
ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ অরলিন্সের এক কারাগার থেকে ১০ কয়েদির নাটকীয়ভাবে পলায়নের ঘটনা ঘটেছে এক সপ্তাহেরও বেশি সময় আগে। এই ঘটনার পর এখনো দুই বন্দি পলাতক রয়েছে, যাদের ধরতে রাজ্যসীমা পার করে তল্লাশি জোরদার করা হয়েছে।
সোমবার (২৬ মে) পর্যন্ত তিন জন পলাতককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে—লেন্টন ভ্যানবুরেন জুনিয়র, লিও টেট ও জারমেইন ডোনাল্ড। টেট ও ডোনাল্ড প্রথম পলাতক যারা লুইসিয়ানা থেকে বাইরে, টেক্সাসে গ্রেপ্তার হন। হান্টসভিল পুলিশ ডিপার্টমেন্টের বক্তব্য অনুযায়ী, তাদের ধরা পড়ার সময় বহু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অংশগ্রহণে একটি উচ্চগতিসম্পন্ন গাড়ি ধাওয়া অভিযান চালানো হয়। বর্তমানে তারা হান্টসভিলের জেলখানায় রয়েছেন এবং আদালতে তাদের সামনে হাজির করা হয়েছে।
এখন পর্যন্ত আটজন পলাতক বন্দি গ্রেপ্তার হলেও, দুজন—আন্তোয়েন মাসি ও ডেরিক গ্রোভস এখনো পলাতক রয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, দুজনেই সশস্ত্র এবং বিপজ্জনক।
পূর্বেও জেল পালানোর অভিজ্ঞতা সম্পন্ন পলাতক
৩২ বছর বয়সী আন্তোয়েন মাসি একাধিকবার পলায়নের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। ২০০৭ সালে, বন্দুকধারী ডাকাতি ও সহিংসতার অভিযোগে গ্রেপ্তারের পর নিউ অরলিন্সের একটি কিশোর অপরাধকেন্দ্র থেকে পালিয়ে যান তিনি। তখন মাত্র ১৫ বছর বয়সী মাসি ছয়জন কিশোরের সঙ্গে একটি ভাঙা তালার মাধ্যমে উইন্ডো ভেঙে পালিয়ে যান। দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় তিনি পলাতক ছিলেন।
পরবর্তী বছরগুলোতে মাসি একাধিকবার পালানোর চেষ্টা ও সাফল্য পেয়েছেন। ২০১৯ সালে উত্তর লুইসিয়ানার একটি ডিটেনশন সেন্টার থেকে তিনি ও আরেক বন্দি দিনের আলোয় বেড়া কেটে পালিয়ে যান। সেই বছরই টেক্সাসে ধরা পড়েন মাসি।
মাসির এ ধরনের দীর্ঘ পালানোর ইতিহাস থাকা সত্ত্বেও নিউ অরলিন্স জেলের প্রথম তলায় তাকে রাখা নিয়ে সংশ্লিষ্টরা হতবাক।
নিউ অরলিন্স শেরিফ অফিস এই মাসের পলায়নকে ‘সমন্বিত প্রচেষ্টা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন, তবে মাসির পরিকল্পনায় ভূমিকা কতটা তা এখনও পরিষ্কার নয়।
পলায়নের পেছনের রহস্য
১০ বন্দি একটি ধাতব শৌচাগারের পেছনের দেয়ালে ফাঁক তৈরি করে পালিয়ে গিয়েছিল। দেয়ালে ‘To Easy LoL’ লিখে গিয়েছিল তারা। তালা ভাঙা, কম্বল চুরি ও জেলের ভিতরের কারো সহায়তায় পালানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
মঙ্গলবারের (২৭ মে) তথ্য অনুযায়ী, কমপক্ষে ১৩ জন এই পলায়ন কাণ্ডে বিভিন্নভাবে সহায়তা করেছে বলে ধরা হয়েছে। স্টার্লিং উইলিয়ামস নামে এক রক্ষণাবেক্ষণ কর্মীকে সহায়তার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মাসি তাকে পানি সরবরাহ বন্ধ করতে না গেলে মারধরের হুমকি দিয়েছিল।
উইলিয়ামসের আইনজীবী দাবি করেছেন, তিনি শুধু তার কাজ করছিলেন এবং জেল কর্তৃপক্ষ তাকে ‘কুম্ভকারীর’ ভূমিকা দিচ্ছে নিজেদের দোষ ঢাকতে।
২০১৮ সালের মার্দি গ্রাস হত্যা মামলার দোষী বন্দি এখনো পলাতক
অন্য পলাতক ডেরিক গ্রোভস ২৭ বছর বয়সী, যিনি গত বছরের শেষে ২০১৮ সালের মার্দি গ্রাসে দুই ব্যক্তিকে হত্যা মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। গ্রোভস ওই দিনে AK-47 বন্দুক ব্যবহার করেছিলেন। গ্রোভসকে দুই হত্যার অভিযোগ ও আরও দুই হত্যাচেষ্টার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
তার চাচি জানিয়েছেন, তিনি চান গ্রোভস নিজে নিজেকে আত্মসমর্পণ করুক এবং পুলিশ তাকে মারাত্মক বল প্রয়োগ থেকে বিরত থাকুক।
অরলিন্স পারিশের ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি জেসন উইলিয়ামস জানান, তাদের কাছে প্রচুর তথ্য ও টিপস আসছে। তাদের ডিজিটাল ফরেনসিক দল এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে জেল কল শুনছে যাতে কার সঙ্গে তারা যোগাযোগ করেছিল তা বের করা যায়।
তিনি আরও বলেছেন, পলাতকদের ধরাও জরুরি, তবে কীভাবে পালিয়ে গেল এবং কারা সাহায্য করল তা জানাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
নিউ অরলিন্স সিটি কোর্টের চারপাশে নিরাপত্তা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি, যাতে সাক্ষী ও জুরিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।
অন্য কুখ্যাত পলায়নের উদাহরণ
অ্যালকাট্রাজ: ১৯৬২ সালের ১১ জুন ফ্র্যাঙ্ক মরিস ও এ্যাংলিন ভাইরা পলায়নের মাধ্যমে অ্যালকাট্রাজ দুর্গ থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন। তাদের আর কখনো গ্রেফতার করা যায়নি।
এল চাপো: মেক্সিকোর কুখ্যাত ড্রাগ কার্টেল নেতা জোয়াকুইন ‘এল চাপো’ গুজম্যান ২০০১ ও ২০১৫ সালে দুইবার অত্যন্ত কৌশলপূর্ণ পলায়ন করেন।
ভিকি ও কেসি হোয়াইট: ২০২২ সালে এলাবামার একটি কারাগার থেকে গার্ড ও বন্দি একসঙ্গে পলায়ন করে ১১ দিন পর্যন্ত ৪ রাজ্যে পালিয়ে ছিলেন।
লেনার্ড ফ্রিস্টো: ১৯২৩ সালে পালিয়ে গিয়ে ৪৬ বছর পরে ১৯৬৯ সালে ধরা পড়েছিলেন।
টেড বান্ডি: সিরিয়াল কিলার বান্ডি বহুবার কারাগার থেকে পালিয়ে একাধিক হত্যাকাণ্ড ঘটান।
সূত্র: সিএনএন।
রাকিব