ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৬ মে ২০২৫, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সারাজীবনের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাবে এক টুকরো জ্বালানি

প্রকাশিত: ০১:৩৪, ২৬ মে ২০২৫

সারাজীবনের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাবে এক টুকরো জ্বালানি

ছবিঃ সংগৃহীত

উন্নত প্রযুক্তি, যন্ত্রচালিত জীবন এবং শিল্প-বাণিজ্যের প্রতিটি স্তম্ভে বিদ্যুতের অবদান অপরিসীম। কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত জীবাশ্ম জ্বালানি পরিবেশের ওপর ফেলছে ভয়াবহ প্রভাব। অতিরিক্ত ব্যবহার হুমকির মুখে ফেলেছে বৈশ্বিক জলবায়ু ও প্রাকৃতিক ভারসাম্যকে। তবে এই সংকট নিরসনে বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি সম্ভাবনাময় এক উপাদান আবিষ্কারের দাবি করেছেন, যা মেটাতে পারে মানুষের সারাজীবনের বিদ্যুৎ চাহিদা

শক্তির জগতে এক বৈপ্লবিক আবিষ্কারের দাবি করেছে চীন। দেশটির ইনার মঙ্গোলিয়ায় অবস্থিত বায়ান ওবো খনিজ খনিতে পাওয়া গেছে বিপুল পরিমাণ থরিয়াম, যা পরমাণু জ্বালানির বিকল্প হিসেবে ভবিষ্যতের শক্তি সংকট মোকাবেলায় কার্যকর হতে পারে। চীনের ভূবিজ্ঞানীদের দাবি, এই একটি খনি থেকেই উৎপাদিত থরিয়াম দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি দেশ হাজার বছর বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে পারে।

থরিয়াম একটি তেজস্ক্রিয় উপাদান যা পারমাণবিক চুল্লিতে ব্যবহার করা যায়। এটি ইউরেনিয়ামের চেয়ে তুলনামূলকভাবে নিরাপদ, কারণ এটি কম তেজস্ক্রিয়তা সৃষ্টি করে এবং দুর্ঘটনার ঝুঁকি কম থাকে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো, থরিয়াম দিয়ে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা সম্ভব নয়, যা এটিকে আরো গ্রহণযোগ্য করে তোলে।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, থরিয়াম সরাসরি ফিশন বিক্রিয়ায় অংশ না নিলেও এটি নিউট্রনের সংস্পর্শে ইউরেনিয়াম-২৩৩ তে রূপান্তরিত হয়। এই ইউরেনিয়াম শক্তিশালী ফিশন বিক্রিয়ার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। একবার শুরু হলে এই চক্র চলতে থাকে দীর্ঘ সময় ধরে।

থরিয়াম-ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি হচ্ছে মল্টেন সল্ট রিয়েক্টর (MSR)। এই প্রক্রিয়ায় থরিয়ামকে গলিত লিথিয়াম ফ্লোরাইডের সঙ্গে মিশিয়ে প্রায় ১৪০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপে উত্তপ্ত করা হয়। এতে তৈরি হয় ধারাবাহিক শক্তি উৎপাদন চক্র, যা ভবিষ্যতের সীমাহীন ও টেকসই জ্বালানির উৎস হতে পারে।

গবেষকদের মতে, বায়ান ওবো খনিতে ১০ লাখ টনের বেশি থরিয়াম মজুদ রয়েছে। চীনে এরকম ২৩৩টি সম্ভাব্য থরিয়াম সমৃদ্ধ অঞ্চল চিহ্নিত করা হয়েছে, যা ইউরেনিয়ামের বর্তমান বৈশ্বিক মজুদের চেয়ে প্রায় ৫০০ গুণ বেশি

যদি এই আবিষ্কার সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়, তবে চীন শক্তি উৎপাদনের ক্ষেত্রে এক নতুন যুগে প্রবেশ করবে। একইসঙ্গে এটি জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর বিশ্বের নির্ভরতা কমিয়ে পরিবেশবান্ধব জ্বালানির এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, থরিয়ামের বাণিজ্যিক ব্যবহার এখনও গবেষণা ও উন্নয়ন পর্যায়ে রয়েছে। তাই সত্যিই এক টুকরো থরিয়াম হয়ে উঠবে কিনা আগামী শতাব্দীর শক্তির বাতিঘর— সেটি সময়ই বলবে।

সূত্রঃ https://youtu.be/YzzkFiKhrB4?si=a9Wm07JY_lBQbUl4

ইমরান

×