
ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রে ‘লাফিং গ্যাস’ নামে পরিচিত নাইট্রাস অক্সাইড শুরুতে ব্যবহৃত হতো দাঁতের চিকিৎসায় ব্যথা উপশমকারী হিসেবে এবং হুইপড ক্রিম তৈরিতে ফেনার উপাদান হিসেবে। কিন্তু ধীরে ধীরে এটি পরিণত হয়েছে একটি প্রাণঘাতী কিন্তু এখনো আইনসিদ্ধ নেশাদ্রব্যে, যা তরুণদের মধ্যে দ্রুত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভ্যাপিংয়ের (ই-সিগারেট) জনপ্রিয়তার কারণে এই গ্যাস গ্রহণের পদ্ধতি সহজ হয়ে গেছে, ফলে এর নেশার ঝুঁকি বেড়েছে ফ্লোরিডার ঘোড়সওয়ার মেগ ক্যালডওয়েলের মৃত্যুকে অপ্রত্যাশিত বলেই মনে করেন তার পরিবার। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন তিনি প্রথম নাইট্রাস অক্সাইড বিনোদনের উদ্দেশ্যে ব্যবহার শুরু করেন। মহামারির সময় এই ব্যবহার অতিমাত্রায় বেড়ে যায়।
চার বোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট মেগ ছিলেন পরিবারের প্রাণ। তার বোন ক্যাথলিন ডায়াল বলেন, ‘‘সে ভাবতেই পারেনি যে এটি তাকে ক্ষতি করতে পারে, কারণ সে তো এটি বৈধভাবে দোকান থেকে কিনছিল।’’
নেশা এতটাই তীব্র হয়ে উঠেছিল যে একবার ওভারডোজে তার পা অচল হয়ে যায় এবং প্রস্রাবের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারান। তবুও তিনি নেশা ছাড়তে পারেননি। ধূমপান পণ্যের দোকানের পার্কিং লটে গ্যাস গ্রহণ করে আবার ঢুকে আরেকটি কিনতেন। প্রতিদিন কয়েকশ ডলার ব্যয় করতেন তিনি। শেষ পর্যন্ত গত নভেম্বর মাসে, একটি ধূমপান সামগ্রী দোকানের বাইরে তার মৃত্যু হয়।
মেগের মতো তরুণদের এই পরিস্থিতি নতুন নয়। আমেরিকার পয়জন সেন্টারের বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে নাইট্রাস অক্সাইড ব্যবহারের ঘটনায় ইচ্ছাকৃত বিষক্রিয়ার রিপোর্ট ৫৮ শতাংশ বেড়েছে।
এই গ্যাসের নিয়মিত সেবনে শরীরে ভিটামিন বি১২-এর ঘাটতি হয়, যার ফলে স্নায়ু ক্ষয়, স্পাইনাল কর্ড নষ্ট হয়ে পক্ষাঘাত পর্যন্ত হতে পারে। সিডিসি’র তথ্যমতে, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে এই গ্যাসে মৃত্যুর হার ১১০ শতাংশের বেশি বেড়েছে।
যুক্তরাজ্যে ২০২৩ সালে তরুণদের অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে এটি নিষিদ্ধ করা হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ রাজ্যে এখনো এটি রান্নার উপাদান হিসেবে বিক্রি বৈধ। একমাত্র লুইজিয়ানায় সম্পূর্ণভাবে এর খুচরা বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
গ্যালাক্সি গ্যাসের মতো কোম্পানিগুলো ‘চিকেন সাটে উইথ পিনাট চিলি ফোম’ বা ‘ওয়াটারমেলন গাজপাচো’-এর মতো রেসিপি দিয়ে এটি বিক্রি করছে। তারা ব্লু রাস্পবেরি ও স্ট্রবেরিজ অ্যান্ড ক্রিমের মতো ফ্লেভার যুক্ত করে তরুণদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলছে।
মহামারির সময় যখন ব্যবহারের হার বাড়তে থাকে, তখন নির্মাতারা অনলাইনে ৮ গ্রাম নয়, ২ কেজি ওজনের বড় ক্যানিস্টার বিক্রি শুরু করে। এগুলোর গায়ে ভিডিও গেম বা টিভি সিরিজের চরিত্রের ছবি দিয়ে সাজানো হয়।
প্যাট অউসেম, ‘পার্টনারশিপ টু এন্ড অ্যাডিকশন’ এর এক সদস্য বলেন, ‘‘এমন নাম যেমন গ্যালাক্সি গ্যাস বা মায়ামি ম্যাজিক এগুলো নিজেই বিপণনের ফাঁদ। বড় ক্যানিস্টার মানেই, বেশি লোক একসঙ্গে এটি ব্যবহার করতে পারে, এবং এর ফলে চাপও বাড়ে।’’
টিকটক ‘গ্যালাক্সি গ্যাস’ খুঁজলে ব্যবহারকারীদের নেশা বিরোধী সহায়তার বার্তা দেখায়। র্যাপার এসজেডএ এটি কালো শিশুদের টার্গেট করে বিপণনের বিরুদ্ধে সরব হন।
২০২৫ সালের মার্চে এফডিএ একটি সতর্কতা জারি করে জানায়, গ্যাস সেবনের ফলে যেসব নেতিবাচক ঘটনা ঘটছে, সেগুলো ক্রমেই বাড়ছে। তবে অনেকের জন্য এই সতর্কতা দেরিতে এসেছে।
২০২৩ সালে ২৫ বছর বয়সী মারিসা পলিটের মৃত্যু হয় এক গাড়ি দুর্ঘটনায়। দোষী চালক নাইট্রাস অক্সাইড সেবন করেছিলেন। পলিটের পরিবার ৭৪৫ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ আদায় করে। মেগ ক্যালডওয়েলের পরিবারও এখন নির্মাতা ও সরবরাহকারীদের বিরুদ্ধে সমষ্টিগত মামলা করেছে।
ক্যাথলিন ডায়াল বলেন, ‘‘ডেন্টাল ক্লিনিকে এই গ্যাস ব্যবহারের আগে যারা প্রশিক্ষণ নেয়, তারা যেমন সচেতন, সেই সচেতনতা তো সাধারণ দোকানে কেনাবেচায় নেই। বিক্রেতারা নিজেরাই যদি নৈতিক দায়িত্ব না নেয়, তাহলে আদালতের পথই একমাত্র ভরসা।’’
শহীদ