ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ৩১ মে ২০২৫, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

পশ্চিমা অবরোধকে চ্যালেঞ্জ করে উড়ল নতুন সুপারজেট! বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিল মস্কো

প্রকাশিত: ০৪:৩৬, ৩০ মে ২০২৫; আপডেট: ০৪:৩৯, ৩০ মে ২০২৫

পশ্চিমা অবরোধকে চ্যালেঞ্জ করে উড়ল নতুন সুপারজেট! বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিল মস্কো

ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও তাদের মিত্ররা বিমান সংক্রান্ত একগুচ্ছ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। বোয়িং ও এয়ারবাসের মতো আন্তর্জাতিক বিমান নির্মাতারা রাশিয়ায় যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। এমন এক পরিস্থিতিতে রাশিয়ার প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ও আত্মনির্ভরতার একটি ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করল 'সুখই সুপারজেট'। কমসমলসক অন আমুরের আকাশে সম্পূর্ণ রুশ প্রযুক্তিতে নির্মিত এই যাত্রীবাহী বিমানটি সম্প্রতি তার প্রথম সফল উড়ান সম্পন্ন করেছে।

এটি ছিল শুধুমাত্র একটি পরীক্ষামূলক ফ্লাইট নয়—বরং ছিল রুশ প্রযুক্তির স্বাধীন অভিযাত্রার সূচনা। ইউনাইটেড এয়ারক্রাফট কর্পোরেশনের জেনারেল ডিরেক্টর বাদিম বাদেখা এক আবেগঘন ঘোষণায় বলেন, “আজ রাশিয়ার বেসামরিক বিমান চালনার ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ দিন। একটি সম্পূর্ণ আমদানি প্রতিস্থাপিত সুখই সুপারজেট তার প্রথম ফ্লাইট সম্পন্ন করেছে।” তিনি জানান, এই বিমানে পিডিএ-৮ ইঞ্জিনসহ মোট ৩৮টি সিস্টেম ও উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে, যেগুলো পুরোটাই রাশিয়ায় তৈরি। বিমানে কোনো বিদেশি অংশ নেই।

ফুটেজে দেখা গেছে, কীভাবে বিমানটি ধীরে ধীরে রানওয়ে ধরে এগিয়ে আসে এবং নিখুঁত ভারসাম্যে আকাশে ওড়ে। বাদেম বাদেখা জানান, “এই প্রোগ্রামটি অল্প সময়েই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে। বৈশ্বিক মানদণ্ডের তুলনায় প্রায় দেড় থেকে দুই গুণ দ্রুত।” এটি রাশিয়ার সংকল্প, প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং চাপের মধ্যেও আত্মবিশ্বাস ধরে রাখার অসাধারণ এক নজির।

প্রায় ৪০ মিনিটের পরীক্ষামূলক উড়ানটি চালিয়েছেন পাইলট সেরগেই জাভালকিন। উড়ানের পর তিনি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে জানান, “ফ্লাইটটি ছিল অসাধারণ। সমস্ত সিস্টেম নিখুঁতভাবে কাজ করেছে। কোনো সমস্যা হয়নি। ইঞ্জিনগুলো ছিল অত্যন্ত মসৃণ।” তিনি এই ঐতিহাসিক অর্জনের পেছনে থাকা প্রকৌশলী ও রক্ষণাবেক্ষণ দলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

এই প্রকল্পে সাতটিরও বেশি রুশ প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। তারা দিন-রাত পরিশ্রম করে প্রতিটি যন্ত্রাংশ, উপাদান ও সিস্টেম তৈরি করেছে। এটি শুধু একটি বিমান নির্মাণ নয়, বরং রাশিয়ার আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ বিমান শিল্প গড়ে তোলার লক্ষ্যে পরিচালিত এক সমন্বিত প্রচেষ্টা।

প্রথম ফ্লাইটে বিমানটি ৩,০০০ মিটার উচ্চতায় ঘন্টায় ৫০০ কিলোমিটার গতিতে উড়েছে, যা এর কার্যকারিতা ও সক্ষমতারই প্রমাণ। যদিও সামনে এখনো শত শত পরীক্ষামূলক ফ্লাইটের চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে, তবুও বাদেম বাদেখা আত্মবিশ্বাসের সুরে বলেন, “মাটিতে সম্পন্ন কঠিন প্রস্তুতির ফলেই নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সব ফ্লাইট পরীক্ষা সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।”

বিশ্লেষকদের মতে, এই প্রথম উড়ান কেবল একটি প্রযুক্তিগত সাফল্য নয়—এটি রাশিয়ার বিমান শিল্পে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। একই সঙ্গে, আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে রাশিয়ার টিকে থাকার লড়াইয়ে এটি একটি শক্তিশালী বার্তা।

 

ফরিদ 

×