
ছবি: সংগৃহীত
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় গত ৪৮ ঘণ্টায় সাত মাস থেকে ১২ বছর বয়সী অন্তত ১১ জন শিশু নিহত হয়েছে। শিশুদের মৃত্যুর পাশাপাশি দুর্ভিক্ষে মারা যাচ্ছে আরও অনেকে।
শনিবার রাতে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছে ১১ বছর বয়সী গাজার সর্বকনিষ্ঠ ইনফ্লুয়েন্সার ইয়াকিন হাম্মাদ। দেইর আল-বালাহ শহরের আল-বারাকা এলাকায় হামলার সময় ইয়াকিন ও তার বড় ভাই মোহাম্মদ হাম্মাদ নিহত হন। তারা গাজায় আশ্রয়হীন পরিবারের মাঝে খাবার, খেলনা ও পোশাক বিতরণ করতেন এবং ওয়েনা কালেক্টিভ নামে একটি মানবিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
ইয়াকিনের মৃত্যুর পর সামাজিক মাধ্যমে শোক ও শ্রদ্ধা জানিয়েছেন অসংখ্য অনুসারী, সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীরা। এক ফটোসাংবাদিক লিখেছেন, "তার দেহ হয়তো চলে গেছে, কিন্তু তার প্রভাব মানবতার এক দীপ্ত আলো হয়ে রয়ে গেছে।"
এছাড়া রবিবার ক্ষুধায় মারা যায় চার বছর বয়সী মোহাম্মদ ইয়াসিন। ভিডিওতে দেখা গেছে, গাজার সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল তার নিথর দেহ কোলে নিয়ে বলছেন, “মোহাম্মদ ক্ষুধায় মারা গেছে—এই দখলদারিত্ব ও অবরোধের সরাসরি ফল।”
অন্যদিকে, দক্ষিণ গাজার শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আলা আমির আল-নাজ্জারের বাড়িতে শুক্রবার চালানো ইসরায়েলি হামলায় তার ১০ সন্তানের মধ্যে ৯ জন নিহত হয়। বেঁচে থাকা ১১ বছর বয়সী সন্তান আদাম বর্তমানে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। নিহত সন্তানদের বয়স সাত মাস থেকে ১২ বছরের মধ্যে।
ডা. নাজ্জারের স্বামীও হামলায় মারাত্মক আহত হয়ে একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পেডিয়াট্রিক বিভাগ প্রধান আহমাদ আল-ফাররার ভাষ্য অনুযায়ী, "এই ঘটনা বিশ্বাসযোগ্য নয়। একজন মা যখন নিজের ৯ সন্তানের মৃত্যুর খবর শুনেন, তখন তার মানসিক অবস্থা কল্পনাতীত। তবু তিনি স্বামী ও জীবিত সন্তানের পাশে থাকার চেষ্টা করছেন।"
ইসরায়েলের প্রায় তিন মাসের অবরোধে খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধ প্রবেশ বন্ধ রয়েছে, ফলে হাজার হাজার শিশু চরম অপুষ্টি ও মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (WFP) মতে, ৭০,০০০ শিশুর অবস্থা আশঙ্কাজনক।
গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত নিহত ফিলিস্তিনিদের ৩১ শতাংশই শিশু। তবে অনেক মৃত্যুর তথ্য এখনও নিশ্চিত করা যায়নি, ফলে প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।
জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বারবার বিমান হামলা চালিয়ে শিশুদের ওপর অতি মাত্রায় সহিংসতা চালাচ্ছে।
সূত্র: আল জাজিরা