
ছবিঃ সংগৃহীত
একটি সস্তা এবং বহুল ব্যবহৃত ডায়াবেটিসের ওষুধ, মেটফর্মিন — যেটিকে অনেক চিকিৎসকই "অলৌকিক ওষুধ" বলে থাকেন — নতুন গবেষণায় কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক হিসেবে সম্ভাবনা দেখিয়েছে।
গত সপ্তাহে শিকাগোতে আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর ক্যান্সার রিসার্চ সম্মেলনে এই নিয়ে আলোচনার সময় ওহায়ো স্টেট ইউনিভার্সিটির ক্যান্সার গবেষক হোলি লুমান্স-ক্রপ বলেন, “মেটফর্মিন একটি সম্পূরক চিকিৎসা হিসেবে কার্যকর হতে পারে বলেই আমাদের ধারণা। এটি নতুন কিছু সম্ভাবনার দরজা খুলে দিচ্ছে।”
মেটফর্মিন কিভাবে কাজ করতে পারে?
মেটফর্মিন সাধারণত ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ব্যবহৃত হয়, কারণ এটি শরীরের শর্করা প্রক্রিয়াকরণের পদ্ধতিকে পরিবর্তন করে। তবে, এটি ক্যান্সারের ক্ষেত্রেও আশাব্যঞ্জক ভূমিকা রাখতে পারে বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা।
পুরোনো গবেষণাগুলো দেখিয়েছে, যারা ডায়াবেটিসে মেটফর্মিন খাচ্ছেন, তাদের মধ্যে কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার হার তুলনামূলকভাবে কম। এই নতুন গবেষণাটি প্রথমবারের মতো দেখছে, মেটফর্মিন ক্যান্সার হওয়ার পরে সেটির কোষগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে কি না।
সহজলভ্য ও কম খরচের ওষুধ, কিন্তু শক্তিশালী ভূমিকা?
এই গবেষণায় গবেষকরা ল্যাবরেটরির পাত্রে ক্যান্সার কোষের ওপর মেটফর্মিনের প্রভাব বিশ্লেষণ করছেন। এখনই এটিকে এককভাবে ক্যান্সার চিকিৎসার বিকল্প হিসেবে ভাবা হচ্ছে না, তবে অন্য চিকিৎসার সঙ্গে মিলিয়ে এটি কার্যকর সম্পূরক হিসেবে কাজ করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিশেষ করে KRAS নামে একটি জিনের কারণে হওয়া একধরনের কোলন ক্যান্সার—যেটি সাধারণত চিকিৎসায় সাড়া দেয় না—তার বিরুদ্ধে মেটফর্মিন বিশেষ কার্যকর হতে পারে বলে আশা করছেন লুমান্স-ক্রপ।
শরীরের শক্তি ব্যবহার বদলে দিয়ে ক্যান্সার কোষে আঘাত
মেটফর্মিন শরীরে এক ধরনের কোষ-পরিষ্কার প্রক্রিয়া (autophagy) সক্রিয় করে, যেটি শরীরকে পুরনো বা ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলো দূর করতে সহায়তা করে। এই প্রক্রিয়াটি অনাহার বা ব্যায়ামের মতোই শরীরের শক্তি ব্যবহারের ধরণ পাল্টায়। গবেষকদের বিশ্বাস, এই শক্তির প্রবাহ পাল্টানোর মাধ্যমে মেটফর্মিন ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিকে থামাতে পারে।
লুমান্স-ক্রপ বলেন, “যদি মেটফর্মিন কোষের শক্তি ব্যবহারের উপায় বদলাতে পারে, তাহলে তা কোষ বিভাজনের গতিও বদলাতে পারে—আর এটাই আমরা চিকিৎসায় কাজে লাগাতে চাই।”
পরবর্তী ধাপ কী?
গবেষণাটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এর পর পশুদের উপর পরীক্ষা হবে এবং সফল হলে শুরু হবে মানবদেহে ক্লিনিকাল ট্রায়াল।
বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষ বহু বছর ধরে এই ওষুধটি নিরাপদে ব্যবহার করেছেন। মাত্র ১০ থেকে ২০ পয়সা দামের এই ওষুধ যদি সত্যিই ক্যান্সার চিকিৎসায় সহায়ক প্রমাণিত হয়, তবে তা হতে পারে বিশ্বের লাখো মানুষের জন্য এক বিশাল আশার আলো।
লুমান্স-ক্রপের আশা, আগামী এক বছরের মধ্যে পশুদের ওপর পরীক্ষা শুরু করা সম্ভব হবে।
মারিয়া