ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ৩০ মে ২০২৫, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সিরাজগঞ্জ

টুংটাং শব্দে মুখর কামার পল্লি

সংবাদদাতা, তাড়াশ, সিরাজগঞ্জ

প্রকাশিত: ০১:২৪, ২৯ মে ২০২৫

টুংটাং শব্দে মুখর কামার পল্লি

ঐতিহ্যগতভাবে কয়লার চুলায় লোহা পুড়িয়ে তৈরি করা হচ্ছে দা, বটি, ছুরি, চাপাতি

আগামী  জুনে উদ্যাপিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা। ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে এদিন পশু কোরবানি করবেন দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। এসব পশুর মাংস কাটতে দা, বটি, ছুরি, চাপাতি ইত্যাদি ধাতব হাতিয়ার অপরিহার্য। আর এসব হাতিয়ার তৈরিতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন তাড়াশ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কামাররা। ঈদের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে তাদের কর্মব্যস্ততা।
ঐতিহ্যগতভাবে কয়লার চুলায় লোহা পুড়িয়ে তৈরি করা হচ্ছে দা, বটি, ছুরি, চাপাতিসহ বিভিন্ন ধরনের হাতিয়ার। কামারপাড়ায় এখন কারিগরদের যেন দম ফেলারও সময় নেই। খাওয়া-দাওয়া ভুলে কাজ করছেন তারা। বছরের অন্য দিনগুলোতে তেমন কাজ না থাকায় অলস সময় কাটালেও কোরবানির সময়টাতে তাদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। এ সময় প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করতে হয় তাদের। মূলত এসময়  তাদের বেচাবিক্রিও বেড়ে যায় কয়েকগুণ। যা দিয়ে সারাবছরের খোরাক জোগাড় করেন অনেক কামাররা।
পৌরসদরের মানিক কামারের ছেলে মিলু কামার বলেন, সারাবছর খুব একটা কাজকর্ম থাকে না। কোরবানির ঈদের সময় একটু কাজের চাপ বেশি থাকে কারণ এ সময় মানুষ ছুরি, বটি, চাপাতি শান দেওয়া ও কেনাকাটা বেশি করে থাকে। আর ঈদের  এ সময়টার জন্য আমরা অপেক্ষায় থাকি। কারণ এ সময়ে আমরা কিছু বাড়তি আয় করি যা দিয়ে সংসারের সারাবছরের খরচ মেটাই। হাসিনুর কামার বলেন, একাজ করে সংসার চালানো এখন খুব কঠিন হয়ে পড়ছে। এ কাজে আর আগের মতো কামাই হয় না, সারাবছর তেমন কাজও আর হয় না। শুধু কোরবানির ঈদেই একটু কাজের চাপ বেশি থাকে।
মহিষলুটি বাজারের রিয়াজ কামারের ছেলে রেজাউল কামার বলেন, এটা আমার পূর্বপুরুষের পেশা। আমি ছোটবেলা থেকেই এ পেশার সঙ্গে জড়িত ছিলাম। বাবার কাছ থেকে কাজ শিখেছি। প্রায় ২৫ বছর যাবৎ এ পেশায় আছি। এক সময় এ ব্যবসা প্রচুর লাভবান ছিল। জিনিসপত্রের দাম কম থাকলেও ব্যবসা ছিল ভালো। একসময় এসব পণ্য ব্যবহারকারিরা পণ্য তৈরির জন্য বা কিনতে ছুটে আসতেন কামারদের কাছে কিন্তু শিল্পায়নের এ যুগে কারখানায় অত্যাধুনিক মেশিনে তৈরি হচ্ছে এসব লোহা ও ইস্পাতের পণ্য। ফলে আমাদের চাহিদা কমে গেছে। তাড়াশ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিটি দা, বটি, ছুরি তৈরিতে প্রকারভেদে চাপাতি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ১২০০ টাকা, বটি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা ছুরি ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা। আবার পুরানো চাপাতি শান দেওয়ার জন্য নেওয়া হচ্ছে ১০০-১৫০ টাকা, ছুরি ১০০-১৫০ টাকা পর্যন্ত মজুরি নেওয়া হয়।
ক্রেতা মোঃ রুহুল আমিন বলেন, ঈদুল আজহা উপলক্ষে দা, চাপাতি ও ছুরির দাম বেশি নেওয়া হচ্ছে এবং শান  দেওয়ার জন্যও নেওয়া হচ্ছে অনেক বেশি মজুরি।

×