
ধূমপানকে আমরা সাধারণত ফুসফুসের ক্যান্সার, হৃদরোগ বা শ্বাসকষ্টের জন্য দায়ী করি। কিন্তু সাম্প্রতিক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় উঠে এসেছে আরও এক ভয়াবহ সত্য ধূমপান ধীরে ধীরে নষ্ট করে দিচ্ছে আমাদের কিডনি, আর তা এতটাই নীরবে যে অনেকেই তা বুঝে উঠতে পারেন না।
বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যগবেষকরা জানিয়েছেন, ধূমপানের প্রভাব কেবল শ্বাসযন্ত্রেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি কিডনির রক্তপ্রবাহে বিঘ্ন ঘটায়, রক্তচাপ বাড়িয়ে তোলে এবং শরীরে দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ সৃষ্টি করে। এই তিনটি কারণ একত্রে কিডনি কোষের কার্যকারিতা হ্রাস করে, যার ফলাফল হয় দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগ, এমনকি ডায়ালাইসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপন পর্যন্ত গড়াতে পারে।
‘কিডনি রিসার্চ ইউকে’ তাদের এক প্রতিবেদনে জানায়, ধূমপায়ীদের ক্ষেত্রে কিডনির রক্তনালীগুলো দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং কিডনি ধীরে ধীরে তার স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারাতে থাকে। ২০১৯ সালে ‘ন্যাচার’-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ধূমপায়ীদের কিডনি ফাংশন অন্যান্যদের তুলনায় দ্রুত হ্রাস পায় এবং যারা ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন, তাদের জন্য এই ঝুঁকি আরও বেশি।
তবে আশার খবর হলো, ধূমপান ছাড়ার পর কিডনি ফাংশনে উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখা যায়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা সংস্থা ‘ডা. ভিটা’ জানিয়েছে, ধূমপান ছাড়ার মাত্র এক বছরের মধ্যেই রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক হতে শুরু করে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আসে এবং কিডনির কোষগুলো নতুন করে কার্যক্ষমতা ফিরে পেতে শুরু করে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগের এক চিকিৎসক বলেন, “ধূমপান কিডনির জন্য এক নীরব ঘাতক। অনেকেই জানেন না, কিডনি রোগের পেছনে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। ধূমপান বন্ধ করলে চিকিৎসা আরও কার্যকর হয় এবং কিডনি রোগের ঝুঁকিও অনেকাংশে হ্রাস পায়।”
এই গবেষণা ও পরামর্শগুলো থেকে স্পষ্ট ধূমপান শুধু ফুসফুস নয়, নীরবে কিডনিরও চরম ক্ষতি করে চলেছে। তাই সময় থাকতে ধূমপান ত্যাগ করাই কিডনি সুরক্ষার প্রথম পদক্ষেপ।
তথ্যসূত্র:Kidney Research UK
আফরোজা