
ডিটক্স ডায়েট এখন অনেকের কাছে ওজন কমানোর এক 'ট্রেন্ডি' উপায়। সোশ্যাল মিডিয়া আর বিভিন্ন সেলিব্রেটিদের কথায় প্রভাবিত হয়ে অনেকে হঠাৎ করেই শুরু করে দেন এই ডায়েট। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদে এই ডায়েট উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি করে।
ডিটক্স ডায়েট মূলত শরীর থেকে ‘বিষাক্ত উপাদান’ বের করে দেওয়ার নামে কিছু নির্দিষ্ট সময়ের খাদ্যাভ্যাস। এতে সাধারণত থাকে কম ক্যালোরির ফল, সবজি, জুস, হারবাল চা বা কিছু সাপ্লিমেন্ট। কিন্তু সমস্যা হলো, আমাদের শরীর তো এমনিতেই লিভার, কিডনি ও পরিপাকতন্ত্রের মাধ্যমে নিয়মিত ডিটক্সিফিকেশন করে। সেখানে বাড়তি চাপ দিলে শরীরের ভারসাম্যই নষ্ট হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নিচের ১০টি দিক থেকেই ডিটক্স ডায়েট হতে পারে বিপজ্জনক।
ডিটক্স ডায়েটের ১০টি বিপজ্জনক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:
১. পুষ্টির ঘাটতি:
এই ডায়েটে প্রোটিন, চর্বি বা কার্বোহাইড্রেট প্রায় বাদই দেওয়া হয়। এতে ভিটামিন বি১২, আয়রন, ক্যালসিয়াম ও ওমেগা-৩-এর অভাব হতে পারে।
২. দুর্বলতা ও ক্লান্তি:
খুব কম ক্যালোরি গ্রহণের ফলে শরীর সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। মাথা ঘোরা, ক্লান্তি, মনোযোগ কমে যাওয়া—এসব সাধারণ সমস্যা।
৩. পেশি কমে যাওয়া:
প্রোটিন না পেলে শরীর তার শক্তির প্রয়োজন মেটাতে পেশি ভাঙতে শুরু করে। এতে মেটাবলিজমও কমে যায়।
৪. হজমের সমস্যা:
জুস বা তরল-ভিত্তিক ডায়েটে ফাইবার থাকে না। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। আবার কেউ কেউ হারবাল ল্যাক্সেটিভে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন, যা বিপজ্জনক।
৫. রক্তে শর্করার তারতম্য:
শুধু ফল বা জুস খেলে রক্তে গ্লুকোজ হঠাৎ বেড়ে যায়, আবার দ্রুত কমেও যায়। এতে মাথা ধরার মতো সমস্যাও হতে পারে।
৬. ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্যহীনতা:
ডিটক্স চা বা ল্যাক্সেটিভ ব্যবহারে শরীর থেকে প্রচুর সোডিয়াম-পটাশিয়াম বেরিয়ে যায়। হৃদযন্ত্রের জন্য তা ঝুঁকিপূর্ণ।
৭. মানসিক চাপ:
খুব বেশি নিয়ন্ত্রিত ডায়েটে মানসিক চাপ, খিটখিটে মেজাজ বা খাওয়ার প্রতি অতিরিক্ত মনোযোগ তৈরি হয়।
৮. পানিশূন্যতা:
কিছু ডিটক্স ডায়েট ডাইরেটিকের মতো কাজ করে, যার ফলে শরীরে পানির ঘাটতি হয়। এতে মাথা ঝিমঝিম করা বা রক্তচাপ কমে যেতে পারে।
৯. সাময়িক ওজন কমে, দ্রুত ফিরে আসে:
এই ডায়েট মুলত পানি ও পেশি কমায়, চর্বি নয়। ফলে ডায়েট বন্ধ করলেই ওজন ফেরত আসে—কখনো তার চেয়েও বেশি!
১০. লিভার-কিডনির ওপর অতিরিক্ত চাপ:
কিছু হারবাল সাপ্লিমেন্ট বা ওষুধ লিভার-কিডনিকে অতিরিক্ত কাজ করতে বাধ্য করে। এতে সেগুলোর ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে।
ডিটক্স ডায়েট শুরু করার আগে ভালোভাবে ভেবে দেখুন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এমন কিছু না করাই ভালো। বরং নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত পানি পান, ঘুম, এবং ফাইবারযুক্ত খাবার গ্রহণ করলেই আপনার শরীর নিজেই ডিটক্স করবে—একদম প্রাকৃতিক উপায়ে!
মিমিয়া