
পেটে গ্যাস্ট্রিক, বুক জ্বালা বা অম্বলের সমস্যায় অ্যান্টাসিড এখন ঘরে ঘরে খুব পরিচিত ওষুধ। হাতের কাছে সহজলভ্য হওয়ায় অনেকেই সামান্য অস্বস্তিতেই নিয়মিত খেয়ে ফেলেন এ ওষুধ। কিন্তু জানেন কি, দীর্ঘদিন অ্যান্টাসিড সেবন আপনার শরীরের জন্য মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে?
বিশ্বের বিভিন্ন স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বিশেষজ্ঞদের মতে, অ্যান্টাসিড শরীরের অ্যাসিড নিউট্রালাইজ করে সাময়িক আরাম দিলেও এটি মূল সমস্যার সমাধান করে না। বরং দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহার করলে হতে পারে পুষ্টি ঘাটতি, কিডনির সমস্যা, হাড় দুর্বল হওয়া, সংক্রমণের ঝুঁকি এবং গ্যাস্ট্রিকের আসল কারণ চাপা পড়ে যাওয়ার মতো নানা বিপদ।
বিশেষজ্ঞরা যেসব বিষয়ে সতর্ক করেছেন:
১. পুষ্টি ঘাটতির শঙ্কা
দীর্ঘমেয়াদে অ্যান্টাসিড গ্রহণ করলে শরীরে ভিটামিন ও খনিজ উপাদান শোষণে সমস্যা হতে পারে।
- ভিটামিন বি১২: ঘাটতি হলে দেখা দিতে পারে রক্তস্বল্পতা ও স্নায়ুর সমস্যা
- ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম: হাড় ক্ষয়, পেশিতে খিঁচুনি
- আয়রন: ক্লান্তি, দুর্বলতা ও হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি
২. কিডনির ক্ষতি
গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘদিন অ্যান্টাসিড বিশেষ করে প্রোটন পাম্প ইনহিবিটার (PPI) ব্যবহার করলে কিডনির কার্যকারিতা ব্যাহত হতে পারে। হতে পারে:
- কিডনি টিস্যুর ক্ষতি
- ইন্টারস্টিশিয়াল নেফ্রাইটিস
- দীর্ঘমেয়াদে কিডনি বিকল
৩. সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে
পেটের অ্যাসিড কমে গেলে শরীরের প্রাকৃতিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও দুর্বল হয়। এতে বাড়ে:
- Clostridium difficile-এর সংক্রমণ
- অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া
- ডায়রিয়ার মতন জটিল সমস্যা
৪. আসল রোগ চাপা পড়ে যেতে পারে
নিয়মিত অ্যান্টাসিড খেলে সাময়িক আরাম মেলে ঠিকই, কিন্তু এর নিচে লুকিয়ে থাকতে পারে গুরুতর অসুখ:
- গ্যাস্ট্রিক আলসার
- গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD)
- H. pylori সংক্রমণ
- এমনকি পাকস্থলীর ক্যানসারও
৫. রিবাউন্ড অ্যাসিডিটি
দীর্ঘদিন PPI ব্যবহারের পর হঠাৎ বন্ধ করলে শরীর আগের তুলনায় বেশি অ্যাসিড তৈরি করে। এতে সমস্যা আরও বেড়ে যায় এবং ওষুধের ওপর নির্ভরতা তৈরি হয়।
তাহলে করণীয় কী?
- চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া দীর্ঘদিন অ্যান্টাসিড সেবন না করা
- ডায়েট ও লাইফস্টাইলে পরিবর্তন আনা
- প্রয়োজনে H2 ব্লকার বা অন্যান্য বিকল্প ব্যবহারের কথা ভাবা
- পুষ্টি ও কিডনির নিয়মিত পরীক্ষা করানো
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ও গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্টদের পরামর্শ অনুযায়ী, অ্যাসিডিটির প্রকৃত কারণ চিহ্নিত করে চিকিৎসা নেওয়া জরুরি। সাময়িক স্বস্তির আশায় দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকির দিকে না ঝুঁকে বরং চিকিৎসকের পরামর্শে স্বাস্থ্যকর জীবনধারার মাধ্যমেই সমাধান খোঁজা উচিত।
মিমিয়া