
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে শরীরের প্রতিটি অঙ্গ ঝুঁকিতে পড়ে, তার মধ্যে যকৃত সবচেয়ে নীরব ক্ষতির শিকার হয়। ইনসুলিনের ঘাটতি অথবা কার্যকারিতার অভাবে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে গেলে লিভারে চর্বি জমা হয়, ফিল্টারিং ক্ষমতা কমে যায় এবং বিষাক্ত বর্জ্য রক্তে ফিরে আসে। এর ফলেই দেখা দেয় কিছু সূক্ষ্ম কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ উপসর্গ। এগুলো সময়মতো শনাক্ত করতে পারলে মারাত্মক জটিলতা এড়ানো সম্ভব।
অস্বাভাবিক ক্লান্তি
দিনের শেষে হালকা ক্লান্তি স্বাভাবিক, তবে ঘুম ও বিশ্রামের পরও যদি অবসাদ পিছু ছাড়ে না, সেটা লিভার ক্ষতির প্রথম সংকেত হতে পারে। যকৃত সঠিকভাবে কাজ না করলে রক্তে জমা হওয়া টক্সিন স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা নষ্ট করে দেয়, ফলে শরীর বিরতিহীন ক্লান্তি অনুভব করে। ডায়াবেটিক রোগীদের অতিরিক্ত গ্লুকোজ ও চর্বি পরিচালনায় লিভারের বাড়তি চাপ এই অবসাদ আরও বাড়িয়ে তোলে।
চামড়া এবং চোখের সাদা অংশ হলুদ হওয়া
লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হলে বিলিরুবিন রক্তে জমে গিয়ে ত্বক ও চোখকে হলুদ করে তোলে, যাকে আমরা জন্ডিস নামে চিনি। ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তির জন্ডিস দ্রুত চিকিৎসা জরুরি, কারণ এটি গুরুতর লিভার কর্মহীনতার ইঙ্গিত দেয়। অবশ্য জন্ডিসের সব কারণই ডায়াবেটিসের সঙ্গে যুক্ত নয়, তাই উপসর্গ দেখলেই বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে।
পেটের ডান দিকে ব্যথা ও ফোলা
যকৃত ফ্যাট জমে বড় হলে বা দাগ-শিরা তৈরি হয়ে কড়া হয়ে গেলে পেটের ডান পাশে ব্যথা অনুভূত হয়। রোগের পরবর্তী ধাপে পেটে তরল জমে ফোলাভাব বা অ্যাসাইটিস দেখা দেয়, যা সিরোসিসের লক্ষণ। ব্যথা বা অস্বস্তি অবহেলা করলে জটিলতা দ্রুত বাড়তে পারে।
গাঢ় রঙের প্রস্রাব এবং ফ্যাকাশে মল
লিভার সুস্থ থাকলে বিলিরুবিন কেবল মলে মিশে বাদামি রঙ তৈরি করে। লিভার আক্রান্ত হলে অতিরিক্ত বিলিরুবিন প্রস্রাবে বেরিয়ে তা গাঢ় বাদামি বা অ্যাম্বার রঙের হয়, একই সময়ে মলের রঙ হয়ে পড়ে ফ্যাকাশে বা ধূসর। দুই ক্ষেত্রই ইঙ্গিত দেয় যে যকৃত নষ্ট হচ্ছে, এবং দ্রুত স্বাস্থ্যপরীক্ষা প্রয়োজন।
ক্ষুধামান্দ্য ও অজানা ওজন কমে যাওয়া
যকৃত বিপর্যস্ত হলে হজম-প্রক্রিয়া ও মেটাবলিজম ব্যাহত হয়। এতে ক্ষুধা কমে যায়, বমিভাব আসতে পারে, সামান্য খাবারেই পেট ভরা মনে হয়। ফল হিসেবে শরীর দ্রুত ওজন হারায় ও পেশিশক্তি ক্ষয় হয়। ডায়াবেটিসে এমন পুষ্টিহীনতা রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণকে আরও দুর্বল করে তোলে, যা নতুন জটিলতার দ্বার খুলে দেয়।
শরীর নিজেই সংকেত দেয়; সেই ভাষা বুঝে আগেভাগে চিকিৎসকের শরণ নিলেই জটিলতা ঠেকানো সম্ভব। ডায়াবেটিস থাকলে নিয়মিত লিভার ফাংশন পরীক্ষা এবং সুস্থ জীবনযাপন আপনার নিরাপত্তার প্রথম লাইন। চিকিৎসা, সুষম খাদ্য ও ভারসাম্যপূর্ণ ব্যায়ামই পারে যকৃতকে কর্মক্ষম ও আপনাকে সুস্থ রাখতে। তাই আজই উদ্যোগ নিন, কারণ সচেতনতা মানেই দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষা।
সূত্র:https://tinyurl.com/4ar7s9ee
আফরোজা