ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ৩০ মে ২০২৫, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

নবীজির যুগে যে চারজন সাহাবী বাংলাদেশে এসেছিলেন

প্রকাশিত: ০৩:২৫, ২৯ মে ২০২৫

নবীজির যুগে যে চারজন সাহাবী বাংলাদেশে এসেছিলেন

ছবি: সংগৃহীত

নবীজি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবদ্দশায়ই ইসলামের শান্তির বাণী পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পৌঁছে দিতে সাহাবাগণ ছুটে বেড়িয়েছিলেন নিরলসভাবে। সে ধারায় নবীজির নির্দেশেই চারজন সাহাবি এসেছিলেন বাংলার মাটিতে—যা বাংলাদেশের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ সমাজ গঠনের প্রাথমিক ভিত্তি হিসেবে ইতিহাসে আলোচিত।

চার সাহাবির আগমন: নবীজির প্রত্যক্ষ যুগে ইসলামের বীজ রোপণ
ইসলামিক চিন্তাবিদদের মতে, হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চাচাতো মামা হযরত আবু ওয়াক্কাস মালিক বিন ওয়াহিব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) ছিলেন সেই চার সাহাবির একজন, যিনি নবীজির জীবদ্দশাতেই চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং বার্মার আরাকান অঞ্চলে ইসলাম প্রচারে আসেন। শুধু তাই নয়, এখান থেকে তারা চীনের ক্যান্টন পর্যন্ত ইসলামের বার্তা পৌঁছে দেন। ক্যান্টনে আজও রয়েছে হযরত আবু ওয়াক্কাস (রাঃ) নির্মিত একটি প্রাচীন মসজিদ ও তার কবর, যা এ ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ।

সমুদ্রপথে আরব বণিকদের আগমন ও ইসলাম প্রচার
আরব বণিকরা ইসলাম প্রচারের অন্যতম বাহক ছিলেন। অষ্টম ও নবম শতাব্দীতে সন্দ্বীপ, রামু, রাজশাহী, পাহাড়পুর, কুমিল্লার ময়নামতি—দেশের বিভিন্ন স্থানে ইসলামের প্রচারে তারা ভূমিকা রাখেন। উপকূলীয় অঞ্চলগুলোর ভাষায় আরবি শব্দের প্রভাব এবং লালমনিরহাটে সদ্য আবিষ্কৃত ৬৯ হিজরির মসজিদের ধ্বংসাবশেষ এসবের শক্ত প্রমাণ।

ভারত থেকে সাহাবি হওয়া ব্যক্তি ও চেরম রাজার ইসলাম গ্রহণ
ইতিহাসবিদদের মতে, রতন আল হিন্দ নামক এক ব্যক্তি ভারত থেকে মদিনায় গিয়ে নবীজির কাছে ইসলাম গ্রহণ করেন এবং সাহাবির মর্যাদা লাভ করেন। একইভাবে মালাবারের চের দেশের রাজা চেরম ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গিয়ে।

পরবর্তী যুগে সুফি দরবেশদের অবদান
পরবর্তীকালে মধ্য এশিয়া ও পারস্য থেকে আগত বহু সুফি দরবেশ—যেমন শাহ মোহাম্মদ সুলতান রুমি, বাবা আদম শহীদ, শাহ মখদুম, জালালউদ্দিন তাবরিজি, হযরত শাহজালাল (রহঃ) প্রমুখ—বাংলায় ইসলাম প্রচারে অসামান্য ভূমিকা রাখেন। তারা নিপীড়িত হিন্দু ও বৌদ্ধদের ইসলামের ন্যায় ও মানবিকতার বাণীতে আকৃষ্ট করেন।

শাহজালালের সিলেট বিজয়: ইতিহাসের মোড় ঘোরানো অধ্যায়
১৩০৩ সালে হযরত শাহজালাল (রহঃ) ৩৬০ জন সঙ্গীসহ দিল্লি থেকে সিলেটে এসে অত্যাচারী হিন্দু রাজা গৌরগোবিন্দকে পরাজিত করেন। তার আদর্শ, চরিত্র ও দাওয়াতি শক্তিতে মুগ্ধ হয়ে হাজার হাজার হিন্দু ও বৌদ্ধ ইসলাম গ্রহণ করেন। অনেকে শাসকরাও ইসলামে দীক্ষিত হন এবং ইসলাম প্রচারে সহযোগিতা করেন।

ইতিহাসের নীরবতা ও মুসলিম জনসংখ্যার বাস্তব ভিত্তি
প্রচলিত একটি ভুল ধারণা আছে যে বাংলাদেশে মুসলমানদের অধিকাংশই হিন্দু বংশধর। কিন্তু ইতিহাসে প্রমাণ মেলে যে বহু আরব, তুর্কি ও পারস্য বংশোদ্ভূত মানুষ এখানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন এবং তাদের বংশধরেরাই পরবর্তীতে বাংলাদেশের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ সমাজ গঠনের পেছনে ভূমিকা রাখেন।
 

এসএফ

×