
পদ্মা নদীঘেঁষা ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার খাল, বিল ও কোলসহ বিভিন্ন নদীতে কারেন্ট জালের পাশাপাশি চায়না দুয়ারি নামের একপ্রকার ফাঁদ ব্যবহার করে মৎস্য সম্পদ ধ্বংস করে চলছে এক শ্রেণির অসাধু মাছ শিকারিরা।
চায়না দুয়ারিকে স্থানীয়ভাবে জাল বলা হলেও এটি মাছ ধরার বিশেষ একটি ফাঁদ। একে চায়না জাল, ম্যাজিক জাল ও ঢলুক জাল নামেও ডাকা হয়। এ ফাঁদের কারণে জলাশয়গুলো দিন দিন মাছশূন্য হয়ে পড়ছে বলে অভিযোগ মৎস্যজীবীদের। মৎস্যবিশেষজ্ঞদের মতে, এটা চাঁই বা কারেন্ট জালের চেয়েও ভয়ংকর এক ফাঁদ।
জানা যায়, এই চায়না দুয়ারি দৈর্ঘ্য প্রায় ৮০ থেকে ৯০ ফুট লম্বা হয়। এই দুয়ারির দুই দিকে মুখ থাকার পাশাপাশি এক অভিনব পদ্ধতিতে প্রস্তুত করায় উজান ও ভাটি সব দিক থেকে মাছ ভেতরে ঢুকলে আর বের হতে পারে না। ঘন ফাঁসের এই দুয়ারিতে পোনা মাছ থেকে শুরু করে ছোট বড় সব ধরনের মাছ আটকা পড়ায় ধ্বংস হচ্ছে মৎস্য সম্পদ।
উপজেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, উপজেলা মৎস্য দপ্তর হতে প্রায় এক-দুই কিলোমিটারের মধ্যেই লোহারটেক কোল ও পদ্মা নদীর বিভিন্ন স্থানে চায়না দুয়ারি দিয়ে নিধন করা হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। সারা বছরই বিভিন্ন স্থানে এই ফাঁদ দিয়ে মাছ শিকার করলেও বর্ষা মৌসুমে যেন অসাধু শিকারিরা মাছ ধরার মহোৎসবে নামে। জোয়ারের পানির সঙ্গে ডিমওয়ালা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ খাল, বিলসহ বিভিন্ন স্থানে বংশ বিস্তারের জন্য আসার গতি পথে পাতা হচ্ছে এই ফাঁদ।
নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার করে মাছ নিধন বন্ধে কোন অভিযান না হওয়ায় এসব অসাধু মাছ শিকারিরা কার্যত বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন মৎস্য শিকারির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রথম দিকে এই দুয়ারি চীন হতে আমদানি করা হতো বলে দামও ছিল চড়া। একেকটি দুয়ারি কিনতে প্রায় ছয়-সাত হাজার টাকা খরচ পড়ত। বর্তমানে একই আদলে আমাদের দেশের বিভিন্ন কারখানায় তৈরি হচ্ছে এই ফাঁদ। একেকটি দুয়ারির মূল্য আগের তুলনায় অর্ধেক হওয়ায় নানা শ্রেণিপেশার মানুষ এই ফাঁদ ব্যবহার করে নিধন করছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ।
এই ফাঁদের ব্যবহারের বিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা নাঈম হাসান বিপ্লব জানান, লোহার চিকন তার ও ঘন সুতা দিয়ে তৈরি এমন ফাঁদে নদী, নালা, খাল বিলের ডিমওয়ালা থেকে শুরু করে ছোট বড় সব ধরনের দেশীয় প্রজাতির মাছ ধরা পড়ায় আমাদের মৎস্য সম্পদ এখন হুমকির মুখে পড়ছে। মৎস্য সম্পদ রক্ষায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দিক নির্দেশনায় দ্রুত এই চায়না দুয়ারি বিনষ্টে আমরা অভিযানে নামব।
আঁখি