
ছবি: সংগৃহীত
বর্তমান জীবনের ব্যস্ততা, চাপ ও মানসিক অস্থিরতার মধ্যে প্যানিক অ্যাটাক একটি খুবই সাধারণ মানসিক সমস্যা হিসেবে দেখা দেয়। প্যানিক অ্যাটাক হঠাৎ করে আসা এমন একটি আতঙ্কজনক অবস্থা, যা আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য খুবই কষ্টকর ও ভয়ঙ্কর মনে হয়। যদিও এটি একটি মানসিক সমস্যা, কিন্তু এর প্রভাব শারীরিকভাবেও খুব জোরালো।
প্যানিক অ্যাটাকের লক্ষণগুলো কী?
প্যানিক অ্যাটাকের সময় সাধারণত হঠাৎ বুকের চাপ, বুক ধড়ফড়, শ্বাসকষ্ট, গলা আটকে যাওয়ার অনুভূতি, হাত-পা ঝিমঝিম, মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব, শরীরের অতিরিক্ত তাপ বা ঠান্ডা অনুভূতি, এবং চারপাশের জিনিসগুলো অস্বাভাবিক বা অবাস্তব মনে হওয়ার মত লক্ষণ দেখা দেয়। অনেক সময় আক্রান্ত ব্যক্তি মনে করেন তার মৃত্যু ঘটছে। এই আতঙ্কজনক অনুভূতিগুলো অনেকেই হার্ট অ্যাটাকের সঙ্গে ভুল বুঝে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
প্যানিক অ্যাটাকের আসল কারণ ও প্রকৃতি
প্যানিক অ্যাটাক আসলে একটি মানসিক রোগ, যা শরীরকে অতিরিক্ত স্ট্রেস ও আতঙ্কের মধ্যে ফেলে। হার্ট অ্যাটাকের মত শারীরিক ক্ষতি না করলেও, এর ভয় ও অস্থিরতা আক্রান্ত ব্যক্তির দৈনন্দিন জীবনে বড় ধরনের বাধা সৃষ্টি করে।
কিভাবে মোকাবেলা করবেন?
১. জীবনযাত্রায় পরিবর্তন
প্যানিক অ্যাটাক নিয়ন্ত্রণে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সচেতন হওয়া অত্যন্ত জরুরি। নিয়মিত হাঁটাহাঁটি, দৌড়ানো, সাঁতার, সাইকেল চালানো বা ডান্সিং এর মতো ব্যায়াম মেজাজ ভালো রাখে ও স্ট্রেস কমায়।
২. শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম
প্যানিক অ্যাটাকের সময় সঠিক শ্বাস নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ধীরে ধীরে নাক দিয়ে শ্বাস নিন, কয়েক সেকেন্ড ধরে রাখুন, এবং মুখ দিয়ে ধীরে ধীরে ছেড়ে দিন। বক্স ব্রিদিং, অল্টারনেট নস্ট্রিল ব্রিদিং ইত্যাদি শ্বাস ব্যায়াম নিয়মিত চর্চা করুন।
৩. সুস্থ খাদ্যাভ্যাস
প্রক্রিয়াজাত খাবার, অতিরিক্ত চিনি, ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল পরিহার করুন। তাজা ফল, শাকসবজি, হোল গ্রেইন, ডাল, বাদাম, মাছ এবং দুগ্ধজাত খাবার বেশি খান।
৪. পর্যাপ্ত ঘুম
প্রতিরাতে সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমানো জরুরি। ঘুমানোর ৪০-৪৫ মিনিট আগে ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার বন্ধ করুন এবং ক্যাফেইন জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন।
৫. মানসিক চিকিৎসা (থেরাপি)
প্যানিক অ্যাটাকের চিকিৎসায় মনস্তাত্ত্বিক থেরাপি যেমন কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি (CBT) খুবই কার্যকর। থেরাপিস্টের সহায়তায় নেতিবাচক চিন্তা চিহ্নিত করে তা ইতিবাচক চিন্তায় রূপান্তর করা হয়।
৬. রিলাক্সেশন পদ্ধতি
প্রগ্রেসিভ মাসেল রিলাক্সেশন, মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশন, গাইডেড ইমেজারি ও অ্যারোমা থেরাপি প্যানিক অ্যাটাক কমাতে সাহায্য করে।
প্যানিক অ্যাটাক পুরোপুরি সেরে ওঠা কঠিন হতে পারে, কিন্তু সঠিক চিকিৎসা ও নিয়মিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ৮০-৮৫% রোগী অনেক ভালো হয়ে উঠতে পারেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আতঙ্কিত না হয়ে রোগের প্রকৃতি বোঝা এবং সঠিক পদ্ধতিতে মোকাবেলা করা।
এসএফ