ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২

Patriot, S-400 না HQ-19? আকাশ প্রতিরক্ষায় কোনটি জুতসই, এগিয়ে কারা?

প্রকাশিত: ১৬:৪৭, ১৫ জুলাই ২০২৫

Patriot, S-400 না HQ-19? আকাশ প্রতিরক্ষায় কোনটি জুতসই, এগিয়ে কারা?

ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার ১২ দিনের যুদ্ধে দেখা গেছে অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার চূড়ান্ত ব্যবহার। একদিকে ইরান ছুড়েছে ৫৯১টি মিসাইল এবং দেড় হাজারের বেশি ড্রোন। অন্যদিকে ইসরায়েল বলছে, তারা প্রতিহত করেছে এসব আক্রমণের প্রায় পুরোটাই। ইসরায়েলের দাবি অনুযায়ী, মাত্র ৫০টি মিসাইল ও একটি ড্রোন লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছে। বাকি সবই মাঝ আকাশেই ধ্বংস হয়েছে।

অন্যদিকে, ইসরায়েল চালিয়েছে ১,৪৮০টির বেশি পাল্টা হামলা। তাদের দাবি, তারা ধ্বংস করেছে ইরানের অন্তত ২০টি যুদ্ধবিমান এবং এক হাজারের বেশি মিসাইল ও রকেট লঞ্চার। প্রাণহানির দিক থেকেও ব্যবধান বিশাল। ইসরায়েলে নিহত হয়েছেন ২৯ জন, আর ইরানে প্রাণ হারিয়েছেন ৬২৭ জন।

এই বৈসাদৃশ্য প্রমাণ করে, আধুনিক যুদ্ধে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার গুরুত্ব কতটা। বিশ্বব্যাপী এখন প্রতিটি সামরিক পরাশক্তিই গড়ে তুলেছে বহুস্তরবিশিষ্ট এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম।

Patriot: যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বস্ত ঢাল

যুক্তরাষ্ট্রের প্যাট্রিয়ট মিসাইল সিস্টেম (MM-104) বিশ্বের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলোর একটি। এর রাডার ১৫০ কিলোমিটার দূর থেকেই হুমকি শনাক্ত করতে পারে। ব্যালিস্টিক মিসাইলসহ যেকোনো দ্রুতগামী ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে সক্ষম এটি।

প্যাট্রিয়টের দুটি ভার্সন রয়েছে—PAC-2 এবং PAC-3। PAC-2 বিস্ফোরকযুক্ত, আর PAC-3 সরাসরি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে। PAC-2 লঞ্চারে থাকে ৪টি মিসাইল, প্রতিটির দাম ৩ মিলিয়ন ডলার। PAC-3 লঞ্চারে থাকে ১৬টি মিসাইল, প্রতিটির দাম ৪ মিলিয়ন ডলার। একটি পূর্ণাঙ্গ প্যাট্রিয়ট ব্যাটারির মূল্য প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, জাপান, সৌদি আরব, ইসরাইল, ইউক্রেনসহ অন্তত ১৫টি দেশ এই ব্যবস্থা ব্যবহার করছে।

THAAD: হাজার কিলোমিটারে নজরদারি

প্যাট্রিয়টের পর আরও শক্তিশালী যুক্তরাষ্ট্রের THAAD (Terminal High Altitude Area Defense)। এর রাডার প্রায় ১,০০০ কিলোমিটার দূর থেকেও মিসাইল শনাক্ত করতে পারে। শত্রুর মিসাইলকে সরাসরি আঘাতে ধ্বংস করে।

একটি THAAD ব্যাটারিতে ৬টি লঞ্চার ও ৪৮টি মিসাইল থাকে। প্রতিটি মিসাইলের দাম ১২–১৫ মিলিয়ন ডলার। একটি সম্পূর্ণ সিস্টেমের মূল্য প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার। এটি যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও দক্ষিণ কোরিয়া, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ব্যবহার করে।

রাশিয়ার শক্তি: S-400 ও S-500

রাশিয়ার সবচেয়ে আলোচিত এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম হলো S-400, যা ২০০৭ সালে কার্যক্রম শুরু করে। এটি ৬০০ কিলোমিটার দূর থেকে লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত করতে পারে এবং একসাথে ৮০টি লক্ষ্যবস্তু ট্র্যাক করতে পারে ও ৩৬টি ইন্টারসেপ্টর ছুড়তে পারে। S-400 সিস্টেমের দাম প্রায় ৩০০–৫০০ মিলিয়ন ডলার।

এই সিস্টেম এখন চীন, তুরস্ক, ভারত, বেলারুশ ও আলজেরিয়া ব্যবহার করছে। ২০২১ সালে রাশিয়া এনেছে আরও উন্নত S-500 যা মহাকাশপথের স্যাটেলাইট পর্যন্ত ধ্বংসে সক্ষম।

চীনের HQ-19: ভবিষ্যতের ফোকাস

চীনের HQ-19 হলো তাদের সবচেয়ে শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এটি ৩,০০০ কিলোমিটার দূর থেকে হাইপারসোনিক মিসাইল এমনকি লোয়ার অরবিট স্যাটেলাইট পর্যন্ত ধ্বংস করতে পারে।

এছাড়া চীনের রয়েছে HQ-6, HQ-7, HQ-9—যা স্বল্প ও মধ্যম পাল্লার মিসাইল ঠেকাতে সক্ষম। HQ-9 সিস্টেম প্রায় Patriot বা S-300 এর সমমানের বলে বিবেচিত। HQ সিরিজের কিছু মডেল পাকিস্তান, মিশর, মরক্কোতেও রপ্তানি করা হয়েছে।

ইসরায়েলের ত্রিস্তরীয় রক্ষা বলয়

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তিন স্তরে বিভক্ত:

  • Iron Dome: স্বল্পপাল্লার রকেট ও মর্টার প্রতিহত করে
  • David’s Sling ও Barak 8: মধ্যম পাল্লার হুমকি রোধ করে
  • Arrow 3: মহাকাশপথে থাকা লক্ষ্যবস্তু ধ্বংসে সক্ষম

Barak 8 যৌথভাবে তৈরি করেছে ভারত ও ইসরায়েল। এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বর্তমানে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি সহ বিভিন্ন দেশেও ব্যবহৃত হচ্ছে।

তাহলে এগিয়ে কারা?

বর্তমান বৈশ্বিক বাস্তবতায় যুক্তরাষ্ট্রের THAAD ও Patriot, রাশিয়ার S-400/S-500, চীনের HQ-19, এবং ইসরায়েলের Iron Dome ও Arrow—সব কটিই নিজ নিজ ভূ-রাজনৈতিক চাহিদা অনুযায়ী সফল। তবে, একাধিক স্তরবিশিষ্ট প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও কার্যকর ট্র্যাকিং রাডার থাকায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল কিছুটা এগিয়ে বলেই মত সামরিক বিশ্লেষকদের।

তবে সাম্প্রতিক ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের মতো পরিস্থিতি প্রমাণ করে—মিসাইল ঠেকাতে যতই প্রযুক্তি থাকুক, শতভাগ নিরাপত্তা এখনো নিশ্চিত নয়। কারণ, যুদ্ধে ‘অভেদ্য’ বলে কিছু আর নেই।

 

সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=CrFy7-RiyHY

রাকিব

×