
ছবি: জনকন্ঠ
একসময় জুয়া বললেই তাস খেলার কথা চিন্তা করা হতো। সবাই জুয়ে খেলাকে ঘৃণার চোখে দেখতো। পুলিশের ভয়ে জুয়াড়িরা লুকিয়ে লুকিয়ে খেলতো। কিন্তু বর্তমান সময়ে এই জুয়া ডিজিটাল মাধ্যমে নতুন রূপ পেয়েছে। এর ফলে ঘরে বসেই মানুষ অনলাইনে বিভিন্ন জুয়ার অ্যাপ বা ওয়েবসাইটে একাউন্ট খুলতে পারছেন। এসব অনলাইন জুয়ায় আসক্ত বেশির ভাগই স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ তরুণ প্রজন্ম। যা দেশের জন্য একটি অশনিসংকেত।
সারাদেশসহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন উপজেলার প্রান্তিক পর্যায়ের গ্রামগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে অনলাইন জুয়া। পাড়া মহল্লার অলিতে গলিতে, গ্রামের চায়ের দোকানে, হাটে মাঠে চলার পথে ধরছে বাজি। বাজি ধরাই এদের প্রধান কাজ।
আইপিএল ক্রিকেট ও ফুটবলের ইউরোপিয়ান লীগসহ জনপ্রিয় খেলার সময় বাজির সাইটগুলো বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রলুব্ধ করে। দেশি চক্রগুলো এতে হোস্ট অ্যাকাউন্ট করে লাইভ স্ট্রিমের নামে তরুণ তরুণীদের দিয়ে ফাঁদ পাতে। এর পর ডিজিটাল কৌশলে হাতিয়ে নেয় টাকা। দেশের বাইরে থাকা মূল হোতাদের সঙ্গে দেশীয় এজেন্টরা মিলে এ অপরাধমূলক কাজ করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজয়নগরের এক ব্যক্তি জানান, তার একটি মুদিমালের দোকান ছিলো। অধিক অর্থের লোভে পড়ে তার দোকানে আসা লোকদের সাথে মোবাইলের মাধ্যেমে জুয়া খেলতেন। ২দিন লাভ হলে ৩দিন লোকসান হয়। আবার সেই লোকসান উঠাতে গিয়ে আরো লোকসান হতো। যতই দিন যায় খেলার নেশা বেড়ে যায়। এক সময় দোকান বিক্রি করে দেন। দোকানের টাকা শেষ হয়ে গেলে স্ত্রীর স্বর্ণ গয়না বিক্রি করে দেন। সব টাকা শেষ গেলে বন্ধু বান্ধব ও আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে হাওলাত ও সুদের উপর ঋণ নিয়ে জুয়া খেলতে থাকে। সবকিছু শেষ হয়ে গেলে তিনি নিজের স্ত্রীকে প্রবাসে পাঠায়। এখন তার ৮ লাখ টাকা ঋণ। তারপরও হারানো টাকা ফিরে পাওয়ার আশায় তিনি ছাড়তে পারেননি এই ভয়ানক জুয়ার নেশা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক ব্যাক্তি জানান, অল্প সময়ে কোটিপতি হওয়ার নেশায় তিনি জুয়ায় আসক্ত হন। তিনি ভালো বেতনে চাকরি করতেন। গ্রামের বন্ধুদের সাথে চলতে গিয়ে নষ্ট হয় জীবন। ছাড়তে হয় পরিবার। লক্ষ লক্ষ টাকার জুয়া খেলে সর্বশেষ তিনি এক লাখ টাকা সুদের হারে ঋণ নিয়ে জুয়া খেলে হেরে যান। পরে জমি বিক্রি করে সুদের ঋণ শোধ করেন। এরপর মা বাবা তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। জমি ও পরিবার হারিয়ে স্বর্বশান্ত হয় এই যুবক।
ইন্টারনেটকে নাগরিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি, অনলাইন জুয়া নিষিদ্ধ এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) মাধ্যমে সাইবার অপরাধকে শাস্তিযোগ্য অপরাধের বিধান রেখে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। তবে বাস্তবে এর কোনো প্রভাব পড়ছে না। বন্ধ হচ্ছে না অনলাইন জুয়ার ফাঁদ।
সচেতন ব্যক্তিরা বলছেন গ্রামাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে ভয়াবহ অনলাইন জুয়ার থাবা। ছেলে মেয়ে মোবাইলের মাধ্যমে টাকা নষ্ট করছে। বাজিতে হেরে দিশা না পেয়ে অনেকে চুরি-ছিন্তাইসহ জড়িয়ে যাচ্ছে নানা অপরাধে। কেউ আবার মাদকাসক্ত হয়ে যাচ্ছে। এখনই কঠোর পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যত প্রজন্ম শেষ হয়ে যাবে।
সূত্র জানায়, ভিপিএনসহ কিছু অনুমোদনহীন গেটওয়ের মাধ্যমে বন্ধ হওয়া সাইট বা নতুন সাইট ব্রাউজ করে জুয়া খেলা হয়। সাইটগুলোর ডোমেইন দেশের বাইরে এবং নির্ধারিত সময় পর পর সাইটের আইপি ঠিকানা পরিবর্তন করে নিয়ন্ত্রণকারীরা। বিট কয়েনে লোকসানের কোনো রেকর্ড থাকে না। ফলে কালো টাকার মালিকরা পাচার করছে টাকা।
মুমু