
ছবি: সংগৃহীত
অনেকেই মনে করেন, লিংকডইনে ‘টপ ভয়েস’ হতে হলে জনপ্রিয় ইনফ্লুয়েন্সার বা বিরাট ফলোয়ারবেস থাকা আবশ্যক। কিন্তু যুক্তরাজ্যের হেনলি বিজনেস স্কুলের অধ্যাপক বেঞ্জামিন লেকার সেই ধারণাকে ভুল প্রমাণ করেছেন। সম্প্রতি তিনি নিজেই ‘লিংকডইন টপ ভয়েস’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন, যেখানে তার ফলোয়ার সংখ্যা মাত্র ৬ হাজারের কিছু বেশি।
লেকার বলেন, “আমি প্রতিদিন পোস্ট করি না, অ্যালগরিদমও বুঝি না। কেবল নিজের অভিজ্ঞতা আর গবেষণালব্ধ জ্ঞানটাই ভাগাভাগি করি।”
লেকার মনে করেন, প্রতিদিন পোস্ট করাই লক্ষ্য হওয়া উচিত নয়। বরং সপ্তাহে একবার হলেও যদি সঠিক কথা বলা যায়, তাতেই যথেষ্ট। তার পোস্টে থাকত নেতৃত্ব বিষয়ক শিক্ষণীয় অভিজ্ঞতা, কর্মক্ষেত্রের সংস্কৃতি নিয়ে পর্যবেক্ষণ, কিংবা বাস্তব জীবনের কোনো অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ ঘটনা।
পোস্টের ফরম্যাটে বৈচিত্র্য রাখাও গুরুত্বপূর্ণ। লেখার পাশাপাশি ছবি বা ছোট ভিডিওর মাধ্যমে পাঠকের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো যায়, বিশেষ করে যদি তা ব্যক্তিগত গল্পের সঙ্গে সংযুক্ত হয়।
লেকারের বলেন, “ব্যক্তিগত ব্র্যান্ড গড়ার চিন্তা বাদ দিন। ভাবুন আপনি কী নিয়ে কথা বলতে চান।” তিনি নিজে নেতৃত্ব, কর্মসংস্কৃতি এবং অন্তর্ভুক্তি নিয়ে লেখেন, কারণ এগুলো তার গবেষণা এবং জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে উঠে আসে।
তিনি বলেন, “আপনি প্রতিষ্ঠাতা বা শীর্ষ নির্বাহী না হলেও, যদি আপনাকে কেন্দ্র করে একটি স্বচ্ছ ও উদ্দেশ্যমূলক বার্তা থাকে—তবে সেটিই সবচেয়ে বেশি বিশ্বাসযোগ্য।”
শুধু পোস্ট করলেই হবে না। অন্যের পোস্টে মন্তব্য করা, গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তোলা, এবং যুক্তিযুক্ত প্রতিক্রিয়া জানানোও সমান গুরুত্বপূর্ণ। “আমি এমন সময়েও লিংকডইনে সক্রিয় থাকি যখন নিজে কিছু পোস্ট করছি না,” জানান লেকার। এভাবে অনলাইনে পারস্পরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং পরোক্ষভাবে নিজের প্রভাব বিস্তার ঘটে।
লেকার বলেন, তাঁর সবচেয়ে জনপ্রিয় পোস্টগুলো কখনোই পূর্বপরিকল্পিত ছিল না। বরং ব্যক্তিগত, মানবিক গল্প—যেমন নেতৃত্বে ভুল সিদ্ধান্ত, পিতৃত্বের চ্যালেঞ্জ, বা জাতিগত বৈচিত্র্য বিষয়ে অনুভব—এই গল্পগুলোই বেশি পাঠকের মন ছুঁয়ে যায়।
একবার তিনি নিজের পরিবার নিয়ে ডিজনিওয়ার্ল্ডে ভ্রমণের একটি পোস্ট দিয়েছিলেন, যেখানে আলোচনা হয়েছিল পরিচিতি ও প্রতিনিধিত্ব নিয়ে। পোস্টটি পরিকল্পিত না হলেও ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল।
“টপ ভয়েস” খেতাব পাওয়া সম্মানের হলেও, লেকার মনে করেন এটি উদ্দেশ্য হওয়া উচিত নয়। বরং যখন কেউ বলেন, “আপনার লেখাটা পড়ে আমি নতুনভাবে ভাবতে শিখেছি”—তখনই একজন লেখক বা পেশাজীবী হিসেবে প্রকৃত মূল্য পাওয়া যায়।
শুরু করবেন কীভাবে?
লেকার কিছু পরামর্শ দিয়েছেন—
- আপনার ইন্ডাস্ট্রিতে এমন কী বিষয় আছে যেটা নিয়ে সবাই চুপ?
- পাঁচ বছর আগে আপনি কী জানতে চাইতেন?
- এমন কোনো ছোট গল্প আছে যা বড় কোনো সত্য প্রকাশ করে?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়েই শুরু করা যায় প্রভাব বিস্তারের যাত্রা।
লিংকডইনে প্রভাব বিস্তারের জন্য বিশাল অনুসারী কিংবা ঝকঝকে কন্টেন্ট প্ল্যান দরকার নেই। প্রয়োজন শুধু একটি সাহসী কণ্ঠস্বর। যারা নিয়মিত ও অর্থবহভাবে অনলাইন উপস্থিতি বজায় রাখতে পারে, তারাই একদিন “টপ ভয়েস” হয়ে উঠবে—ব্যাজ না থাকলেও।
মুমু