
লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক
অসুন্দর ও অত্যাচারীর বিনাশ করিতে যারা/জন্ম লয়েছে চিরনির্ভীক যৌবন মাতোয়ারা/ তাহাদেরি শুধু আছে অধিকার ঈদগাহে-ময়দানে তাহারাই শুধু বকরীদ করে জানমাল কোরবানে-।
মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা বছর পরিক্রমায় আবার এসে হাজির। মাঝখানে আর মাত্র আটদিন বাকি এ উৎসবের। কিন্তু ঈদের নানা আয়োজন ও প্রস্তুতি সারতে সারতে কখন যে এ দিনগুলো নিঃশেষ হয়ে যাবে টেরই পাওয়া যাবে না। এরই মধ্যে এখন পবিত্র হজেরও সমস্ত পালা-প্রস্তুতি চূড়ান্ত। ক’দিন পর থেকে এ অনুষ্ঠানমালা সুসম্পন্ন হবে নবীর দেশের মক্কা নগরীতে। আরবি জিলহজ মাসের আজ প্রথম তারিখ। অর্থাৎ হিজরি সনের সমাপনী মাসের শুরু। সে হিসাবে ইতোমধ্যে আমরা আরও এগারোটি মাস অতিক্রম করে এসেছি।
কুরআন শরীফের মর্মবাণী অনুযায়ী আরবি মাসের ক্রমবিন্যাস অতি প্রাচীন ও মহান ¯্রষ্টা আলাহতায়ালার ইচ্ছারই প্রতিফলন। এ মাসগুলোর ক্রমধারা ওলোট-পালট করাকে কুরআনে তীব্র ভাষায় তিরস্কার করা হয়েছে। ইসলামপূর্ব যুগে আরণ গোত্রও ধর্মগুলো ওলোট-পালটে বেশ ওস্তাদ ছিল। আর সে সুবাদে তারা পবিত্র মাসে নানা আকাম-কুকামে লিপ্ত হতো। ধর্মীয় বিধিনিষেধগুলো হয়ে পড়ত অগোছালো। তাই ইসলামের প্রচার-প্রসারের পর আরবি মাসের পরিবর্তন চিরতরে থামিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর কারণ হলো-গোটা বিশ্বের সমমনা মানুষের মধ্যে অনন্দ-খুশি, ত্যাগ-তিতিক্ষায়, ইবাদত-বন্দেগি, জীবন-জীবিকায় একটি সমতার রেখাপাত টান ও বিশ্ব ভ্রাতৃত্ববোধকে সুদৃঢ় করা।
সর্বোপরি আল্লাহর দেওয়া বিধিবিধান পালনে অভিন্ন অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এর লক্ষ্য। আমরা দেখি, মহরম থেকে প্রতিটি মাসে মুসলমানদের জীবনে কতিপয় নির্দিষ্ট করণীয় রয়েছে। ওসব মানতে তারা বদ্ধপরিকর এবং এ সবই তাদের সামাজিক ও ধর্মীয় আদর্শ, পরিচিতি। এসব ধারাবাহিক পালা-পার্বণ আদায়পূর্বক একজন মুসলমান ¯্রষ্টার নৈকট্য লাভে সমর্থ হয়। আরবি বা হিজরি সনের শেষ মাসে রয়েছে হজ ও কোরবানি। এ দুটো অনুষ্ঠানে ঘটে মুসলমানদের জাগরণ ও ত্যাগের বহির্প্রকাশ। মুসলমানদের চিত্তপরিশুদ্ধ করে তোলে হজ ও কোরবানি। হজের বিষয়ে বলা হয়েছে: এটি তাদের এমনভাবে নির্মল-নিষ্কলুষ করে কা-ইয়াওমিন ওয়ালাদাতহু উন্মুহু... যেমন কাউকে তার মা জননী ভূমিষ্ঠকালীন দিনে (নিষ্পাপভাবে) জন্ম দেয়। (আল হাদিস)।
কোরবানি সম্পর্কে হযরত মোহাম্মদ (স) ইরশাদ করেছেন : ‘এটি তোমাদের পিতা ইব্রাহিমের সুন্নাত- কোরবানির মৌসুমে আল্লাহর নিকট কোরবানির চেয়ে অধিক প্রিয় আর কোনো জিনিস নেই।’ অন্যত্র বলা হয়েছে, ইন্নামাল আ’মালু বিল মায়াতিন- ‘সব ভালো তার শেষ ভালো যার।’ (আল হাদিস)। বছরের এ সমাপনী দিনগুলোতে আমরা নিজেকে কতটুকু কর্তব্যনিষ্ঠ ধর্মপরায়ণ হিসেবে উপস্থাপন করতে পারি তা-ই বিবেচনায় আনার বিষয়।