ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৫ মে ২০২৫, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

গাজায় ডিউটিতে থাকা ডাক্তার মায়ের কাছে পৌঁছাল নিজ সন্তানদের দগ্ধ মরদেহ

প্রকাশিত: ০৭:২৫, ২৫ মে ২০২৫; আপডেট: ০৭:২৭, ২৫ মে ২০২৫

গাজায় ডিউটিতে থাকা ডাক্তার মায়ের কাছে পৌঁছাল নিজ সন্তানদের দগ্ধ মরদেহ

ছবিঃ সংগৃহীত

ডা. আলা আল-নাজ্জার শুক্রবার সকালে নিজের দশ সন্তানকে বাসায় রেখে গিয়েছিলেন গাজার দক্ষিণে খান ইউনুসের নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে ডিউটি করতে।

কিছু ঘণ্টা পর, একই হাসপাতালে যখন কয়েকটি পুড়ে যাওয়া শিশুর মরদেহ নিয়ে আসা হয়, তখন জানা যায়—ওই শিশুরা আর কেউ নয়, তার নিজের সন্তান।

গাজার সিভিল ডিফেন্স এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় তাদের বাড়ি ধ্বংস হয়ে যায় এবং ডা. নাজ্জারের সাত সন্তানের দেহ—যাদের বেশিরভাগই ছিল দগ্ধ—হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। নিহতদের মধ্যে সবচেয়ে বড়টির বয়স ছিল ১২ বছর, আর সবচেয়ে ছোটটি মাত্র তিন। আরও দুটি শিশু—৭ মাস ও দুই বছর বয়সী—ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে ছিল শনিবার সকাল পর্যন্ত।

এই হামলায় তার স্বামী, যিনি নিজেও একজন চিকিৎসক, গুরুতর আহত হন। তাদের একমাত্র জীবিত সন্তান, ১১ বছর বয়সী আদম, আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর দাবি, খান ইউনুসে আইডিএফ সেনাদের পাশে একটি ভবনে সন্দেহভাজনদের লক্ষ্য করে তারা হামলা চালায়। তারা জানিয়েছে, বেসামরিক নাগরিক হতাহতের অভিযোগ তারা পর্যালোচনা করছে।

গাজা সিভিল ডিফেন্স থেকে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, চিকিৎসাকর্মীরা একটি দগ্ধ ব্যক্তিকে স্ট্রেচারে তুলছেন, অন্যরা আগুনে পুড়ে যাওয়া বাড়ির ভেতর থেকে কয়েকটি শিশুর মরদেহ উদ্ধার করছেন এবং সেগুলো সাদা কাপড়ে মুড়ে ফেলছেন।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মুনির আল-বারশ জানিয়েছেন, হামলার সময় ডা. নাজ্জারের স্বামী বাড়িতে ফিরেছিলেন। বারশ বলেন, “তাদের নয় সন্তান নিহত হয়েছে: ইয়াহিয়া, রাকান, রাসলান, জিবরান, ইভ, রিভাল, সায়দেন, লুকমান এবং সিদরা।”

“গাজার স্বাস্থ্যকর্মীদের বাস্তবতা এটাই। কেবল ডাক্তার নয়, পুরো পরিবারই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে,” তিনি বলেন।

অন্য এক চিকিৎসক আহমাদ আল-ফাররা জানান, সন্তানদের হারিয়েও ডা. নাজ্জার হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাচ্ছেন, মাঝে মাঝে স্বামী ও একমাত্র জীবিত সন্তানের অবস্থা খোঁজ নিচ্ছেন।

ডা. নাজ্জার এবং তার স্বামী ও সন্তান—তিনজনই ইতোমধ্যে দুটি করে অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করেছেন।

গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইউসুফ আবু আল-রিশ বলেন, “ডা. নাজ্জার নিজের সন্তানদের রেখে এসেছিলেন সেইসব শিশুদের চিকিৎসা করতে, যাদের বাঁচার আর কোনো জায়গা নেই নাসের হাসপাতাল ছাড়া।”

তিনি আরও বলেন, “আমি যখন হাসপাতালে পৌঁছালাম, তাকে দেখলাম দৃঢ়, শান্ত, ধৈর্যশীল—নীরবে চোখ বন্ধ করে ঈশ্বরের নাম জপ করছেন।”

৩৮ বছর বয়সী ডা. আলা আল-নাজ্জার পেডিয়াট্রিশিয়ান হলেও, চলমান ইসরায়েলি অভিযানে তিনি অন্য চিকিৎসকদের মতোই জরুরি বিভাগে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এই ঘটনা শুধু একটি মায়ের নিদারুণ ব্যক্তিগত শোক নয়, এটি গাজার ধ্বংসস্তূপে প্রতিদিন জন্ম নেওয়া হাজারো শোকের এক প্রতীক।

সূত্রঃ সিএনএন 

নোভা

×