ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ৩১ মে ২০২৫, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

গাজার নারকীয়তার বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন রিয়াদ মনসুর

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ৩০ মে ২০২৫

গাজার নারকীয়তার বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন রিয়াদ মনসুর

ছবি: সংগৃহীত

গেল রোববার গাজার শিশু চিকিৎসক আলা আমির আল নাজ্জারের কোলে নয়টি শিশুর পোড়া লাশের হৃদয়বিদারক দৃশ্য কাঁদিয়ে দিয়েছিল সারা বিশ্বকে। সেই মর্মন্তুদ ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে কান্নায় ভেঙে পড়লেন জাতিসংঘে নিযুক্ত ফিলিস্তিনি প্রতিনিধি রিয়াদ মনসুর।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে মনসুর বলেন, গত মার্চে যুদ্ধবিরতির শর্ত ভঙ্গ করার পর ইসরাইল যে বর্বর অভিযান চালিয়েছে—অপারেশন গিডিয়ান্স চারিটে—এখন পর্যন্ত ১,৩০০ শিশু নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও ৪,০০০। এসব শিশুরা প্রাণ হারাচ্ছে ইসরাইলি গোলাবর্ষণে। গাজার মায়েরা তাদের মৃত সন্তানদের বুকে আঁকড়ে ধরে কাঁদছে, চিৎকার করছে, বলছে ‘আমরা তোমাদের রক্ষা করতে পারিনি’। অথচ আমরা কিছুই করতে পারছি না। একজন মানুষ হিসেবে কীভাবে সহ্য করা সম্ভব এমন নিষ্ঠুরতা?

বক্তব্যের এক পর্যায়ে আবেগ আর ক্ষোভে তিনি টেবিলের উপর ঘুষি মারেন। ৭৮ বছর বয়সী এই কূটনীতিক কিছু সময় নিশ্চুপ থেকে নিজেকে সংযত করেন। পরে আবার বক্তব্যে ফিরে এসে বলেন, যারা নিজেদের মানবতার রক্ষা কবজ হিসেবে পরিচয় দেয়, তাদের এখনই এই নির্মমতা বন্ধে জোরালো অবস্থান নিতে হবে। আমার পরিবারেও নাতি রয়েছে, আমি জানি তারা আমার কাছে কতটা মূল্যবান। গাজার শিশুরা যেন এমন যন্ত্রণা না পায়। যাদের হাতে মানবতার দায়িত্ব, তাদের হাতেই এই নিষ্ঠুরতা বন্ধ হোক।

জাতিসংঘের ওই বৈঠকে গাজার শিশুদের শারীরিক ও মানসিক ভয়াবহ অবস্থার চিত্র তুলে ধরেন মার্কিন ট্রমা সার্জন ডা. ফিরোজ সিধোয়া, যিনি দীর্ঘ সময় গাজার খান ইউনিসের ইউরোপিয়ান হাসপাতালে কাজ করেছেন। তিনি বলেন, গাজায় যারা শিশু হিসেবে বেঁচে আছে, তারা সবাই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। প্রায় অর্ধেক শিশু এখন আত্মঘাতী চিন্তায় ভুগছে। কেউ বাবা-মা ও ভাই-বোনদের হারিয়ে নিজেকে বেঁচে থাকার জন্য অপরাধী ভাবছে। শিশুরা বলছে—‘কেন আমিও ওদের সঙ্গে মারা গেলাম না?’ এই কক্ষে কি কেউ কখনও পাঁচ বছর বয়সী শিশুকে এমন মৃত্যু-কামনা করতে দেখেছে? কিন্তু গাজায় আমি সেই মর্মান্তিক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছি।

অন্যদিকে, গাজার চলমান আগ্রাসনের জন্য দায় চাপিয়ে দেয় ইসরাইল। নিরাপত্তা পরিষদে ইসরাইলি প্রতিনিধি বলেন, উপত্যকার স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস এখনও সব জিম্মিকে মুক্ত করেনি। তাই আমাদের অভিযান বন্ধ হবে না।

এসএফ

×