ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ৩১ মে ২০২৫, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

জলোচ্ছ্বাসে কুয়াকাটার নির্মাণাধীন সড়ক লন্ডভন্ড, পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, পটুয়াখালী  

প্রকাশিত: ০২:২৫, ৩০ মে ২০২৫; আপডেট: ০২:২৬, ৩০ মে ২০২৫

জলোচ্ছ্বাসে কুয়াকাটার নির্মাণাধীন সড়ক লন্ডভন্ড, পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন

ছবিঃ সংগৃহীত

বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে কুয়াকাটা সৈকতের সদ্য নির্মিত সড়ক লন্ডভন্ড হওয়ার খবরটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে গেছে। এ নিয়ে মানুষ বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক মন্তব্য করছেন। বিষয়টি কলাপাড়ার গোটা উপকূলে আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়েছে। 

এদিকে গণমাধ্যম ও ফেসবুকে এ খবর ভাইরাল হওয়ার প্রেক্ষিতে আজ (২৯ মে) সন্ধ্যার পরে এ ঘটনায় পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। 

কুয়াকাটা পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী কমিশনার ( ভূমি) মোহাম্মদ ইয়াসীন সাদেককে আহ্বায়ক করে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। যেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী, কলাপাড়া জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী, এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে সদস্য করা হয়েছে। কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রবিউল ইসলাম এই কমিটি গঠণ করেছেন। আগামি সাত দিনের মধ্যে এ কমিটিকে মতামত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। 

কমিটি গঠনের চিঠিতে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে, সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন নির্মানাধীন রাস্তাটি খুবই দৃষ্টিকটুভাবে ভেঙে পড়েছে। রাস্তাটির নির্মাণ কাজ খুবই নিম্নমানের। নিম্নমাণের লোকাল বালি আর পাতলা সিসি ঢালাইয়ের মাধ্যমে রাস্তাটির কাজ সম্পন্ন করার চেষ্টা করা হয়েছে। নির্মাণের প্রাক্কলনে কোন ধরনের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়নি মর্মে প্রতীয়মান হয়েছে। স্থানীয়ভাবে জনগণ, গণমাধ্যম তথা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হলেও উক্ত প্রকল্প কমিটি ও তৎকালীন পৌর কর্তৃপক্ষ কোন কর্ণপাত করেনি।

এর আগে, কুয়াকাটা সৈকতের শূণ্যপয়েন্টের পূর্বদিকে ট্যুরিজম পার্ক থেকে পূর্বদিকে তিনটি প্যাকেজে মোট দুই কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেন বিগত সরকারের সময় থাকাকালীন মেয়র আনোয়ার হাওলাদার। প্রথম দফায় ১৩ শ’ মিটার অংশের কাজ সম্পন্নের চেষ্টা করেন। বাকি ৭০০ মিটারের কাজ শুরু হয়নি। কিন্তু হঠাৎ করে আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে প্রায় দেড়টা পর্যন্ত সাগরের অস্বাভাবিক জোয়ারের জলোচ্ছ্বাস গোটা সৈকতজুড়ে ব্যাপক তান্ডব চালায়। আর এতেই সড়কটির দুই তৃতীয়াংশ বিধ্বস্ত হয়ে যায়। লন্ডভন্ড হয়ে যায়। ভেসে যায় সড়কের ভগ্নাংশ সাগরের জোয়ারে। বিষয়টি তাৎক্ষণিক গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হয়ে যায়। ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে পড়ে।

পরিবেশ ও পর্যটন উন্নয়ন কর্মী কেএম বাচ্চু ফেসবুকে বলেছেন, ব্যর্থ উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর নিরপেক্ষ তদন্ত করতে হবে এবং দায়ীদের চিহ্নিত করতে হবে। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন ও গণমাধ্যমের প্রতি অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাই। 

অনেকে সাবেক মেয়র আনোয়ার হাওলাদারের এটি ব্যক্তিগত প্রকল্প বলেও তার বিচার দাবি করেছেন। টেন্ডার না দিয়ে আগেই তার আত্মীয় দিয়ে কাজ শুরু করেছেন বলেও মতামত দিয়েছেন অনেকে। 

এটিকে স্থানীয়রা সাবেক মেয়র আনোয়ার হাওলাদারের চার কোটি টাকার বাণিজ্যিক প্রকল্প হিসেবে বলে আসছেন। কোন ধরনের বাস্তবতা নীরিক্ষা ছাড়াই সাগরের ওয়াটার লেভেল দখল করে করা হয়েছে এ ঝুঁকিপুর্ণ সড়ক। 

তবে অপসারিত মেয়র আনোয়ার হাওলাদার জানান, ওই প্রকল্পটি যথাযথ প্রক্রিয়ায় টেন্ডার দিয়ে কাজ শুরু করা হয়েছে। কেবল সিসি কাজ চলমান রয়েছে। এরপর আরসিসির কাজ হওয়ার কথা। ঢেউয়ের ঝাপটা ঠেকাতে গাইডওয়াল করার ডিজাইন রয়েছে। আর বিল তোলা, কত তোলা হয়েছে, এসব বিষয় প্রকৌশলীরা বলতে পারবেন। তবে একটি সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে মোট ৬৩ লাখ টাকার বিল ঠিকাদারকে প্রদান করা হয়েছে।

সাগরঘেষা সড়ক বিধ্বস্তের বিষয় কথা বলতে কুয়াকাটা পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী নিয়াজুর রহমান কে মোবাইল করলে তিনি রিসিভ করেননি। তবে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো রবিউল ইসলাম জানান, গোটা বিষয়টি তদন্ত কমিটি মতামত দিলে পরিষ্কারভাবে বলা যাবে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

ইমরান

×