ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৯ মে ২০২৫, ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ড. ইউনুসের সরকারকে বিপদে ফেলতেই পরিকল্পিতভাবে সংকট তৈরি করা হচ্ছে না তো?

প্রকাশিত: ০০:৩৮, ২৮ মে ২০২৫; আপডেট: ০০:৩৯, ২৮ মে ২০২৫

ড. ইউনুসের সরকারকে বিপদে ফেলতেই পরিকল্পিতভাবে সংকট তৈরি করা হচ্ছে না তো?

ছ‌বি: সংগৃহীত

প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন সম্প্রতি তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে আশঙ্কা প্রকাশ করে লিখেছেন, “শিল্প বাঁচলে, বাঁচবে দেশ!” তাঁর মতে, দেশের অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক খাত— শিল্পখাত— বর্তমানে চরম সংকটে পড়েছে এবং সরকারের উচিত দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

ইলিয়াস হোসেন একটি সংবাদ শেয়ার করে বলেন, দেশের শিল্পকারখানাগুলো বর্তমানে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকটে বিপর্যস্ত। উদ্যোক্তাদের অভিযোগ, এই সংকট কোনো আকস্মিক বা স্বাভাবিক ঘটনা নয়, বরং এটি একটি সুপরিকল্পিত ধ্বংসযজ্ঞ, যার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য লুকিয়ে থাকতে পারে। তাদের সন্দেহ, ড. ইউনুসের নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা দুর্বল করতে পরিকল্পিতভাবেই এ পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হচ্ছে।

শিল্প উদ্যোক্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, ১৯৭১ সালে যেভাবে জাতিকে দুর্বল করতে বুদ্ধিজীবী হত্যা করা হয়েছিল, আজ তেমনি শিল্পখাতকে পঙ্গু করার অপচেষ্টা চলছে—তবে এবার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট।

একাধিক শিল্প মালিক বলছেন, দীর্ঘ এক দশকের বেশি সময় ধরে জ্বালানি ঘাটতির সঙ্গে লড়াই করলেও কার্যকর সমাধান মেলেনি। প্রতি বছর এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসে চাহিদা বেড়ে গেলেও সরকার যথাযথ প্রস্তুতি নেয় না। চলতি বছরেও দেখা যাচ্ছে, শিল্প খাতে গ্যাস বরাদ্দ কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১৬ মিলিয়ন ঘনফুটে, যেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সার কারখানায় বরাদ্দ বেড়ে হয়েছে ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট।

ফলে অনেক কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। টেক্সটাইল খাতে প্রায় ৫০ শতাংশ কারখানা সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। মীর সিরামিক্স চলছে ১৫-২০ শতাংশ উৎপাদনে, সিআরসি টেক্সটাইল ২০ শতাংশ, আমান টেক্সটাইল ৪০ শতাংশ, নোমান স্পিনিং মিলস ৬০ শতাংশ এবং নরিশ পোল্ট্রি মাত্র ১০ শতাংশ সক্ষমতায় চলছে। ইতোমধ্যে পাঁচটি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।

প্রায় ৫০ লাখ মানুষ সরাসরি ও পরোক্ষভাবে শিল্পখাতে কর্মরত, যাদের মধ্যে গার্মেন্টস খাতেই ৪৩ লাখ শ্রমিক রয়েছেন— এর মধ্যে ৫৩ শতাংশই নারী। গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটের কারণে তাঁদের চাকরি ও ভবিষ্যৎ চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছে।

শ্রমিকরা বলছেন, কাজ না থাকলেও তারা ঈদের বেতন ও বোনাস নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন, “বেতন না পেলে পরিবার চালাব কী করে?” প্রতিবাদে রাস্তায় নামার কথাও উঠছে।

অন্যদিকে, মালিকপক্ষও চরম চাপের মুখে। উৎপাদন বন্ধ থাকা সত্ত্বেও ব্যাংক ঋণ, গ্যাস বিল ও শ্রমিক বেতন দিতে হচ্ছে। অনেকেই বলছেন, “কারখানা চালাতে না পারলে ঋণ শোধ করব কীভাবে? চাইলে জেলে যান, কিন্তু এভাবে আর চলা সম্ভব না।”

২০২৩ সালে আগের সরকার গ্যাসের দাম ১৫০ থেকে ১৭৮ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে প্রতি ঘনমিটার ৪০ টাকা নির্ধারণ করেছিল, যেখানে শিল্প মালিকদের দাবি ছিল ২১-২২ টাকা। এরপরও গ্যাস সরবরাহ স্থায়ীভাবে নিশ্চিত হয়নি। চলতি বছর অন্তর্বর্তী সরকার গ্যাসের দাম আরও ৩৩ শতাংশ বাড়ালেও সংকট বহাল আছে।

মে মাসে শিল্প মালিকদের সঙ্গে বৈঠকে ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের আশ্বাস দেওয়া হলেও বাস্তবে মাত্র ৫০ মিলিয়ন ঘনফুট পর্যন্ত সরবরাহ হয়েছে, ফলে সেই প্রতিশ্রুতিও কার্যকরভাবে ভেঙে পড়েছে।

বিভিন্ন উদ্যোক্তা বলছেন, অবস্থা এতটাই খারাপ যে গাড়ি-বাড়ি তো দূরের কথা, নিজেরাই বিক্রি হয়ে যেতে পারি! কেউ কেউ সরকারের প্রতি আবেদন জানাচ্ছেন, যেন তাদের ফ্যাক্টরি বিক্রির ব্যবস্থা করে দেয়। অনেক প্রতিষ্ঠান বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রির চিন্তা করছে।

তাদের বক্তব্য, “আমরা রেডিমেড ফ্যাক্টরি দিয়ে দিতে রাজি, শুধু যেন বাঁচতে পারি। বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করা যায়, কিন্তু বের হওয়ার কোনো পথ নেই।”

বিশ্লেষকদের মতে, শিল্পখাত ধ্বংস হলে শুধু GDP নয়, গোটা অর্থনীতি হুমকির মুখে পড়বে। বর্তমানে শিল্পখাত দেশের মোট জিডিপির প্রায় ৩৩ শতাংশ অবদান রাখে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩.৫১ শতাংশে, যা আরও সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

শিল্পপতিরা অভিযোগ করছেন, সরকারের নীতিনির্ধারকেরা যেন সংকটকে উপেক্ষা করছেন— “উটপাখির মতো বালিতে মাথা গুঁজে রেখেছেন।” তারা বলছেন, এই অব্যবস্থাপনা নিছক ব্যর্থতা, না কি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র— সেই প্রশ্ন এখন জাতীয় পর্যায়ে উঠছে।

ভিডিও দেখুন: https://youtu.be/Rhe09zwB6Os?si=RlJ447bV3rIUTx_C

×