ছবি: সংগৃহীত
আজকের দিনে অনেক পরিবারেই ভালোবাসার অভাব নেই, কিন্তু উদ্বেগের পরিমাণও কম নয়। শিশুদের ছোটখাটো সমস্যায় বারবার সাহায্য করাই কি তাদের মানসিকভাবে দুর্বল করে দিচ্ছে? এমন প্রশ্ন তুলছেন শিশু মনোবিজ্ঞানীরা ও বিশেষজ্ঞরা।
প্রখ্যাত মনোরোগ চিকিৎসক ড. ড্যানিয়েল জে. অ্যামেন বলেন, “যদি আমরা শিশুদের জন্য সব কিছু করে ফেলি, তাহলে তারা কখনো নিজের দায়িত্ব নিতে শেখে না।” আজকের অভিভাবকরা হয়তো স্নেহে বেশি আগ্রহী হয়ে পড়েছেন, যার ফলে শিশুরা মানসিকভাবে দৃঢ় হয়ে উঠছে না।
১. সমস্যায় পড়লেই বাঁচানোর অভ্যাস
অনেক বাবা-মা সন্তানদের হোমওয়ার্ক ভুলে গেলে, ঠান্ডার দিনে জ্যাকেট ফেলে এলে সঙ্গে সঙ্গে সমস্যার সমাধান করে দেন। এতে ভালোবাসা আছে ঠিকই, কিন্তু শিশু শেখার সুযোগ হারিয়ে ফেলে। ভুল করলে কী হয়, কীভাবে সমস্যা সমাধান করতে হয়—এসব শেখার দরকার আছে।
২. “বোরিং” লাগলে সঙ্গে সঙ্গে স্ক্রিন
অনেকেই মনে করেন শিশুর বোরিং লাগা মানেই তাকে কিছু একটা দিয়ে ব্যস্ত রাখতে হবে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, বোরিং লাগা শিশুর সৃজনশীলতা তৈরির সুযোগ। অভিভাবকরা যদি বলেন, “তুমি কী করতে চাও?”, তাহলে শিশু নিজের মতো করে ভাবতে শেখে।
৩. “না” বলতে না পারার ফলাফল
আজকাল অনেক পরিবারে শিশুকে খুশি রাখার জন্য সবসময় “হ্যাঁ” বলা হয়। কিন্তু “না” বলার অভ্যাস শেখানো দরকার, কারণ জীবনে সব কিছু পাওয়া যায় না। “না” মানতে শেখা মানেই মানসিক পরিপক্বতা অর্জন।
৪. আবেগ থেকে রক্ষা করা
অনেক বাবা-মা সন্তান দুঃখ পেলে বা কিছু হারালে সঙ্গে সঙ্গে শান্তনা দেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের আবেগিক আশ্রয় দেওয়া শিশুকে দুর্বল করে। তাকে শেখাতে হবে যে জীবনে কষ্ট থাকবেই, কিন্তু সেই কষ্টের সঙ্গেও বাঁচতে জানতে হয়।
৫. দায়িত্ব থেকে দূরে রেখে পারফেকশন চাওয়া
আজকাল অনেক শিশু শুধু শিক্ষাক্ষেত্রে ভালো ফলাফল দিচ্ছে, কিন্তু গৃহস্থালির দায়িত্ব, ভুল থেকে শেখা এসব শেখার সুযোগ পাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রশংসা নয়, পরিশ্রমই শিশুর আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলে।
শিশুদের মানসিকভাবে শক্ত করে গড়ে তুলতে হলে ছোটখাটো সমস্যা মোকাবেলার সুযোগ দিতে হবে, “না” মানতে শেখাতে হবে এবং পারফেক্ট হওয়ার চাপ না দিয়ে শেখার পথে উৎসাহ দিতে হবে। অভিভাবকের ভালোবাসা তখনই পরিপূর্ণ হবে, যখন তা শিশুর ভবিষ্যতের জন্যও সহায়ক হবে।
মুমু
