
ছবি: সংগৃহীত
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ শুধু ওষুধের উপর নির্ভর করে না, বরং খাদ্যাভ্যাস এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ডায়াবেটিকদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর একটি হলো খাবারের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI)। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ও আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন (ADA) দু’টো প্রতিষ্ঠানই উচ্চ GI-যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে, কারণ এসব খাবার রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দিতে পারে। উচ্চ GI-যুক্ত খাবার খুব দ্রুত চিনিতে রূপান্তরিত হয়, যা টাইপ-১ ও টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
সতর্কতা ও সচেতনতার মাধ্যমে উচ্চ GI-যুক্ত খাবার চিহ্নিত করে তার স্বাস্থ্যকর বিকল্প বেছে নেওয়াই রক্তে চিনি নিয়ন্ত্রণে রাখার মূল কৌশল।
শডায়াবেটিসে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কেন গুরুত্বপূর্ণ
গ্লাইসেমিক ইনডেক্স একটি স্কেল যা ০ থেকে ১০০ পর্যন্ত কার্বোহাইড্রেটসমৃদ্ধ খাবারগুলোকে র্যাঙ্ক করে, যেগুলো রক্তে গ্লুকোজ কত দ্রুত বাড়ায় তা বিবেচনা করে। ৭০ বা তার বেশি GI-যুক্ত খাবার রক্তে গ্লুকোজ হঠাৎ করে অনেকটা বাড়িয়ে দেয়, ফলে ইনসুলিনের প্রয়োজনীয়তা বেড়ে যায়। দীর্ঘমেয়াদে এটি ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়ায় এবং ডায়াবেটিস-সম্পর্কিত জটিলতার ঝুঁকি অনেক গুণ বাড়িয়ে দেয়।
GI নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ডায়াবেটিস রোগীরা রক্তে চিনির মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে পারেন এবং দীর্ঘমেয়াদি বিপাকীয় (মেটাবলিক) স্বাস্থ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারেন।
এই ৭টি উচ্চ GI-যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা জরুরি ডায়াবেটিকদের জন্য
১. সাদা পাউরুটি
পরিশোধিত ময়দা দিয়ে তৈরি সাদা পাউরুটির GI প্রায় ৭৫। এতে প্রায় কোনও ফাইবার বা পুষ্টি উপাদান থাকে না, ফলে এটি দ্রুত রক্তে চিনি বাড়িয়ে তোলে। বিকল্প হিসেবে বেছে নিন হোলগ্রেইন বা মাল্টিগ্রেইন পাউরুটি।
২. চিনি মেশানো ব্রেকফাস্ট সিরিয়াল
কর্নফ্লেক্স ও ফুঁপিয়ে তোলা চালভাজা সিরিয়ালগুলোর GI ৮০ বা তার বেশি। এগুলো সহজে রক্তে চিনির মাত্রা বাড়ায়। বদলে খান উচ্চ ফাইবারযুক্ত ওটস বা চিনি ছাড়া মুসলি।
৩. সাদা ভাত
পরিষ্কার পালিশ করা সাদা ভাতের GI ৭০-এর বেশি, বিশেষ করে বেশি রান্না হলে। এটি খাওয়ার পর রক্তে গ্লুকোজ অনেকটা বেড়ে যেতে পারে। পরিবর্তে ব্রাউন রাইস, কোয়িনোয়া বা দেশি মিলেৎ (যেমন বাজরা, জোয়ার) অনেক ভালো বিকল্প।
৪. আলু (বিশেষ করে ম্যাশ বা বেক করা)
আলুতে প্রাকৃতিকভাবে উচ্চমাত্রায় স্টার্চ থাকে। ম্যাশড পটেটোর GI ৮৫ বা তার বেশি। বিকল্প হিসেবে মিষ্টি আলু খান বা সেদ্ধ আলু খান, তবে তা যেন ফাইবারযুক্ত খাবারের সঙ্গে খাওয়া হয়।
৫. সফট ড্রিংক ও প্যাকেটজাত ফলের রস
এসব পানীয়তে প্রচুর চিনি থাকে এবং কোনও ফাইবার থাকে না, ফলে রক্তে চিনির মাত্রা হঠাৎ বেড়ে যায়। এদের GI ৭৫-এর ওপরে। ডায়াবেটিকদের জন্য নিরাপদ পানীয় হলো পানি, চিনি ছাড়া হারবাল চা বা পাতিলেবু মেশানো হালকা পানি।
৬. সাদা পাস্তা
পরিশোধিত ময়দা দিয়ে তৈরি পাস্তা দ্রুত হজম হয়ে রক্তে গ্লুকোজ বাড়িয়ে দেয়। GI অনেক বেশি থাকে, যদি না ফাইবার ও প্রোটিনের সঙ্গে খাওয়া হয়। হোল হুইট পাস্তা বা ঝুচিনি (zucchini) নুডলস স্বাস্থ্যকর বিকল্প।
৭. তরমুজ
যদিও তরমুজ পুষ্টিকর, তবে এর GI প্রায় ৭৬। জলীয় অংশ বেশি থাকায় গ্লাইসেমিক লোড তুলনামূলক কম হলেও বেশি পরিমাণে খাওয়া রক্তে চিনি বাড়িয়ে দেয়। অল্প পরিমাণে খাওয়া উচিত এবং তা যেন প্রোটিনের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ হয়।
উচ্চ GI খাবারের প্রতি আকর্ষণ কমানোর কিছু কৌশল
১. উচ্চ GI-যুক্ত খাবার প্রোটিন বা ফাইবারের সঙ্গে খেলে রক্তে চিনি ধীরে বাড়ে।
২. স্টার্চযুক্ত খাবার কম রান্না করুন, বেশি সময় রান্না করলে GI বেড়ে যায়।
৩. “প্লেট পদ্ধতি” অনুসরণ করুন: অর্ধেক সবজি, এক চতুর্থাংশ প্রোটিন, আর এক চতুর্থাংশ পূর্ণ শস্য।
৪. কোন খাবারে শরীর কেমন প্রতিক্রিয়া দিচ্ছে তা বোঝার জন্য ফুড ডায়েরি রাখুন।
পরিশেষে, গ্লাইসেমিক ইনডেক্স সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং দৈনন্দিন খাবারে তার প্রভাব বুঝে খাবার বেছে নেওয়া ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই উচ্চ GI-যুক্ত খাবারগুলো এড়িয়ে চললে ডায়াবেটিকরা রক্তে চিনির মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে পারবেন এবং দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা এড়াতে সক্ষম হবেন।
আবির