ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৫ মে ২০২৫, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

মস্তিষ্কে ঘোলাটে ভাব? স্মৃতি বাড়াতে এলো AI-এর ‘ব্রেইন ট্রেইনার’!

প্রকাশিত: ০৭:৪৬, ২৫ মে ২০২৫

মস্তিষ্কে ঘোলাটে ভাব? স্মৃতি বাড়াতে এলো AI-এর ‘ব্রেইন ট্রেইনার’!

মানব মস্তিষ্ক এক আশ্চর্য উপাদান। প্রতিটি অভ্যাস, প্রতিটি শেখা দক্ষতা বদলে দেয় এর স্নায়বিক পথ। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় ‘নিউরোপ্লাস্টিসিটি’। এর মাধ্যমে গড়ে ওঠে আরও দৃঢ় সংযোগ, বাড়ে দক্ষতা, স্মৃতিশক্তি, মনঃসংযোগ এবং সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা। এখন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এবং পরিধেয় প্রযুক্তির (wearables) সাহায্যে এই প্রক্রিয়াকে আরও কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে। স্মৃতিশক্তি বাড়াতে এবং মানসিক সক্ষমতা উন্নত করতে তৈরি হচ্ছে নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত।

অনেক দিন ধরেই প্রচলিত ‘ব্রেইন ট্রেইনিং’ অ্যাপগুলো শুধুমাত্র বারবার অনুশীলনের ওপর নির্ভর করে আসছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা শুধু মানসিক ব্যায়ামের ওপর নির্ভর করে না। ঘুম, খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক অনুশীলন এবং স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণও এতে বড় ভূমিকা রাখে। ফলে পরবর্তী প্রজন্মের ‘ব্রেইন ফিটনেস’ প্ল্যাটফর্মগুলো এখন নিউরোসায়েন্স, এআই এবং বায়োমেট্রিক ট্র্যাকিংকে একত্র করে আরও সমন্বিত পদ্ধতি গড়ে তুলছে।

মস্তিষ্ক উন্নয়নের ভবিষ্যৎ
এই পরিবর্তনের কেন্দ্রে রয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। ব্রেইন ফিটনেস প্ল্যাটফর্ম BRAIN.ONE এআই এবং পরিধেয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্যবহারকারীর জন্য তৈরি করছে একেবারে ব্যক্তিকেন্দ্রিক কগনিটিভ উন্নয়ন কৌশল। এটি শুধুই মেমোরি গেম কিংবা ধাঁধার বাইরে গিয়ে ব্যবহারকারীর ওয়্যারেবল ডিভাইস, রক্ত বিশ্লেষণ এবং ব্যক্তিগত মূল্যায়নের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে। এরপর তৈরি করে সহজে দৈনন্দিন জীবনে মিশে যাওয়া ছোট ছোট ‘মাইক্রোহ্যাবিট’ভিত্তিক স্বাস্থ্য রুটিন। এই রুটিনগুলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিমার্জিত হয় ব্যবহারকারীর বায়োমেট্রিক ফিডব্যাকের ওপর ভিত্তি করে।

BRAIN.ONE-এর সিইও থরিন স্টিফেনস বলেন, “কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং স্বাস্থ্য প্রোটোকলের সংযোগ মস্তিষ্কের উন্নয়নকে আরও নমনীয়, ব্যক্তিকেন্দ্রিক এবং তথ্যনির্ভর করে তুলেছে। ঘুম, স্ট্রেস এবং পুষ্টির মতো জীবনধারাভিত্তিক উপাদানগুলোকে যুক্ত করে এআই এখন নির্ভুল ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মস্তিষ্ককে সর্বোচ্চ কার্যক্ষমতায় পৌঁছাতে সাহায্য করছে।”

ব্যক্তিকেন্দ্রিক প্রশিক্ষণ, বাস্তব সময়ের বিশ্লেষণ
ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে এআই এখন এমন প্রশিক্ষণ কর্মসূচি তৈরি করছে যা একজন ব্যক্তির শক্তি ও দুর্বলতার উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। ফলে আর নির্দিষ্ট বা স্থির কোনও পদ্ধতির ওপর নির্ভর করতে হয় না। বরং, এআই প্রতিনিয়ত তথ্য বিশ্লেষণ করে তাৎক্ষণিকভাবে সুপারিশগুলো সংশোধন করছে।

এতে করে পরিধেয় ডিভাইসের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর হার্ট রেট ভ্যারিয়েবিলিটি, ঘুমের গুণমান, স্ট্রেসের মাত্রা ইত্যাদি যাচাই করে বোঝা যাচ্ছে এগুলো মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতার ওপর কীভাবে প্রভাব ফেলছে। একে বলা যায় একটি সামগ্রিক ও সুসমন্বিত মস্তিষ্ক-স্বাস্থ্য পদ্ধতি।

মাইক্রোহ্যাবিটে দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়ন
নিউরোসায়েন্টিফিক গবেষণা বলছে, ছোট ছোট অভ্যাসই দীর্ঘমেয়াদি কগনিটিভ উন্নয়নের চাবিকাঠি। তাই এআই-ভিত্তিক প্ল্যাটফর্মগুলো এখন ব্যবহারকারীদের দৈনন্দিন জীবনে সহজে গ্রহণযোগ্য এই অভ্যাসগুলোকে স্থান দিতে উৎসাহিত করছে। একটানা মস্তিষ্ক ব্যায়ামের তুলনায় এসব মাইক্রোহ্যাবিট ধরে রাখা সহজ এবং কার্যকর।

এই প্ল্যাটফর্মগুলো শুধু ব্যক্তিগত উন্নয়নেই সীমাবদ্ধ নয়। এখানে ব্যবহারকারীরা নিজের অভ্যাস ও পদ্ধতি অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারেন। এমনকি একে একটি ‘ব্রেইন হেলথ মার্কেটপ্লেস’ হিসেবেও গড়ে তোলা হচ্ছে, যেখানে কোচ, গবেষক ও সাধারণ ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতা ও কৌশল পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে।

বিজ্ঞানসম্মত ও প্রমাণভিত্তিক ট্রেইনিং
মস্তিষ্ক প্রশিক্ষণের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো বিজ্ঞানের ভিত্তিতে সত্যিকারের কার্যকর পদ্ধতি আলাদা করা। অনেক অ্যাপ এখনো গবেষণাভিত্তিক নয়। এই সমস্যার সমাধানে এগিয়ে এসেছে কিছু শীর্ষস্থানীয় প্ল্যাটফর্ম, যারা রিয়েল-টাইমে বৈজ্ঞানিক গবেষণা বিশ্লেষণ করার জন্য এআই-চালিত রিসার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করছে।

থরিন স্টিফেনস বলছেন, “যখন আমরা ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যতথ্য বিশ্লেষণ করে প্রমাণভিত্তিক প্রোটোকল তৈরি করি, তখন তা আর কেবল একটি নির্দিষ্ট অনুশীলনে সীমাবদ্ধ থাকে না। বরং এটি হয়ে ওঠে এক জীবন্ত ও গতিশীল পদ্ধতি, যা নিউরোসায়েন্স, বায়োমেট্রিক ফিডব্যাক এবং সমষ্টিগত বুদ্ধিমত্তাকে একত্র করে।”

ব্রেইন ফিটনেসে নতুন যুগের সূচনা
এআই, নিউরোসায়েন্স এবং পরিধেয় প্রযুক্তির মেলবন্ধনে এখন বাস্তব সময়ে মস্তিষ্ক অনুকূলকরণ সম্ভব হচ্ছে। কিছু প্ল্যাটফর্ম ইতোমধ্যেই ব্যবহার করছে নিউরোফিডব্যাক, ব্রেইনওয়েভ মনিটরিং এবং নন-ইনভেসিভ স্টিমুলেশন। এর ফলে মনোযোগ, সৃজনশীলতা এবং মানসিক সহনশীলতা বাড়ানোর সম্ভাবনাও উন্মুক্ত হচ্ছে।

এআই-নির্ভর বায়োমেট্রিক ফিডব্যাক লুপ প্রতিনিয়ত প্রশিক্ষণ পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনছে, ফলে ব্যবহারকারীর মস্তিষ্ক প্রশিক্ষণ আর কখনোই স্থির থাকে না। এটি এখন একটি ক্রমবিকাশমান, ব্যক্তিকেন্দ্রিক ও অভিযোজিত পদ্ধতি।

এই প্রযুক্তিগত অগ্রগতি মস্তিষ্ক প্রশিক্ষণের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করছে। পেশাজীবী, শিক্ষার্থী বা যে কেউ মানসিক দক্ষতা বাড়াতে চাইছেন, তাদের জন্য ভবিষ্যতের ‘ব্রেইন ট্রেইনার’ হয়ে উঠতে পারে এক অপরিহার্য সহায়ক। মানুষ কীভাবে চিন্তা করে, শেখে এবং সমস্যার সমাধান করে সেই ধারণাটাকেই নতুন করে সংজ্ঞায়িত করছে এই যুগান্তকারী প্রযুক্তি।

 

 

 

সূত্র:https://tinyurl.com/3729byun

আফরোজা

×