
কঠিন প্রতিপক্ষ স্বাগতিক পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কিভাবে সফল হওয়া সম্ভব, লাহোরে অনুশীলনের ফাঁকে সে আলোচনাই হয়ত চলছে টাইগার কোচ ফিল সিমন্সের তত্ত্বাবধানে
পাকিস্তান নাম শুনলেই বাঙালিরা নতুন করে উজ্জীবিত হয়, লড়াই করার অনুপ্রেরণা পায়। ওই যে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে জয় লাভ করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ক্রিকেট মাঠে কি সেইভাবে কখনো লড়াই করতে পেরেছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা? টি২০-তে পাক পেসারদের বিরুদ্ধে কি প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পেরেছে টাইগার ব্যাটাররা? উত্তর-না। বাংলাদেশের ক্রিকেটের ইতিহাসে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৯ টি২০-তে মুখোমুখি হয়েছে।
যার মধ্যে বাংলাদেশ ১৬টিতে হারের বিপরীতে জয়লাভ করেছে মাত্র তিনটিতে। আর দ্বিপক্ষীয় ৫টি সিরিজের ৪টিতেই ট্রফি ঘরে তুলেছে পাকিস্তান। প্রথমবারে মতো মিরপুর শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মুস্তাফিজের অভিষেকের দিনে পাকিস্তানকে হারাতে পেরেছিল বাংলাদেশ। এরপর আরও দুটি সিরিজ খেলেও জয় অধরা থেকেছে। সাড়ে তিন বছর পর দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলতে এবার পাকিস্তানের মাটিতে পা রেখেছে বাংলাদেশ দল।
তবে পাকিস্তান সফর করার আগে সময়টা একেবারেই ভালো কাটেনি অধিনায়ক লিটন কুমার দাসের দলের। ফলে এই সফরেরকে ঘিরে তীব্র চাপে রয়েছে বাংলাশে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে শারজায় তিন ম্যাচ টি২০ সিরিজের প্রথম ম্যাচে দাপুটে জয় পায় সফরকারীরা। তবে সেই ধারা ধরে রাখতে পারেনি লিটনরা। দ্বিতীয় ম্যাচে বাজে বোলিং ও সিরিজের শেষ ম্যাচে বাজে ব্যাটিংয়ের কারণে ২-১ ব্যবধানে হেরেছে লিটনের দল।
এবার বাংলাদেশের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ। সুযোগ রয়েছে ব্যর্থতা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজের প্রথম ম্যাচ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে বুধবার। এখন দেখার বিষয় ১৮ কোটি মানুষের মনে নতুন করে জয়ের আনন্দে বয়ে এনে ক্রিকেটবিমুখ সমর্থকদের টিভির সামনে ফেরাতে পারে কিনা! তবুও বড় শঙ্কা থেকে যায় লিটনরা কি পারবে পাকিস্তান জয় করতে?
অবশ্য, এই সফরের আগেই পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল) শুরু হয়েছিল দেশটিতে। যা লাহোর কালান্দার্সের শিরোপা জয়ের মধ্য দিয়ে পর্দা উঠেছে। তাদের ঘরোয়া ২০ ওভারের এই টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছিল টাইগার দলের বিপক্ষের স্কোয়াডের সবাই। যেখানে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেছে স্বাগতিকরা। ফলে পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের সামনে বাংলাদেশের পরিণতি আরও করুণও হতে পারে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচকেরা আরব আমিরাত ও পাকিস্তান সিরিজের জন্য যে দল গঠন করেছেন, তাতে ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলা বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়দের দেখা যায়নি। শারজায় পারভেজ হোসেন ইমন এক ম্যাচে ৫৪ বলে ক্যারিয়ারের প্রথম টি২০ সেঞ্চুরি করেন, যা বাংলাদেশের ছোট ফরমেটের ক্রিকেট ইতিহাসে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। তবে বাকি দুই ম্যাচে রানের খাতা খোলার আগেই সাজঘরে ফিরেছেন ইমন। বলার মতো পারফরম্যান্স বাকিরা কেউ করতে পারেনি। বোলারদের অবস্থা যাচ্ছেতাই। আইসিসির সহযোগী দেশ আরব আমিরাতের তরুণ বোলারদের বিপক্ষে যাঁদের আত্মবিশ্বাস নড়বড়ে, তাঁদের কাছে পাকিস্তানে বড় কিছু আশা করা বেশ কঠিন!
এই সিরিজে বাংলাদেশের বিপক্ষে পাকিস্তানকে নেতৃত্ব দেবেন সালমান আলী আগা, সহ-অধিনায়ক হিসেবে থাকছেন শাদাব খান। চার বছর পর আন্তর্জাতিক টি২০-তে ফিরছেন হুসেইন তালাত। পেসার হিসাবে ফিরছেন নাসিম শাহ ও হাসান আলী। চলতি বছরের মার্চে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পাকিস্তান শেষ টি২০ খেললেও এই পেসাররা দলে ছিলেন না। ব্যাটিং লাইনআপে থাকছেন ফখর জামান, সাইম আইয়ুব, হাসান নাওয়াজ। নাওয়াজ মার্চ মাসে পাকিস্তানের হয়ে টি২০-তে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েছেন। শাদাবের পাশাপাশি লেগস্পিনার আছেন আবরার আহমেদ। বাঁহাতি স্পিন অলরাউন্ডার খুশদিল শাহও আছেন, যিনি শেষ দিকে ঝড় তুলতে পারদর্শী।
বাংলাদেশ সর্বশেষ পাকিস্তান সফরে ৩-০ ব্যবধানে ধবলধোলাই হয়েছিল স্বাগতিকদের কাছে। সেই দলে থাকা নাজমুল হোসেন শান্ত, পেসার শরীফুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান ও শেখ মেহেদী হাসান এ দলেও আছেন, তবে তাঁদের অনেকেই ছন্দে নেই। এর মধ্যে চোটে পড়ার কারণে দল থেকে ছিটকে গেছেন কাটার মাস্টার। তাঁর জায়গায় প্রথমবারের মতো টি২০ দলে ডাক পেয়েছেন খালেদ আহমেদ। এই পেসার বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে নিউজিল্যান্ড ‘এ’ দলের বিপক্ষে সদ্য সমাপ্ত হওয়া ওয়ানডে ও টেস্ট দুটিই ভালো করেছেন। সিলেটে ওয়ানডে ম্যাচে নিয়েছেন তিনটি উইকেট। এরপর টেস্টে প্রথম ইনিংসে ৬টি ও দ্বিতীয় ইনিংসে নেন একটি। ঢাকায় দ্বিতীয় টেস্টে নিয়েছেন ৩ উইকেট।
বাংলাদেশের হয়ে খালেদ এ পর্যন্ত ১৬টি টেস্ট ও দুটি ওয়ানডে খেলেছেন। স্বীকৃত টি২০-তে ৭৪ ম্যাচে তুলে নিয়েছেন ৯৪ উইকেট। এদিকে, লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন লাহোর কালান্দার্সের হয়ে পিএসএলের ফাইনালে জিতেছেন শিরোপা। ফাইনাল ম্যাচে রিশাদ ৪ ওভার বোলিং করে ৪২ রান খরচায় শিকার করেন এক উইকেট। তবে তাঁর দলকে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সে ম্যাচে ৩ উইকেট নিয়েছিলেন রিশাদ। অর্থাৎ পাকিস্তানের মাটিতে রিশাদের কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করছে দল। আর সৌম্য সরকারের
বদলি হিসেবে যোগ দেওয়া মেহেদী হাসান মিরাজও রিশাদের সঙ্গে পিএসএল খেলছেন। ইতোমধ্যে পাকিস্তানে পৌঁছে অনুশীলন শুরু করেছেন ক্রিকেটাররা।