
ছবিঃ সংগৃহীত
কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে দেশের নানা প্রান্তে জমে উঠেছে রঙিন ও বর্ণিল পশুর হাট। প্রতিটি হাটেই দেখা মিলছে নানা আকৃতির গরু, মহিষ ও ছাগলের, তবে কিছু ব্যতিক্রমী ও নজরকাড়া গরু যেন দর্শনার্থীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। ঠিক তেমনি এক বিস্ময় সৃষ্টি করেছে কিশোরগঞ্জের ‘বাদশা’ নামের একটি বিশালাকৃতির ষাঁড়।
প্রায় ১,৪০০ কেজি ওজনের এই বিশাল ষাঁড়টি লালন-পালন করা হয়েছে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বয়লা এলাকার সানজিদ এগ্রো ফার্মে। বিশাল আকৃতির পাশাপাশি বাদশার সৌন্দর্য, শান্ত স্বভাব ও সুঠাম গড়ন ইতোমধ্যেই সবার নজর কেড়েছে। গরুটির দাম হাঁকা হয়েছে ১৫ লাখ টাকা, যা তাকে এবারের কোরবানির হাটের অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে তুলেছে।
জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বয়লা এলাকার সানজিদ এগ্রো ফার্মের মালিক সানজিদ হোসেন দীর্ঘদিন ধরে পরম যত্নে ও ভালোবাসায় লালন-পালন করে আসছেন এই বিশালাকৃতির দেশি ষাঁড় ‘বাদশা’-কে। বাদশার উচ্চতা প্রায় ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি, দৈর্ঘ্য ৯ ফুট এবং বুকের বেড় ৮ ফুট ৬ ইঞ্চি—যা তাকে করে তুলেছে এক প্রকৃত দৃষ্টিনন্দন ও রাজসিক প্রাণী। শুধু আকৃতিতেই নয়, বাদশা মুগ্ধ করে তার সৌন্দর্য ও শান্ত স্বভাবেও। প্রতিদিন তার খাবারের তালিকায় থাকে উন্নতমানের খৈল, ভুট্টা, গম, ভুসি, মিষ্টি লাউ, আলু, কলা ও তাজা ঘাস। এসব খাবারের পেছনে দৈনিক ব্যয় হয় প্রায় ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা। এত যত্ন ও সযত্ন পরিচর্যার ফলেই বাদশা আজ এক বিস্ময়কর প্রাণীতে পরিণত হয়েছে।
বাদশার পরিচর্যায় রাখা হয় সর্বোচ্চ গুরুত্ব। প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার তাকে শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার দিয়ে গোসল করানো হয়, যাতে তার গায়ের ত্বক ও লোম ঝকঝকে ও স্বাস্থ্যবান থাকে। গরমের সময় বাদশার যেন কোনো কষ্ট না হয়, সে জন্য গোয়ালঘরের ছাদে স্থাপন করা হয়েছে দুইটি শক্তিশালী ফ্যান।
এমন ব্যতিক্রমী ষাঁড়কে একনজর দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন স্থানীয়রা ছাড়াও আশপাশের গ্রামের অসংখ্য মানুষ। অনেকেই বাদশার সঙ্গে ছবি তুলছেন, ভিডিও করছেন, আবার কেউ কেউ তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করে নিচ্ছেন আনন্দের মুহূর্তগুলো। এর ফলে সানজিদ এগ্রো ফার্ম এখন আর শুধু একটি খামার নয়—বাদশার সৌজন্যে এটি স্থানীয় এক দর্শনীয় স্থান হিসেবেও পরিচিত হয়ে উঠছে।
বাদশার মালিক সানজিদ হোসেন জানান, অনেকটা সন্তানের মতো করেই তারা বাদশাকে লালন-পালন করেছেন। দীর্ঘদিনের অকৃত্রিম ভালোবাসা, পরিশ্রম আর শৃঙ্খলিত পরিচর্যার ফলেই আজ বাদশা এতটা বড়, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী এবং আকর্ষণীয় হয়েছে। তার চেহারা, চলাফেরা ও খাওয়ার ভঙ্গিমায় সত্যিই এক রাজসিক ভাব ফুটে ওঠে—ঠিক যেন এক রাজা! এই কারণেই সানজিদ আদর করে তার নাম রেখেছেন ‘বাদশা’।
সানজিদ হোসেন আরো জানান, ঈদের আগে কিশোরগঞ্জের ইচ্ছাগঞ্জ গরুর হাটে বাদশাকে প্রদর্শনের জন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে বাদশার জন্য আলাদা দেখভালের লোকও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যেন কোনোভাবেই তার পরিচর্যায় ঘাটতি না পড়ে।
এখন দেখার বিষয়, কোরবানির ঈদের আগে ১৫ লাখ টাকার এই রাজসিক বাদশা আদৌ কোনো সৌভাগ্যবান ক্রেতার গোয়ালে জায়গা করে নিতে পারে কি না।
আলীম