
বায়োপসি হলো একটি প্রক্রিয়া, যেখানে শরীর থেকে টিস্যুর একটি ছোট অংশ বা কোষের নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। বায়োপসি মূলত নমুনা নেওয়া বা টিস্যু নমুনা উভয়কেই বোঝায়। এটি একজন প্যাথোলজিস্টের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বগুলোর একটি।
সার্জিক্যাল প্যাথোলজিতে বিভিন্ন ধরনের ইন্টারভেনশনাল পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়, যেমন:
১. ইমেজ-গাইডেড বায়োপসি
২. সার্জিক্যাল বায়োপসি
৩. ইনসিশনাল বায়োপসি
৪. এক্সসিশনাল বায়োপসি
৫. এন্ডোস্কোপিক বায়োপসি
৬. কোন বায়োপসি
৭. ত্বকে পাঞ্চ বায়োপসি
৮. বোন ম্যারো বায়োপসি
৯. ফাইন নিডল অ্যাস্পিরেশন
১০. নিডল বায়োপসি বা কোর নিডল বায়োপসি
নিডল বায়োপসি বা কোর নিডল বায়োপসি:
এই পদ্ধতিতে একটি বিশেষ "বায়োপসি নিডল গান" ব্যবহার করে প্যাথোলজিস্ট টিস্যুর নমুনা সংগ্রহ করেন।
কোর বায়োপসিতে একটি ফাঁপা সুচ ব্যবহার করে শরীর থেকে একটি লম্বা সিলিন্ডার-আকৃতির টিস্যুর নমুনা নেওয়া হয়, যা পরে মাইক্রোস্কোপে পরীক্ষা করা হয়। এটিকে অনেক সময় ট্রু-কাট (Tru-cut) বায়োপসিও বলা হয়ে থাকে।
কোর বায়োপসি ও ট্রু-কাট বায়োপসির মধ্যে পার্থক্য:
কোর বায়োপসিতে তুলনামূলক বড় সুচ ব্যবহৃত হয় এবং লম্বা, সিলিন্ডার-আকৃতির একটি টিস্যু সংগ্রহ করা হয়।
ট্রু-কাট বায়োপসিতে অপেক্ষাকৃত সরু সুচ এবং কাটার ব্যবস্থার মাধ্যমে ছোট টিস্যুর নমুনা নেওয়া হয়।
কোর বায়োপসিতে টিস্যুর গঠন অক্ষুণ্ণ থাকে, যা চিকিৎসকদের জন্য ক্যান্সারের পার্শ্ববর্তী টিস্যু বিশ্লেষণ করতে সহায়তা করে এবং ভবিষ্যতে চিকিৎসা নির্ধারণে সাহায্য করে।
এই পদ্ধতিটি সাধারণত স্তন, প্রোস্টেট, যকৃত, ফুসফুস অথবা লিম্ফ নোডের অস্বাভাবিক এলাকায় টিস্যু সংগ্রহের জন্য ব্যবহার করা হয়।
কোর বায়োপসির উদ্দেশ্য:
১. ক্যান্সার নির্ণয় করা
২. টিউমারের ধরন নির্ধারণ
৩. ক্যান্সারের গ্রেড নির্ধারণ
৪. ইমিউনোহিস্টোকেমিস্ট্রি (Immunohistochemistry) পরীক্ষা
কোর বায়োপসি যেভাবে করা হয়:
সাধারণত চিকিৎসকের চেম্বারেই এটি করা যায়। প্রথমে স্থানীয় অ্যানেস্থেশিয়া প্রয়োগ করা হয়। তারপর সুচ প্রবেশ করানোর স্থানে ছোট একটি কাট তৈরি করা হয়।
তারপর সুচ লেজনে প্রবেশ করিয়ে টিস্যু সংগ্রহ করা হয়।
সুবিধাসমূহ:
-
এটি আউটপেশেন্ট পদ্ধতিতে করা যায় — হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় না।
-
সাধারণত পূর্বপ্রস্তুতির প্রয়োজন হয় না, তবে আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী দল প্রয়োজনে আপনাকে জানাবে।
-
পুরো প্রক্রিয়াটি ১৫-৩০ মিনিট সময় নেয়; টিস্যু সংগ্রহ মাত্র ৩ থেকে ৫ মিনিটের মধ্যেই হয়ে যায়।
চিকিৎসক যদি ফোলা বা গাঁট অনুভব করতে পারেন, তাহলে শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমেই সুচ গাইড করতে পারেন। যদি না পারেন, তাহলে আল্ট্রাসাউন্ড বা সিটি স্ক্যানের সাহায্যে সুচ নির্ধারিত স্থানে পৌঁছাতে সাহায্য করেন।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:
বায়োপসি কোথায় করা হচ্ছে, তার ওপর নির্ভর করে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ভিন্ন হতে পারে।
সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো হলো:
১. রক্তপাত বা চর্মে দাগ পড়া
২. কোমলতা
৩. ফোলা
৪. ব্যথা
৫. সংক্রমণ (চামড়া লাল হওয়া, গরম অনুভব, অথবা ব্যথা হওয়া)
নমুনা সংগ্রহের পর:
নমুনাটি সঙ্গে সঙ্গেই ১০% নিউট্রাল বাফার্ড ফরমালিনযুক্ত পাত্রে রাখা উচিত।
কিছু ক্ষেত্রে, যেমন কিডনির জন্য DIF (Direct Immunofluorescence) পরীক্ষার দরকার হলে, নমুনা স্বাভাবিক স্যালাইনে পাঠানো হয়।
যদি কোনো বিশেষ ধরনের পরীক্ষা যেমন টাচ প্রিপারেশন, ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপি, সাইটোজেনেটিকস, মলিকুলার জেনেটিকস, ফ্লো সাইটোমেট্রি ইত্যাদি দরকার হয়, তাহলে বায়োপসির সময়েই তা বিবেচনা করা উচিত।
পদ্ধতির পর সার্জিকাল এলাকায় শক্ত করে ব্যান্ডেজ পেঁচানো হয়।
ফলাফল:
বায়োপসির ফলাফল হতে পারে:
-
নেগেটিভ (কোনো ক্যান্সার পাওয়া যায়নি)
-
পজিটিভ (ক্যান্সার পাওয়া গেছে)
-
ইনকনক্লুসিভ (ফলাফল অস্পষ্ট, আরও পরীক্ষা প্রয়োজন হতে পারে — যেমন হাড়ের টিস্যুর ক্ষেত্রে)
লেখক: ডা. কাজল আক্তার
সহযোগী অধ্যাপক, প্যাথোলজি
ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, গাজীপুর
এমডি (বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়)
সানজানা