ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৬ মে ২০২৫, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

পাবনার তৈরী ঘিয়ের সুনাম দেশজুড়ে

হৃদয় হোসাইন,কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার,পাবনা

প্রকাশিত: ০০:১৩, ২৬ মে ২০২৫

পাবনার তৈরী ঘিয়ের সুনাম দেশজুড়ে

ছবিঃ সংগৃহীত

পাবনা জেলার সাঁথিয়া,বেড়া,ফরিদপুর,আটঘরিয়া উপজেলার ঘি বিখ্যাত। খাঁটি ঘি উৎপাদনে শীর্ষে পাবনা জেলা। লোকাল বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা। স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে এখন রাজধানী ঢাকা সহ সারা দেশে পাবনার তৈরি ছানা ও গাওয়া ঘিয়ের চাহিদা অনেক।

জেলার ঐতিহ্যর তালিকায় অনেক আগেই স্থান করে নিয়েছে ঘি। যুগের পর যুগ এ সুনাম ধরে রাখতে চায় উৎপাদনকারীরা। বর্তমান বাজারে এ ঘিয়ের পাইকারি মূল্য ৯০০-১০০০ হাজার টাকা। আর খুচরা মূল্য ১২০০-১৪০০ টাকা। পাবনা সহ আশপাশের খামারে উৎপাদিত গরুর দুধ থেকেই ঘি উৎপাদিত হয়।

মিল্ক ভিটা, প্রাণ, আড়ং, আকিজসহ দেশের প্রধান দুগ্ধ প্রক্রিয়াকরণ প্রতিষ্ঠানগুলো এসব এলাকা থেকে দুধ সংগ্রহ করে দেশে দুধের চাহিদার সিংহভাগ পূরণ করে থাকে। ঘি উৎপাদনে পাবনার প্রসিদ্ধ হয়ে ওঠার পেছনে দুধের সহজলভ্যতাই মূল কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এ জেলায় ঘি উৎপাদন কারখানা রয়েছে প্রায় ১০০ টি। এসকল কারখানায় বছরে কয়েক হাজার মণ ঘি উৎপাদন হয়। এ থেকে বছরে প্রায় কয়েক কোটি টাকার ঘি কেনাবেচা হয়। পাবনা জেলার অনেক স্থানেই ঘি তৈরি হলেও এর উৎপাদন হয় সাঁথিয়া,ফরিদপুর,বেড়া উপজেলায়। ফরিদপুরের গোপালনগর,ডেমড়া সাঁথিয়ার সোনাতলা,সেলন্দা, বেড়ার ডাকবাংলা, পেঁচাকোলা, হাটুরিয়া প্রভৃতি এলাকা ঘি তৈরির জন্য বিখ্যাত। এসব এলাকার কয়েকটি স্থানে ঘি উৎপাদনের ছোট-বড় অনেক কারখানা গড়ে উঠেছে। জেলার ঘি উৎপাদনের সবচেয়ে বড় কারখানা ফরিদপুর উপজেলার গোপালনগরও ডেমরা। পাবনা অঞ্চলের উৎপাদিত ঘিয়ের ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যেমন চাহিদা রয়েছে, তেমনি রয়েছে বিদেশেও।ভারত,মালয়েশিয়া,নিউইয়র্ক,সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে ঘি রপ্তানি হচ্ছে।

ননি হলো ঘি তৈরির মূল উপাদান। প্রথমে খামার থেকে দুধ সংগ্রহ করা হয়। এরপর মেশিনের মাধ্যমে ক্রিম বা ননি আলাদা করা হয়। এরপর যে দুধ থাকে তা থেকে ছানা তৈরি হয়। সে ছানা থেকে বিভিন্ন প্রকার মিষ্টি তৈরি হয়। ননি সঠিক নিয়মে জ্বাল দেওয়া হলেই তা থেকে তৈরি হয় উৎকৃষ্ট মানের ঘি। ঘি কারখানা মালিকরা জানান,পাবনায় দুধের দাম কম হওয়ায় প্রচুর ছানা তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে। এসব কারখানায় ছানা তৈরির পাশাপাশি ননিও তৈরি হয়। আবার অনেক দুগ্ধখামারি নিজেদের খামারে উৎপাদিত দুধ কোনো কারণে বিক্রি করতে না পারলে তা থেকে ননি তৈরি করেন।

এলাকার দুগ্ধ প্রক্রিয়াকরণ প্রতিষ্ঠানগুলোও দুধের উদ্বৃত্ত ননি তুলে রাখে। ফলে হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় পর্যাপ্ত ননি। সাঁথিয়া এলাকার একজন ঘি ব্যবসায়ী জানান, মূলত দুই কেজি ননি জ্বাল দিলে তা থেকে প্রায় ১ কেজি ঘি পাওয়া যায়। ভালো করে সংরক্ষণ করলে ৬ মাস থেকে ১ বছর রেখে খাওয়া যায়। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আমাদের ঘিয়ের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আমরা শতভাগ খাঁটি ঘি উৎপাদন করে সারাদেশে সরবরাহ করে থাকি। আমার গরুর খামার এবং বাইরে থেকে প্রতিদিন দুধ সংগ্রহ করে ছানা করা হয়। যা থেকে প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ মণ ঘি উৎপাদিত হয়। পাবনার ঘি দেশ-বিদেশে বিশেষ মর্যাদার আসনে রয়েছে। উৎপাদিত ঘিয়ের বেশির ভাগই চলে যায় রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য এলাকায়।

সরকারি ভাবে সহযোগিতা পেলেন আমরা আরও বেশি ঘি উৎপাদন করতে সক্ষম হব। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করে দেশের অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখা যাবে।

আলীম

×