ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০১ জুন ২০২৫, ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

আর্থিক দীনতায় হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যের বাহারি পোশাক রফিকুল ইসলাম আধার

প্রকাশিত: ০১:১১, ৩১ মে ২০২৫

আর্থিক দীনতায় হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যের বাহারি পোশাক রফিকুল ইসলাম আধার

.

শেরপুরের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী বাহারি রঙের পোশাক আজ কালের পরিক্রমা আর যুগের বিবর্তনে প্রায় হারিয়ে যাচ্ছে। ফলে জেলার সীমান্তবর্তী তিন উপজেলার গারো পাহাড়জুড়ে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে খুব একটা দেখা মেলে না সেই ঐতিহ্যের পোশাক-পরিচ্ছদ পরা নারী-পুরুষ ও তরুণীদের। সম্প্রদায়ের নেতারা অর্থনৈতিক সংকট, সুতার মূল্য বৃদ্ধি, সরঞ্জামাদির অভাবসহ বস্ত্র তৈরিতে পারদর্শী কর্মীর অভাবকেই দায়ী করছেন ওই পরিস্থিতির জন্য। তবে সরকারিভাবে অর্থনৈতিক জোগান পাওয়া গেলে আবারও এই সম্প্রদায়ের মাঝে বাহারি রঙের পোশাক তৈরিতে আগ্রহ বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন তারা।
জানা যায়, ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্ত ঘেঁষে অবস্থিত শেরপুর সীমান্তের নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী- এ তিনটি উপজেলার প্রায় ৪০ কিলোমিটার পাহাড়ি এলাকাজুড়ে এখনো অর্ধলক্ষাধিক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের লোকজনের বসবাস। এর মধ্যে গারো, কোচ, হাজং, বর্মণ, বানাই, ডালু ও হদি- এ ৭টি সম্প্রদায়ের মানুষ রয়েছে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আইইডির তথ্যমতে, জেলায় গারো সম্প্রদায়ের ১৬ হাজার ৫শ’, বর্মণ ১৭ হাজার, হদি ১০ হাজার ৬শ’, হাজং ৪ হাজার ৭শ’, কোচ ৩ হাজার ৫শ’, ডালু ১১শ’ ও বানাই সম্প্রদায়ের ১১০ জন মানুষ বসবাস করছেন। 
মঙ্গলবার সরেজমিনে গেলে কথা হয় ঝিনাইগাতী উপজেলার রাংটিয়া গ্রামের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নেতা যুগল কিশোর কোচ, জাগেন্দ্র কোচ, বাকাকুড়া গ্রামের ধীমান চন্দ্র কোচসহ কয়েকজনের সঙ্গে। তারা জানান, একসময় তাদের ছিল জমিজমা, গোয়ালভরা গরুসহ ফসলাদিতে ভরপুর। কিন্তু কালের আবর্তে সবকিছু হারিয়ে তাদের সম্প্রদায়ের লোকজন এখন ভূমিহীনে পরিণত হয়েছে। তারা বলেন, অতীতে সম্প্রদায়ের লোকেরা নিজের হাতে তৈরি বাহারি রঙের ঐতিহ্যবাহী পোশাক তৈরি করে ব্যবহার করে আসছিলেন। কোচ সম্প্রদায়ের নিজ হাতে তৈরি বাহারি রঙের কাপড়ের পোশাকের মধ্যে রয়েছে লেফেন, বাশেক, ওড়না, গারো সম্প্রদায়ের নিজ হাতে তৈরি পোশাকের মধ্যে দকমান্দা, দকশাড়ি, ওড়না। তবে হাজং ও বানাই সম্প্রদায়ের লোকজন কোচ সম্প্রদায়ের পোশাকই নিজ হাতে তৈরি করে পরিধান করে থাকে। 
শিক্ষক, সমাজপতি রবেতা ম্রং ঝিনাইগাতী উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি। তিনি বলেন, সম্প্রদায়ের অর্থনৈতিক সংকট, সুতার মূল্য বৃদ্ধি, সরঞ্জামাদির অভাবসহ বস্ত্র তৈরিতে পারদর্শী কর্মীর অভাবে তাদের সম্প্রদায়ের লোকজন আগের মতো আর পোশাক তৈরি করতে পারছে না। আর উপজেলা ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান নবেশ খকশী বলেন, অতীতে সবাই তাদের নিজ নিজ সম্প্রদায়ের কাপড় তৈরিতে অভ্যস্ত ছিল । তারা মারা যাওয়ার পর নতুন প্রজন্মের লোকজন এসব বাহারি রঙের পোশাক তৈরি করতে না পারার কারণে দিনে দিনে সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী পোশাক খুব একটা চোখে পড়ছে না। 
একই কথা জানিয়ে শ্রীবরদী উপজেলা ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান প্রাঞ্জল এম সাংমা বলেন, সকল প্রতিকূলতার মাঝেও কিছু সম্প্রদায়ের লোকেরা এখনো তাদের ঐতিহ্যের পোশাক ধরে রেখেছে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকদের বিয়েশাদিতে এখনো কম হলেও চোখে পড়ে ওইসব বাহারি রঙের পোশাক। তার মতে, সরকারিভাবে অর্থনৈতিক জোগান পাওয়া গেলে আবারও সম্প্রদায়ের মাঝে বাহারি রঙের পোশাক তৈরিতে আগ্রহ বাড়বে। 
এ ব্যাপারে শেরপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোসাঃ হাফিজা জেসমিন বলেন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের জীবনমানের উন্নয়নে সরকার কাজ করছে। তারই আওতায় তাদের নানাভাবে সহায়তাও দেওয়া হচ্ছে। তাদের ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় জেলা প্রশাসন নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। 

প্যানেল

×