ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৬ মে ২০২৫, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

রাজনীতির বলি ভূমিহীনরা

সাটুরিয়া মুন্নু আবাসন প্রকল্পের দুর্দশা

নিজস্ব সংবাদদাতা, সাটুরিয়া, মানিকগঞ্জ

প্রকাশিত: ২১:৫১, ২৫ মে ২০২৫

সাটুরিয়া মুন্নু আবাসন প্রকল্পের দুর্দশা

.

২৩ বছর আগে ভূমি ও গৃহহীনদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে নির্মিত মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার বরাইদ ইউনিয়নের মুন্নু আবাসন প্রকল্প আজ জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। টিনশেডের ঘরগুলো দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে অর্ধশতাধিক পরিবার বাসস্থান ছেড়ে চলে গেলেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এখনও ১৮টি পরিবারের অন্য কোনো বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় সেখানে বাসবাস করছে। ২০০২ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকারের সময় এই আশ্রয়ণ প্রকল্প চালু হয়। স্থানীয় সংসদ সদস্য হারুনার রশিদ খান মুন্নুর উদ্যোগে ১.৬৫ একর জমিতে নির্মিত এ প্রকল্পে ৭টি সারিতে ছোট ছোট ৭০টি ঘর তৈরি করা হয়। প্রতিটি সারিতে ছিল ১০টি কক্ষ, বিশুদ্ধ পানির জন্য টিউবওয়েল এবং শৌচাগার, গোসলখানা, এমনকি একটি কমিউনিটি সেন্টারও। প্রকল্পের নামকরণ হয় মুন্নু আবাসন।
মুন্নু আবাসনের বর্তমানের ঘরগুলোর চালা ভেঙে পড়েছে, দেওয়ালে ফাটল, টিউবওয়েল অকেজো, শৌচাগার ব্যবহারের অনুপযোগী। ফলে বসবাসকারীদের দৈনন্দিন জীবন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ। পলিথিন দিয়ে চালা ঢেকে কোনোরকমে আশ্রয় নিচ্ছেন তারা।
আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দা রুবি আক্তার বলেন, ঘরের চালা, দরজা-জানালা সব ভেঙে গেছে। বৃষ্টি হলেই পানি পড়ে বিছানায়। সন্তানদের নিয়ে খুব কষ্টে আছি। কেউ খোঁজ নেয় না।
আরেক বাসিন্দা লতিফা আক্তার জানান, শীতের সময় কুয়াশায় কাঁপতে হয় ও বর্ষাকালে বৃষ্টিতে ভিজতে হয়। পলিথিন দিয়ে কোনোরকম ঢেকে থাকি, কিন্তু কষ্টের সীমা নেই।
মুন্নু আবাসনের সভাপতি বোরহান উদ্দিন বলেন, ৭০টি পরিবারের মধ্যে এখন মাত্র ১৮টি পরিবার রয়েছে। বারবার প্রশাসনকে জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি। নিজেরা সামান্য মেরামত করেই টিকে আছি।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ঘরগুলো মেরামতের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করলেও দীর্ঘদিন ধরে কোনো সরকারি বরাদ্দ পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ। বরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী আব্দুল হাই বলেন, ঘরগুলো সংস্কার ছাড়া পরিবারগুলো টিকে থাকতে পারছে না।
সাটুরিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুছ খান মজলিশ মাখন বলেন, শুধু বিএনপি সাংসদের নাম থাকার কারণে বিগত ১৭ বছরে কোনো বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। এটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জঘন্যতম উদাহরণ। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা খলিলুর রহমান মোল্লাহ্ বলেন, সম্প্রতি সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছেন। এ ঘরগুলো মেরামতের বিষয়ে দ্রুত পরিদর্শন করে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
দীর্ঘদিনের অবহেলায় জরাজীর্ণ মুন্নু আবাসন প্রকল্প সংস্কারের অভাবে এখন পরিণত হয়েছে মানবেতর জীবনযাপনের প্রতীক হিসেবে। সংশ্লিষ্ট মহলের আশু পদক্ষেপ ছাড়া এই পরিবারগুলোর দুর্দশার অবসান কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন জানান, মুন্নু আবাসন একটি পুরনো আশ্রয়ণ প্রকল্প। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় ঘরগুলোর অবস্থা অত্যন্ত নাজুক হয়ে পড়েছে। প্রায় দেড় মাস আগে আমি নিজে সরেজমিন পরিদর্শনে যাই এবং প্রকল্পটির করুণ চিত্র দেখি। এরপর স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছি সমস্যাগুলোর একটি বিস্তারিত তালিকা প্রস্তুত করে দ্রুত আমার দপ্তরে জমা দিতে। তালিকা পাওয়ার পর তা পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

×