ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৮ মে ২০২৫, ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

জাদুকরী পা নাকি লাকি চার্ম? ফুটবলারদের অদেখা বিশ্বাস

সুমাইয়া নৌমি, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, ঢাকা

প্রকাশিত: ১০:৫১, ২৬ মে ২০২৫

জাদুকরী পা নাকি লাকি চার্ম? ফুটবলারদের অদেখা বিশ্বাস

ছবি: সংগৃহীত

প্রত্যেকটি মানুষেরই কিছু নিজস্ব বিশ্বাস, ধ্যান ধারণা থাকে। এইসব অতিরঞ্জিত সংস্কার কখনো আমাদের কাছে হয়ে ওঠে কুসংস্কার - অন্ধবিশ্বাস।

ফুটবলও এইসব কুসংস্কারের বাইরে নয়। অনিশ্চয়তা, নাটকীয়তা আর আবেগের অনন্য মিশ্রন ফুটবল নানান সংস্কার-কুসংস্কারে জড়িয়ে আছে। খেলোয়াড় থেকে শুরু করে কোচ, এমনকি সমর্থকরাও বিশ্বাস করেন যে কিছু নির্দিষ্ট আচার-অনুষ্ঠান বা অভ্যাস ম্যাচের ফলাফলকে প্রভাবিত করতে পারে।

কোনো কোনো ফুটবলার এটা স্বীকার করেন, আর অনেকেই নীরবে পালন করেন এবং বিশ্বাস করেন যে নির্দিষ্ট কিছু অভ্যাস বা বস্তু তাদের পারফরম্যান্সে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে আবার কিছু অজান্তেই নেতিবাচক প্রভাব ফেলে যায়।

আজ তবে কিছু বিখ্যাত ফুটবলারদের কুসংস্কার সম্পর্কে জানা যাক।

পেলে: একবার পেলে তার জার্সি এক ভক্তকে উপহার দিয়েছিলেন। এরপরই তিনি ফর্মহীনতায় ভুগতে শুরু করেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে সেই জার্সির সঙ্গেই তার গোল করার সৌভাগ্যও চলে গেছে। পরে এক বন্ধুর মাধ্যমে সেই জার্সি ফিরে পাওয়ার পর তিনি আবার ফর্ম ফিরে পান। মজার ব্যাপার হলো, তার বন্ধু আসলে আসল জার্সিটি খুঁজে পাননি, একই রকম দেখতে আরেকটি জার্সি তাকে দিয়ে দিয়েছিলেন। ঐযে বিশ্বাসে মিলায় বস্তু....

ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো: তিনি বিমানে চড়ে কোথাও খেলতে গেলে, বিমান থেকে নেমে সবসময় আগে ডান পা মাটিতে রাখেন। যেভাবে ফ্রি-কিক নেওয়ার আগে তার ডান পা সামনে থাকে, ঠিক সেভাবেই। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে খেলার সময় তিনি মাঠে নামার আগে টানেল থেকে সবার পরে বের হতেন। কিন্তু ঠিক উল্টোটা করে পর্তুগাল জাতীয় দলের হয়ে খেলার সময়। সেখানে সবসময় সবার আগে মাঠে নামেন তিনি!

ব্রাজিলের রোনালদো নাজারিও: ব্রাজিলিয়ান এই ফেনোমেননের কিছু কুসংস্কারের মধ্যে একটি ছিল মাঠে নামার সময় সবসময় প্রথমে ডান পা ফেলা। শুধু রোনালদো নন এই কুসংস্কার মেনে চলতেন আরেক ব্রাজিলিয়ান তারকা ফুটবলার রবার্তো কার্লোসও।

ইকার ক্যাসিয়াস: রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক গোলরক্ষক ক্যাসিয়াস তার জার্সির হাতা কেটে ফেলতেন, কখনো উল্টো করে মোজা পরতেন। তিনি গোল লাইন পর্যন্ত তার এলাকায় বাঁ পা দিয়ে দাগ টেনে চিহ্ন দিয়ে রাখতেন। যখনই তার দল গোল করতো, তখন তিনি গোল মুখে ফিরে এসে ছোট একটা লাফ দিতেন। তার দাবি ছিল, এগুলো তাকে হাতেনাতে ফল দিতো।

জন টেরি: চেলসির সাবেক অধিনায়ক জন টেরি অত্যন্ত কুসংস্কার প্রবণ ছিলেন। তিনি ম্যাচের আগে প্রায় ৫০টির মতো নির্দিষ্ট অভ্যাস মেনে চলতেন। যেমন: টিম বাসে নির্দিষ্ট একটি সিটে বসা, মোজার চারদিকে তিনবার টেপ জড়ানো, স্টেডিয়ামে যাওয়ার পথে একই সিডি বাজানো এবং একটি নির্দিষ্ট শিনগার্ড ১০ বছর ধরে ব্যবহার করা, সবসময় একই ইউরিনাল ব্যবহার করা, এছাড়াও লাল রঙ সর্বদা এড়িয়ে চলতেন তিনি।

ববি মুর: ইংলিশ কিংবদন্তি ববি মুর মাঠে নামার আগে ড্রেসিং রুমে সবার শেষে শর্টস পরতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, এটা তার খেলায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

গ্যারি লিনেকার: এই কিংবদন্তি ইংলিশ স্ট্রাইকার ওয়ার্ম-আপ বা অন্য কোনো অগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে কখনোই গোলে শট নিতেন না। তিনি বিশ্বাস করতেন, তার ভাগ্যে বরাদ্দকৃত মোট গোলের সংখ্যা সীমিত নির্ধারিত, তাই অনুশীলনে গোল করলে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের গোল সংখ্যায় টান পড়বে।

রিয়াল মাদ্রিদ: দলগতভাবে রিয়াল মাদ্রিদেরও কিছু কুসংস্কার আছে। যেমন: শিরোপা জয়ের পর কীভাবে উদযাপন করবে তা তারা গোপন রাখে। কোনো ফুটবলার সংবাদ সম্মেলনে আসার পর যদি রিয়াল ম্যাচ হারে, তাহলে সেই মৌসুমে তাকে আর সংবাদ সম্মেলনে পাঠানো হয় না। তারা নির্দিষ্ট একজন অ্যানাউন্সারকে 'লাকি' মনে করে এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে তাকে রাখে। টনি ক্রুস দলীয় বাস থেকে সবার শেষে নামেন।

লিওনেল মেসি: কুসংস্কারে বিশ্বাস থেকে বাদ যাননি ফুটবল জাদুকর মেসিও। সতীর্থ রদ্রিগো ডি পলের সাথে মেসির একটি বিশেষ কুসংস্কার আছে। তারা সকাল :৩০ মিনিটে মেসির হোটেলের ঘরে একসাথে একটি পানীয় পান করেন। এমনকি একবার তাতে দেরী করে ফেলেছিলো পল। আবার ফ্রি কিক নেওয়ার আগে মেসি বলটিকে উভয় হাতে ধরে রাখেন। প্রতিটি গোলের পর তার বিয়ের আংটিতে চুমু খান। এছাড়াও মেসি মাঠের সাদা রেখায় পা দিতে পছন্দ করেন না।

জার্সি পরার কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম, মাঠে ঢোকার সময় বিশেষ পা আগে ফেলা অথবা ম্যাচের আগে একই খাবার খাওয়াএমন অসংখ্য কুসংস্কার ফুটবলের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। এসব বিশ্বাস অনেক সময় খেলোয়াড়দের মানসিক শক্তি যোগায়, আবার কখনো কখনো তো হাস্যরসের খোরাকও হয়। কিন্তু এবার প্রশ্ন হলো, এই কুসংস্কারগুলো কি সত্যিই কাজ করে, নাকি পুরোটাই কাকতালীয়? উত্তরটা না হয় আপনারাই বলুন।

মুমু

×