ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৫ মে ২০২৫, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় এক চিকিৎসকের দশ সন্তানের মধ্যে নয়জনের মৃত্যু

প্রকাশিত: ১১:২৫, ২৫ মে ২০২৫; আপডেট: ১১:২৬, ২৫ মে ২০২৫

গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় এক চিকিৎসকের দশ সন্তানের মধ্যে নয়জনের মৃত্যু

ছবি: সংগৃহীত

গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত ৭৯ জনের মরদেহ গাজার বিভিন্ন হাসপাতালে আনা হয়েছে বলে শনিবার জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তবে এই সংখ্যা উত্তর গাজার অন্তর্ভুক্ত নয়, যেখানে হাসপাতালগুলো এখন এতটাই বিধ্বস্ত যে সেগুলোতে পৌঁছানো সম্ভব নয়।

নিহতদের মধ্যে ছিলেন চিকিৎসক আলা নাজ্জারের দশ সন্তানের মধ্যে নয়জন। নাসের হাসপাতালের শিশু বিভাগের চিকিৎসক নাজ্জার হামলার সময় কর্তব্যরত ছিলেন। হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান আহমদ আল-ফাররার মতে, হামলার খবর পেয়ে তিনি বাড়ি ছুটে যান এবং দেখতে পান তাদের ঘরে আগুন লেগেছে। এই হামলায় নাজ্জারের স্বামী গুরুতর আহত হন এবং তাদের একমাত্র বেঁচে থাকা সন্তান, ১১ বছর বয়সী ছেলে, মারাত্মকভাবে আহত অবস্থায় রয়েছেন।

নিহত শিশুগুলোর বয়স ছিল ৭ মাস থেকে ১২ বছরের মধ্যে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র খালিল আল-দোকরান জানিয়েছেন, এখনো দুটি শিশুর মরদেহ ধ্বংসস্তূপের নিচে রয়ে গেছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানায়, তারা সেনাদের পাশে থাকা একটি কাঠামো থেকে হামলাকারীদের লক্ষ্য করে আঘাত হানে এবং খান ইউনিস এলাকাকে "বিপজ্জনক যুদ্ধক্ষেত্র" হিসেবে বর্ণনা করে। সেনাবাহিনীর দাবি, তারা আগেই ওই এলাকা থেকে বেসামরিকদের সরিয়ে নিয়েছিল এবং নিরপরাধ নাগরিক হতাহতের অভিযোগ তদন্তাধীন।

ইসরায়েল জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজায় ১০০-রও বেশি লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালানো হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বে ইসরায়েলে হামলার পর শুরু হওয়া যুদ্ধে এ পর্যন্ত ৫৩,৯০১ জন প্রাণ হারিয়েছেন। ১৮ মার্চ থেকে যুদ্ধ আবার শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত ৩,৭৪৭ জন নিহত হয়েছেন। তবে এই সংখ্যা বেসামরিক ও যোদ্ধাদের আলাদা করে দেখায় না।

ইসরায়েলের আরোপিত কঠোর অবরোধে গাজার মানবিক পরিস্থিতি চরমে পৌঁছেছে। মার্চের শুরু থেকে অবরোধের মধ্যে এই সপ্তাহে প্রথমবারের মতো কিছু ত্রাণ ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে। সোমবার থেকে ৩৮৮টি ট্রাক প্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা সংস্থা কোগাট। যুদ্ধবিরতির সময় প্রতিদিন প্রায় ৬০০টি ট্রাক প্রবেশ করত।

খাদ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের দুর্ভিক্ষ সতর্কতা এবং দাতব্য রান্নাঘরের সামনে খাদ্যের জন্য হাহাকাররত মানুষের দৃশ্য ইসরায়েলের মিত্রদের চাপ সৃষ্টি করে ত্রাণ চালু করার জন্য। তবে ইসরায়েল একটি নতুন, যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত ত্রাণ বিতরণ ব্যবস্থার প্রস্তাব দিলে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন সহায়তা সংস্থা তা প্রত্যাখ্যান করে, কারণ এতে খাদ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি হয় এবং মানবিক নীতিমালা লঙ্ঘিত হয়।

এদিকে, গাজার হাসপাতালগুলো ফের ইসরায়েলি হামলার মুখে পড়ছে। দক্ষিণ গাজার ইউরোপিয়ান হাসপাতালে ১১ জন নিরাপত্তাকর্মী আটকা পড়েছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। হাসপাতালের নার্সিং বিভাগের পরিচালক ড. সালেহ হামস জানান, ১৩ মে ইসরায়েলি হামলার পর রোগীদের সরিয়ে নেওয়া হয়। তবে নিরাপত্তাকর্মীরা লুটপাট ঠেকাতে থেকে যান। এটিই ছিল গাজার একমাত্র হাসপাতাল যেখানে নিউরোসার্জারি, হৃদরোগ ও ক্যান্সারের চিকিৎসা দেওয়া হতো।

ইসরায়েল জানিয়েছে, যতক্ষণ না হামাস ৫৮ জন জীবিত বা মৃত ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিচ্ছে এবং নিজেদের নিরস্ত্র করছে, ততক্ষণ তারা গাজায় অভিযান চালিয়ে যাবে। ধারণা করা হয়, জিম্মিদের অর্ধেকেরও কম এখনো জীবিত আছেন। হামাস বলছে, তারা কেবল বন্দি বিনিময়, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের বিনিময়েই জিম্মিদের ফিরিয়ে দেবে। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এসব শর্ত প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং গাজায় ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার পাশাপাশি "স্বেচ্ছামূলক অভিবাসন" নামের মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের দেশত্যাগে উৎসাহ দেওয়ার কথা বলেছেন।

তেল আবিবে জিম্মি পরিবারের প্রতিবাদ সমাবেশে গালি ও জিভ বারম্যানের ভাই লিরান বারম্যান বলেন, "ইসরায়েলি সরকার ও তাদের নেতার সামনে এখন দুটি পথ—চুক্তি বা যুদ্ধ, জীবন বাঁচানো বা ছেড়ে দেওয়া।"


সূত্র: https://apnews.com/article/gaza-israel-palestinians-war-news-8c3fe634bd81986249a235ad53a9044c

এএইচএ

×