ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ৩০ মে ২০২৫, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য করতে আগ্রহী ট্রাম্প, গোল্ডেন ডোম প্রকল্পে অংশগ্রহণ নিয়ে চলছে আলোচনা

প্রকাশিত: ০৪:০০, ২৯ মে ২০২৫; আপডেট: ০৪:০১, ২৯ মে ২০২৫

কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য করতে আগ্রহী ট্রাম্প, গোল্ডেন ডোম প্রকল্পে অংশগ্রহণ নিয়ে চলছে আলোচনা

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কানাডাকে ৫১তম অঙ্গরাজ্য হিসেবে যুক্ত করার চেষ্টা করছেন বলে মনে হচ্ছে। সম্প্রতি তিনি কানাডাকে বিনামূল্যে যুক্তরাষ্ট্রের গোল্ডেন ডোম ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অংশ হতে প্রলোভন দেখাচ্ছেন। ২৭ মে নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশালে ট্রাম্প লেখেন, “আমাদের দুর্দান্ত গোল্ডেন রুম সিস্টেমে অংশগ্রহণের জন্য কানাডা অত্যন্ত আগ্রহী। আলাদা জাতি হিসেবে থাকতে চাইলে খরচ হবে ৬১ বিলিয়ন ডলার, কিন্তু ৫১তম রাজ্যে পরিণত হলে খরচ শূন্য।”

কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির মুখপাত্র জানান, প্রধানমন্ত্রী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে একাধিকবার স্পষ্ট করে জানিয়েছেন যে কানাডা একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ এবং তা বজায় থাকবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মধ্যে নর্থ আমেরিকান এরোস্পেস ডিফেন্স কমান্ড (নোরাড) নামে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি রয়েছে, যার আওতায় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্তকরণের ব্যবস্থা রয়েছে। বর্তমানে আর্কটিক অঞ্চলের ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব বাড়ায় নোরাডে কানাডার দায়িত্ব নিয়ে নতুন আলোচনা চলছে।

প্রধানমন্ত্রী কার্নি সাংবাদিকদের বলেন, গোল্ডেন ডোম প্রকল্পে কানাডার অংশগ্রহণ নিয়ে উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে, তবে তিনি অংশগ্রহণের জন্য কোনো নির্দিষ্ট খরচ বা মূল্য নির্ধারণ করেননি। তিনি বলেন, “আমি নিশ্চিত নই এ ধরনের বিষয়ে দর-কষাকষি হয় কি না, তবে আমরা সচেতন এবং চাইলে বিনিয়োগ ও অংশীদারিত্বের মাধ্যমে প্রকল্পে অংশ নিতে পারি।”

গোল্ডেন ডোম প্রকল্পটি হচ্ছে একটি মহাকাশ ভিত্তিক ইন্টারসেপ্টর ব্যবহার করে তৈরি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যা রাশিয়া থেকে আসা আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রসহ হাইপারসোনিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ করবে। তবে এই প্রযুক্তি এখনও বাস্তবায়িত হয়নি এবং এতে বড় ধরনের প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ রিচার্ড শিমুকা এটিকে একটি দর-কষাকষির কৌশল বলছেন এবং উল্লেখ করেছেন, “কানাডার পক্ষে ৬১ বিলিয়ন ডলার খরচ করা সম্ভব নয়। গোল্ডেন ডোম প্রকল্প প্রযুক্তিগতভাবে ঝুঁকিপূর্ণ এবং বিস্তারিত তথ্য স্পষ্ট নয়। এই প্রকল্প অনেকটা চাঁদে যাওয়ার প্রচেষ্টার মত, যার রাজনৈতিক ও আর্থিক সমর্থন দুর্বল।”

গত সপ্তাহে ট্রাম্প দাবি করেন এই প্রকল্পে মোট খরচ হবে ১৭৫ বিলিয়ন ডলার এবং তার প্রেসিডেন্সির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই এটি কার্যকর করা হবে।

২৭ মে কানাডার পার্লামেন্ট উদ্বোধন করেন রাজা চার্লস, যা কানাডার স্বাধীনতার প্রতি একটি প্রতীকী সমর্থন হিসেবে দেখা হচ্ছে। রাজা চার্লস তার ভাষণে বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার মধ্যে কানাডা তার প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বৃদ্ধি করেছে এবং জাতীয় প্রতিরক্ষা জোরদার করার গুরুত্ব তুলে ধরেন।

গত মার্চে কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে ৪.২ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যার আওতায় একটি অত্যাধুনিক আর্কটিক রাডার সিস্টেম নির্মাণ করা হবে। এটি যুক্তরাষ্ট্র-কানাডার সীমান্ত থেকে আর্কটিক পর্যন্ত আগাম সতর্কতা দেবে। প্রধানমন্ত্রী কার্নি বলেন, “নোরাড আধুনিকীকরণ পরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো এই রাডার সিস্টেম, যা উত্তরের পুরো এলাকায় যেকোনো হুমকি শনাক্ত ও প্রতিরোধ করতে সহায়তা করবে।”

 

রাজু

×