ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৫ মে ২০২৫, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

দিনে ১৫ বার খান টম ক্রুজ, তবুও শরীর অ্যাথলেটদের মতো! রহস্য কী?

প্রকাশিত: ০৯:১৮, ২৫ মে ২০২৫

দিনে ১৫ বার খান টম ক্রুজ, তবুও শরীর অ্যাথলেটদের মতো! রহস্য কী?

ছবি: সংগৃহীত

মিশন: ইম্পসিবল – দ্য ফাইনাল রেকনিং ছবিটি, যেটি এই জনপ্রিয় ফ্র্যাঞ্চাইজির অষ্টম ও শেষ পর্ব, এ বছর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেতে চলেছে। এই সিনেমার প্রচারে কানের চলচ্চিত্র উৎসবে হাজির হয়েছেন হলিউড হার্টথ্রব টম ক্রুজ। ৬২ বছর বয়সেও যিনি দারুণ ফিট ও আকর্ষণীয়, চলুন জেনে নিই তার শরীরচর্চা ও ডায়েটের কিছু গোপন রহস্য।

Men’s Health Magazine-এর তথ্য অনুযায়ী, টম ক্রুজ দিনে সর্বোচ্চ ১২০০ ক্যালোরির খাবার গ্রহণ করেন। তিনি সাধারণত তেল, মাখন বা সস ছাড়া স্টিম করা সাদা মাছ ও সবজি খেতে পছন্দ করেন। তিন বেলার খাবারের বদলে তিনি দিনে ১৫টি হালকা স্ন্যাকস খান, যাতে তার ব্যস্ত জীবনে খাদ্য গ্রহণ সহজ হয়। বাইরে খাওয়ার সময় তিনি সবসময় অ্যালকোহল মুক্ত পানীয় বেছে নেন।

ক্রুজ চিপস বা চকলেটের পরিবর্তে ফল খেতে পছন্দ করেন, যা তার ‘উদ্বেগ কমাতে’ সাহায্য করে। তার ডায়েটে নেই উচ্চ-চিনি যুক্ত খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবার বা কার্বোহাইড্রেট। তার ব্যক্তিগত শেফ তার জন্য কম তাপে রান্না করা খাবার প্রস্তুত করেন।

অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপকারিতা সম্পন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফল ও সবজিভিত্তিক এই ডায়েটে আছে স্যামন মাছ, ডার্ক চকলেট, কাঁচা ওটস, ব্লুবেরি, আদা, বিটরুট, ব্রকোলি, টমেটো, পালং শাক, অলিভ অয়েল, বাদাম এবং ভিটামিন ও মিনারেল সাপ্লিমেন্ট।

শ্রী রামচন্দ্র ইনস্টিটিউট অব হায়ার এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ-এর ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট এবং প্রভাষক সি ভি ঐশ্বর্যা বলেন, “এ ধরনের অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ডায়েটে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, স্বাস্থ্যকর চর্বি ও ফাইবার সমৃদ্ধ সম্পূর্ণ ও পুষ্টিকর খাবার গুরুত্ব পায়। এটি দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ এবং সংশ্লিষ্ট রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের কোষগুলোকে ফ্রি র‍্যাডিকেল থেকে রক্ষা করে, যা অক্সিডেটিভ স্ট্রেস তৈরি করে এবং নানা রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।”

তিনি আরও জানান, খাবার কম তাপে রান্না করলে এর পুষ্টিগুণ বজায় থাকে, যা স্বাস্থ্যের জন্য সহায়ক। একইসঙ্গে খাবারের স্বাদ ও আর্দ্রতাও ভালো থাকে।

তবে কার্বোহাইড্রেট পুরোপুরি বাদ দেওয়া কি ভালো সিদ্ধান্ত?

পুষ্টিবিদ ও সিনিয়র মাস্টার ফিটনেস ট্রেইনার মিতুশি আজমেরা জানান, কার্বোহাইড্রেট পুরোপুরি বাদ দিলে শরীরে বেশ কিছু শারীরবৃত্তীয় ও বিপাকীয় পরিবর্তন দেখা দিতে পারে।

গ্লাইকোজেন নিঃশেষ: প্রথমে শরীর পেশি ও লিভারে জমা থাকা গ্লাইকোজেন ব্যবহার করে। প্রতি ১ গ্রাম গ্লুকোজের সঙ্গে শরীর ৩ গ্রাম পানি ধরে রাখে, ফলে শরীর থেকে পানির ওজন কমে যায় ১-৩ কেজি পর্যন্ত।

কিটোসিস শুরু: গ্লাইকোজেন ফুরিয়ে গেলে শরীর বিকল্প শক্তি হিসেবে কিটোন উৎপন্ন করতে শুরু করে, তখন শরীর চর্বি পোড়াতে শুরু করে।

শক্তি ও মেজাজে পরিবর্তন: এই সময়ে মাথাব্যথা, ক্লান্তি, মাথা ঘোরা, পেশিতে টান ধরা, ঘুমের সমস্যা ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। কারণ ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায় এবং শরীর মানিয়ে নিতে সময় নেয়।

ক্ষুধা দমন: কিটোন ক্ষুধা কমায়, তাই কিছু মানুষ কয়েকদিন পর স্বাভাবিকভাবেই কম খেতে শুরু করেন।

ইনসুলিন ও রক্তে চিনি নিয়ন্ত্রণ: কার্বোহাইড্রেট না থাকলে রক্তে চিনির পরিমাণ স্থিতিশীল থাকে, ইনসুলিন কমে যায়। যাদের ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বা টাইপ ২ ডায়াবেটিস আছে, তাদের জন্য এটি উপকারী হতে পারে।

পরিপাকতন্ত্রে পরিবর্তন: কার্বহীন ডায়েটে ফাইবারের অভাবে কোষ্ঠকাঠিন্য এবং অন্ত্রের জীবাণু পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে।

তিনি বলেন, “অনেক কার্ব-সমৃদ্ধ খাবার যেমন ফলমূল ও শস্য ফাইবার, ভিটামিন ও মিনারেলের ভালো উৎস। সম্পূর্ণ কার্বহীন ডায়েট দীর্ঘমেয়াদে কোষ্ঠকাঠিন্য, ইলেকট্রোলাইটের ঘাটতি এবং অন্ত্রের সমস্যার কারণ হতে পারে।” ওজন কমানো বা রক্তে চিনি নিয়ন্ত্রণে কম-কার্ব ডায়েট সহায়ক হতে পারে, তবে একেবারে কার্ব ছেড়ে দেওয়া প্রয়োজন বা টেকসই নয়। তিনি আরও বলেন, “সাধারণত ফাইবার সমৃদ্ধ জটিল কার্বোহাইড্রেটসহ একটি ভারসাম্যপূর্ণ ডায়েটই দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যকর।”

বি.দ্র.: এই প্রতিবেদনটি বিভিন্ন উন্মুক্ত সূত্র এবং বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে তৈরি। কোনো নতুন খাদ্যাভ্যাস শুরু করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

এএইচএ

×