
ছবিঃ সংগৃহীত
কান চলচ্চিত্র উৎসবে সর্বোচ্চ পুরস্কার জয় করার পর ইরানি পরিচালক জাফর পানাহি নিজ দেশে সরকারের দমনমূলক নীতির বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। দীর্ঘদিন কারাবন্দি ও চলচ্চিত্র নির্মাণে নিষিদ্ধ থাকা এই বর্ষীয়ান পরিচালক পেয়েছেন সম্মানজনক Palme d'Or পুরস্কার তার নতুন চলচ্চিত্র "ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যান অ্যাক্সিডেন্ট"-এর জন্য।
বিবিসি কালচার এই চলচ্চিত্রকে বর্ণনা করেছে "একটি রাগী অথচ হাস্যরসাত্মক প্রতিশোধের থ্রিলার যা দমনমূলক শাসনের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ" হিসেবে।
পুরস্কার গ্রহণকালে কান উৎসবে উচ্ছ্বাসপূর্ণ করতালির মধ্যে পানাহি বলেন, “আমাদের দেশ ও আমাদের দেশের স্বাধীনতাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আসুন, আমরা আমাদের ভিন্নমত ও সমস্যাগুলো একপাশে সরিয়ে একত্র হই। কেউ আমাদের বলার অধিকার রাখে না—আমরা কী পরব, কী করব, বা কী করব না।”
"ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যান অ্যাক্সিডেন্ট" গোপনে নির্মিত হয়েছে এবং এর গল্প আংশিকভাবে পানাহির কারাবন্দি জীবনের ওপর ভিত্তি করে। চলচ্চিত্রটি পাঁচজন সাধারণ ইরানির গল্প বলে, যারা একদিন এমন একজন ব্যক্তির মুখোমুখি হয়, যাকে তারা বিশ্বাস করে তাদেরকে নির্যাতন করেছিল।
তিনি বলেন, “জেলে যাওয়ার আগে আমি এক ধরনের বিষয় নিয়ে চলচ্চিত্র করতাম। কিন্তু সেখানে যেসব মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে, তাদের গল্প, তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড—এসব আমার দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছে।”
২০২৩ সালে কারামুক্ত হন পানাহি, যেখানে তিনি সাত মাস কাটান ছয় বছরের কারাদণ্ডের মধ্যে। তার অপরাধ ছিল সরকারবিরোধী বিক্ষোভে সমর্থন এবং “শাসনের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা” তৈরির অভিযোগ। ২০১০ সাল থেকেই তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণ ও বিদেশ ভ্রমণে নিষিদ্ধ ছিলেন। কান উৎসবের এ সফর ছিল তার ১৫ বছরের মধ্যে প্রথম আন্তর্জাতিক উপস্থিতি।
পুরস্কারটি প্রদান করেন ফরাসি অভিনেত্রী ও চলতি বছরের জুরি প্রেসিডেন্ট জুলিয়েট বিনোশ এবং অস্ট্রেলিয়ান অভিনেত্রী কেট ব্ল্যাঞ্চেট। পুরস্কার ঘোষণার সময় বিনোশ বলেন, “চলচ্চিত্র এবং শিল্প উস্কানিমূলক এবং এটি অন্ধকারকে ক্ষমা, আশা এবং নতুন জীবনে রূপান্তরিত করার শক্তি রাখে।” ব্ল্যাঞ্চেট বলেন, “চলচ্চিত্র সমাজে বৃহত্তর সংলাপের সুযোগ তৈরি করে।”
যদিও চারটি আগের Palme d'Or বিজয়ী ছবিই শেষ পাঁচ বছরে অস্কারে মনোনীত হয়েছে, তবে পানাহির চলচ্চিত্র অস্কারের সেরা আন্তর্জাতিক ফিচার ফিল্ম বিভাগে স্থান পাবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ, এই বিভাগে মনোনয়নের জন্য চলচ্চিত্রটির নিজ দেশে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়া বাধ্যতামূলক, আর ইরানে পানাহির ছবি নিষিদ্ধ।
৬৪ বছর বয়সী পানাহি কান, বার্লিন এবং ভেনিস—এই তিন প্রধান উৎসবেই শীর্ষ পুরস্কার জয় করে বিরল কৃতিত্ব অর্জন করেছেন। তবু তিনি উৎসব শেষে ইরানে ফিরে যাবেন বলে জানিয়েছেন, “এখানে আমার কাজ শেষ হলে আমি ইরানে ফিরে যাব। তারপর নিজেকে প্রশ্ন করব—আমার পরবর্তী ছবি কী হবে?”
সূত্রঃ বিবিসি
নোভা