারই ছিল শিশু।
উইলহেম গুস্টলফ জাহাজটি ১৯৩৭ সালে জার্মানির হামবুর্গে নির্মাণ করা হয়। নাজি পার্টির ‘ক্রাফট ডার্স ফ্রয়েডে’ নামে একটি প্রোপাগান্ডা প্রোগ্রামের অংশ ছিল এটি, যার উদ্দেশ্য ছিল শ্রমজীবী মানুষদের বিনোদন ও সাশ্রয়ী ভ্রমণের সুযোগ দেওয়া। জাহাজটির নামকরণ করা হয়েছিল নাজি নেতা উইলহেম গুস্টলফের নামে, যিনি ১৯৩৬ সালে এক হত্যাকাণ্ডে নিহত হন।
যুদ্ধের সূচনায় জার্মান নৌবাহিনী জাহাজটি দখল করে এবং প্রথমে এটিকে হাসপাতাল জাহাজ হিসেবে, পরে সাবমেরিন কর্মীদের ভাসমান ব্যারাক হিসেবে ব্যবহার করে। কিন্তু যুদ্ধের শেষ দিকে তা বিশাল জনস্রোত সরিয়ে নেওয়ার একটি অসহায় প্রয়াসে পরিণত হয়।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি ও জাহাজটির নাজি সংশ্লিষ্টতার কারণে উইলহেম গুস্টলফের ট্রাজেডি সেভাবে আলোচিত হয়নি। অনেকটা ইচ্ছাকৃতভাবেই ঘটনাটি ইতিহাসের নিচে চাপা পড়ে যায়।
বিশ্ব ইতিহাসের এই সবচেয়ে ভয়াবহ নৌ দুর্ঘটনাটি আজও বহু মানুষের অজানা রয়ে গেছে, যা টাইটানিক ট্রাজেডির তুলনায় অনেক বেশি প্রাণঘাতী হলেও যথাযথ স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত।
সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=ebhtQL9rOPA
রাকিব