
কোরবানির ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে, ততই ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের কামারপাড়ার কারিগররা। ঈদের কোরবানির জন্য প্রয়োজনীয় দা, বটি, চাপাতি ও ছুরি তৈরিতে এখন দিনরাত কাজ করছেন তারা। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত টুংটাং শব্দে মুখর কামারপল্লীগুলো।
উপজেলার সোহাতা, ভোলাচং, কাদৈর, শ্রীঘর ও ভেলানগর এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, আগুনের লোহায় হাতুড়ির বাড়ি আর ছেনির টোকায় সরগরম কামারদের দোকান। কারিগরদের চোখেমুখে ক্লান্তি থাকলেও কোরবানির ঈদকে ঘিরে কাজের ব্যস্ততায় প্রাণচাঞ্চল্য লক্ষ্য করা গেছে।
সোহাতার রুবেল কর্মকার বলেন, “ঈদুল আজহার আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। ঈদকে সামনে রেখে আমাদের নিঃশ্বাস ফেলার সময় নেই। এক মাস আগে থেকেই কাজ শুরু করেছি। এখন গভীর রাত পর্যন্ত কামাররা একনাগাড়ে কাজ করছে।”
কারিগররা জানান, লোহা, কয়লা ও শ্রমিকের খরচ বেড়ে যাওয়ায় জিনিসপত্রের দাম কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে পশুর চামড়া ছাড়ানো ছুরি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ২০০ টাকা, দা ২০০ থেকে ৩৫০, বটি ২৫০ থেকে ৫০০, পশু জবাইয়ের ছুরি ৩০০ থেকে ১ হাজার এবং চাপাতি ৫০০ থেকে ৮০০ টাকায়। দুই মাস আগেও প্রতি বস্তা কয়লা পাওয়া যেত ৪০০-৪৫০ টাকায়, এখন তা কিনতে হচ্ছে ৮০০-৮৫০ টাকায়।
বয়োজ্যেষ্ঠ এক কামার জানান, “এই পেশায় এখন তেমন আয় নেই। জ্বালানি, কাঁচামাল ও শ্রমের খরচের তুলনায় লাভ কম। তারপরও বাপ-দাদার এই পেশা মায়ায় ফেলেছে। বছরের ১০ মাস কষ্ট হলেও ঈদের এই এক মাসই কিছুটা স্বস্তির।”
বিভিন্ন হাটবাজারে ঘুরে দেখা গেছে, দা-বটি-ছুরি কিনতে বাড়ছে ভিড়। ক্রেতারা বলছেন, “ঈদের সময় কসাই পাওয়াই মুশকিল হয়ে পড়ে। তাই নিজেরাই পুরনো দা, চাপাতি শান দিয়ে নিচ্ছি। অনেকে নতুন বটি, ছুরি কিনছেনও।” তবে অনেকের অভিযোগ, ঈদ উপলক্ষে দামের বাড়তি চাপে তারা কিছুটা অসন্তুষ্ট।
এক নজরে নবীনগরের কামার শিল্পের ঈদ প্রস্তুতি:
-
প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ
-
পণ্যের চাহিদা দ্বিগুণ
-
কয়লা-শ্রমিকের মূল্যবৃদ্ধিতে বেড়েছে জিনিসের দাম
-
কামাররা নিজেরাই হাটে পণ্য বিক্রি করছেন
-
ঈদের ২-৩ দিন আগে বেচাকেনা হয় সর্বোচ্চ
নবীনগরের কামারদের কষাঘাতে ঈদের প্রস্তুতি পুরোদমে চলছে। এই ঐতিহ্যবাহী শিল্পের প্রাণ যেন আবার ফিরে পায় ঈদের আমেজে। এখন কামারপাড়ার কারিগরদের একটাই চাওয়া সবার ঘরে কোরবানির হাসি থাকুক, তাদের হাতের তৈরি সরঞ্জামেই হোক ঈদের উৎসব সফল।
মিমিয়া