ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

এক জমি তিনবার বিক্রি!তিনজনের হাতেই রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত দলিল!আসল মালিক কে?

প্রকাশিত: ১২:০৭, ২৪ মে ২০২৫; আপডেট: ১২:০৮, ২৪ মে ২০২৫

এক জমি তিনবার বিক্রি!তিনজনের হাতেই রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত দলিল!আসল মালিক কে?

জমি কিনে নিশ্চিন্তে বসবাসের স্বপ্ন অনেকেই দেখেন। দলিল হাতে, নামজারি সম্পন্নসব কিছুই যেন ঠিকঠাক। কিন্তু বাস্তবে গিয়ে দেখা গেল, সেই জমিতে দখল করছেন আরেকজন। এমনকি কখনও কখনও আরও কেউ দাবি করছেন একই জমির মালিকানা।অবাক করা বিষয় হলো তিনজনের হাতেই আছে রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত দলিল!

এই ভয়াবহ প্রতারণা এখন আর গল্প নয়, বাস্তবেই ঘটছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। জমির ওপর মালিকানা নিয়ে চলছে একাধিক মামলা, সামাজিক উত্তেজনা, এমনকি প্রাণঘাতী সংঘর্ষ।

এক জমি, একাধিক দলিল,কীভাবে সম্ভব?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের প্রতারণার পেছনে কাজ করে একটি সুপরিকল্পিত চক্র। তারা ভুয়া দলিল তৈরি করে, জাল খতিয়ান বানায়, এমনকি ভূয়া স্বাক্ষরকারী তৈরি করেও জমি বিক্রি করে দেয় বারবার। এই চক্র মূলত পুরনো রেকর্ড, পরিত্যক্ত জমি অথবা বিচারাধীন সম্পত্তিকে টার্গেট করে।

ঢাকার অদূরে সাভারের এক ঘটনায় দেখা গেছে, একজন প্রবাসী জমি কিনে দেশে ফিরে ঘর বানাতে গেলে জানতে পারেন, তার জমি ইতোমধ্যেই অন্য দুই ব্যক্তির নামে রেজিস্ট্রি হয়ে গেছে। পরবর্তীতে তদন্তে উঠে আসে, স্থানীয় এক ভূমি দালাল চক্র এই জমি তিনবার বিক্রি করেছে ভিন্ন ভিন্ন দামে।

ভুয়া দলিল চেনার উপায় কী?
জালিয়াতরা সাধারণত পুরাতন কাগজে লেখা, অদ্ভুত বানান, অপ্রচলিত স্ট্যাম্প, অস্বাভাবিক তারিখ এবং অসামঞ্জস্যপূর্ণ রেজিস্ট্রেশন নম্বর ব্যবহার করে। কেউ কেউ সরকারি অফিসে কর্মরত অসাধু কর্মচারীর সহায়তাও নেয়।

এই ধরনের প্রতারণা থেকে কীভাবে বাঁচবেন?

দলিল হাতে পাওয়ার পর শুধুমাত্র কাগজ দেখে নিশ্চিন্ত হবেন না

সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে দলিল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন তারিখ ও স্ট্যাম্প যাচাই করুন

খতিয়ান ও দাগ নম্বর অনলাইন পোর্টাল (e-porcha.gov.bd, land.gov.bd) থেকে মিলিয়ে নিন

প্রয়োজনে স্থানীয় ভূমি অফিসে সরেজমিন অনুসন্ধান করুন

একজন অভিজ্ঞ আইনজীবী দিয়ে দলিল ও মালিকানা যাচাই করিয়ে নিন

জমি কেনার আগে সতর্ক না হলে কী হতে পারে?
আইন অনুযায়ী, এক জমি একাধিকবার বিক্রির ঘটনায় সবাই বৈধ মালিক হিসেবে দাবি তুললে আইনি লড়াই ছাড়া আর কোনো পথ খোলা থাকে না। এই লড়াই হয় দীর্ঘ, ব্যয়বহুল এবং মানসিকভাবে ক্লান্তিকর। এমনকি দলিল থাকা সত্ত্বেও আপনি জমির দখল পেতে ব্যর্থ হতে পারেন।

সরকারি নজরদারি ও ডিজিটাল রেকর্ডিংই হতে পারে সমাধান
ভূমি মন্ত্রণালয় সম্প্রতি ই-নামজারি, ই-খতিয়ান এবং অনলাইন দলিল যাচাইয়ের ব্যবস্থা চালু করেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আরও আধুনিক ও স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির সমন্বয় না ঘটালে জালিয়াতি সম্পূর্ণরূপে ঠেকানো সম্ভব নয়।


জমি কেনা জীবনের অন্যতম বড় বিনিয়োগ। কেবল দলিল হাতে পেলেই মালিক হয়ে যাওয়া যায় না। জমির কাগজপত্র, দখল, মালিকানা ও রেকর্ডসবই শতভাগ নিশ্চিত করে তবেই নেওয়া উচিত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। এক জমি তিনবার বিক্রির এই অন্ধকার ফাঁদ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে সতর্কতা ও সচেতনতাই হতে পারে একমাত্র ভরসা।

 

 

 

সূত্র:https://tinyurl.com/4krhdps3

আফরোজা

×