ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ৩০ মে ২০২৫, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

জেনে নিন পৃথিবীর যে চার নদী সরাসরি জান্নাত থেকে এসেছে

প্রকাশিত: ০৩:০৪, ২৯ মে ২০২৫

জেনে নিন পৃথিবীর যে চার নদী সরাসরি জান্নাত থেকে এসেছে

ছবি: সংগৃহীত

আল্লাহ তায়ালা তাঁর অপার সৃষ্টিকুশলতায় সৃষ্টি করেছেন এক বিশাল ও বিস্ময়কর মহাবিশ্ব। এই বিশ্বজগতে এমন অনেক প্রাকৃতিক নিদর্শন আছে, যা মানুষের চোখে বিস্ময়ের প্রদীপ জ্বালায়। পবিত্র কোরআনে বহুবার আল্লাহর এই সৃষ্টিসৌন্দর্য ও বৈচিত্র্যের কথা বর্ণিত হয়েছে। তাঁর অপূর্ব সৃষ্টিসমূহের মধ্যে একটি বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছে—নদী।

তবে পৃথিবীতে এমন কিছু নদী রয়েছে, যাদের উৎপত্তি স্বয়ং জান্নাত থেকে এবং তারা এখনো এই দুনিয়ার বুকে প্রবাহমান। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, এই নদীগুলো শুধু ভূগোলগত বা পরিবেশগত দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং আধ্যাত্মিক ও ঐতিহাসিক দিক থেকেও তারা ইসলামী ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক।

জান্নাতের চার নদী: হাদিসের আলোকে
সহি মুসলিম শরিফে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) মেরাজের রাতে জান্নাতে চারটি নদী দেখেছেন। এর মধ্যে দুটি জান্নাতের ভিতরকার অভ্যন্তরীণ, আর দুটি বাহ্যিকভাবে পৃথিবীতে প্রবাহিত। এই বাহ্যিক নদীগুলো হলো—নাইল (নীলনদ) ও ফোরাত (ইউফ্রেটিস নদী)।

ফোরাত নদী: স্বর্ণের পাহাড়ের ভবিষ্যদ্বাণী
প্রাচীন মেসোপটেমিয়া সভ্যতার ধারক ইরাকের ফোরাত নদী, যার দৈর্ঘ্য প্রায় ২৮০০ কিলোমিটার, তুরস্ক, সিরিয়া ও ইরাক হয়ে প্রবাহিত। রাসূল (সা.) ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, কিয়ামতের পূর্বে এই নদী শুকিয়ে যাবে এবং এর নিচ থেকে একটি স্বর্ণের পাহাড় উন্মোচিত হবে।

হাদিসে এসেছে,
“ফোরাত নদী শুকাবে, এবং তার তলদেশ থেকে একটি স্বর্ণের পাহাড় বের হবে। মানুষ তা নিয়ে লড়াই করবে, এবং প্রতি ১০০ জনে ৯৯ জন নিহত হবে।” — সহি মুসলিম, হাদিস ২৮৯৪

আজ সেই ফোরাত নদী ক্রমাগত শুকিয়ে যাচ্ছে, যা অনেক ইসলামিক গবেষকের মতে, ভবিষ্যদ্বাণীর এক জাগ্রত ইঙ্গিত।

নীলনদ: নবী মুসার আশীর্বাদপুষ্ট প্রবাহ
বিশ্বের দীর্ঘতম নদী নাইল বা নীলনদ আফ্রিকার হৃদপিণ্ড মিসর, সুদান ও উগান্ডা অতিক্রম করে ভূমধ্যসাগরে মিশেছে। কুরআন ও হাদিসে বারবার উঠে এসেছে এই নদীর নাম। নবী মুসা (আ.)-এর মা যখন তাঁকে এক ঝুঁড়িতে করে নদীতে ভাসিয়ে দেন, তখনই শুরু হয় নবী মুসার নবুয়তের এক অলৌকিক যাত্রা।

রাসূল (সা.) বলেছেন:
“ফোরাত ও নাইল—দুই নদী জান্নাতের নদীগুলোর অন্তর্ভুক্ত।” — সহি মুসলিম, হাদিস ৪১১৫

তুরস্কের জয়হান ও সিহান নদী: দুনিয়ার বুকে জান্নাতের বারতা
জয়হান নদী, তুরস্কের পূর্ব তারাস পর্বত থেকে উৎপন্ন হয়ে প্রায় ৫০০ কিমি পথ পাড়ি দিয়ে ভূমধ্যসাগরে পতিত হয়েছে। এটি প্রাচীন সভ্যতায় ছিল এক ঐতিহাসিক সীমারেখা ও কৃষির প্রধান উৎস। সহি হাদিসে একে জান্নাতের নদী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

আরেকটি নদী সিহান (বা সেরাস), যা তুরস্কের সিলিসিয়া অঞ্চলের দীর্ঘতম নদী—প্রায় ৫৬০ কিমি দীর্ঘ। প্রাচীন লেখকরা এই নদীকে নিয়ে বিস্তর লিখেছেন, এবং এটি ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।

রাসূল (সা.) বলেছেন:
“সাইহান, জয়হান, ফোরাত এবং নীল—এই চারটি নদী জান্নাত থেকে প্রবাহিত।” — সহি মুসলিম, হাদিস ৬৮৩৭

জান্নাতের সর্বশ্রেষ্ঠ নহর: কাউসার
সবচেয়ে বিখ্যাত ও মর্যাদাপূর্ণ জান্নাতি নদীর নাম কাউসার। আল্লাহ তায়ালা কোরআনের সূরা কাউসারে বলেছেন—
"إِنَّا أَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَرَ"
"নিশ্চয়ই আমি তোমাকে কাউসার দান করেছি।" — সূরা কাউসার, আয়াত ১

এই নদী থেকে কিয়ামতের দিন মহানবী (সা.) তাঁর উম্মতকে পান করাবেন। হাদিসে বর্ণিত আছে, এই পানি দুধের চেয়ে সাদা, বরফের চেয়ে ঠান্ডা, মধুর চেয়ে মিষ্টি, এবং মিশকের চেয়ে সুগন্ধি। কেউ একবার এই পানি পান করলে সে আর কখনো পিপাসার্ত হবে না।

এসএফ

×