ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৫ মে ২০২৫, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়ছে ৩.২৫ শতাংশ, ইউনিয়নগুলোর আশঙ্কা সংকট কাটবে না

প্রকাশিত: ১১:৩৯, ২৫ মে ২০২৫; আপডেট: ১১:৪০, ২৫ মে ২০২৫

সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়ছে ৩.২৫ শতাংশ, ইউনিয়নগুলোর আশঙ্কা সংকট কাটবে না

সরকারি কর্মচারীদের জন্য চলতি অর্থবছরে গড় বেতন ৩.২৫ শতাংশ বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছে যুক্তরাজ্যের মন্ত্রিপরিষদ দপ্তর। তবে এই ঘোষণা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে দেশটির অসংখ্য বেসামরিক কর্মচারী সংগঠন। তাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিনের বেতন ক্ষয় এবং দক্ষ কর্মী সংকট এই নির্দেশনার মাধ্যমে সমাধান হবে না।

মন্ত্রিপরিষদের পক্ষ থেকে প্রকাশিত ‘২০২৫-২৬ অর্থবছরের বেতন নির্দেশিকা’ অনুযায়ী, প্রতিটি বিভাগ ও সংস্থা নিজ নিজ কাঠামোর ভিত্তিতে কর্মীদের বেতন বৃদ্ধির পরিমাণ নির্ধারণ করতে পারবে। যদিও গড় বৃদ্ধির হার নির্ধারণ করা হয়েছে ৩.২৫ শতাংশ, এই পরিমাণের পাশাপাশি আরও ০.৫ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত ব্যয় বরাদ্দের সুযোগ রাখা হয়েছে। এই অতিরিক্ত বরাদ্দ ব্যয় করা যাবে কম বেতনের কর্মীদের সহযোগিতা, দক্ষতা সংকট মোকাবিলা, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং সরকারের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত কর্মসূচির লক্ষ্যে কাজের স্বীকৃতিতে।

উল্লেখযোগ্যভাবে, সাধারণ গ্রেডের কর্মীদের চেয়ে আলাদা কাঠামোয় বেতন নির্ধারণ হয় সিনিয়র সিভিল সার্ভিস (এসসিএস)-এর সদস্যদের জন্য। এসসিএস সদস্যদের ক্ষেত্রেও ৩.২৫ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়েছে, যা এপ্রিল মাস থেকে কার্যকর হবে। সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে ০.৫ শতাংশের একটি ‘অ্যানোমালি ফান্ড’, যার মাধ্যমে সমান বেতনের অভাব বা দক্ষতা ঘাটতির মতো সংকট মোকাবিলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

তবে সরকার সিনিয়র কর্মীদের জন্য প্রস্তাবিত নতুন বেতন স্কেল সাময়িকভাবে স্থগিত রেখেছে, যাতে আগামীতে একটি বৃহৎ পর্যালোচনার মাধ্যমে বেতন কাঠামোতে ভিত্তিগত সংস্কার আনা যায়।

পাবলিক অ্যান্ড কমার্শিয়াল সার্ভিসেস (পিসিএস) ইউনিয়নের মহাসচিব ফ্রান হিথকোট বলেন, ‘‘প্রাথমিক আলোচনায় সরকার ২.৮ শতাংশ বর্ধিতির প্রস্তাব দিয়েছিল, সেখান থেকে কিছুটা অগ্রগতি হলেও ৩.২৫ শতাংশ এখনকার বাস্তবতায় পর্যাপ্ত নয়। বর্তমান মূল্যস্ফীতি ৩.৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে, অথচ বেতন বাড়ছে তার চেয়েও কম।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘নিম্ন গ্রেডের কর্মীদের ক্ষেত্রে বেতনের সংকোচন আরও প্রকট হচ্ছে। সরকার যে অতিরিক্ত ০.৫ শতাংশ বরাদ্দ রেখেছে, তা হাজার হাজার কর্মচারীর জন্য অত্যন্ত নগণ্য, যাদের অনেকেই ন্যূনতম মজুরির কাছাকাছি আয় করেন।’’

পিসিএস ইউনিয়ন এই প্রস্তাবের ওপর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে শিগগিরই জাতীয় নির্বাহী কমিটির বৈঠক ডেকেছে বলেও জানান হিথকোট।

প্রসপেক্ট ইউনিয়নের ডেপুটি সেক্রেটারি স্টিভ থমাস- যারা বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিবিদদের প্রতিনিধিত্ব করে, তিনি বলেন, ‘‘গত ১৫ বছরে সরকারি কর্মীদের প্রকৃত আয় অনেকটাই ক্ষয় হয়েছে। বর্তমান নির্দেশনা মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে আয়কে কিছুটা সামঞ্জস্যে রাখতে পারলেও দীর্ঘমেয়াদি কর্মী সংকট ও দক্ষতা ঘাটতি এতে কাটবে না।’’

থমাস আরও বলেন, ‘‘বিশেষায়িত দক্ষতার স্বীকৃতি দেওয়া হলেও, সরকার যদি একটি প্রমাণভিত্তিক, স্বচ্ছ ও দীর্ঘমেয়াদি বেতন কাঠামোর রূপরেখা না দেয়, তাহলে এই সংকট অব্যাহত থাকবে। সরকারকে এখনই একটি কৌশলগত পরিকল্পনা নিয়ে সামনে আসতে হবে।’’

পাবলিক সেক্টরের নেতৃস্থানীয় সংগঠন এফডিএ-এর সহকারী মহাসচিব লরেন ক্রাওলি বলেন, ‘‘সরকার সিনিয়র স্যালারিজ রিভিউ বডির (এসএসআরবি) মূল সুপারিশ মেনে নিলেও, সামগ্রিকভাবে এটি পাবলিক সেক্টরের অন্যতম ক্ষীণ বেতন বৃদ্ধি। মূল সমস্যা থেকে সরকার বারবার মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।’’

তিনি যোগ করেন, ‘‘সরকার ডিজিটাল ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে দক্ষ জনবল নিয়োগে আগ্রহী হলেও, বেতন কাঠামোর ভিতরকার দীর্ঘদিনের জটিলতা না কাটানোয় সেই লক্ষ্য পূরণ হবে না। এই সংকটে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ। যেখানে অন্যান্য খাতে বেতন নির্ধারণ নিরপেক্ষ বডির সুপারিশের ওপর নির্ভর করে, সেখানে সিভিল সার্ভিসের অধিকাংশ কর্মীর বেতন কেবলমাত্র মন্ত্রীদের সিদ্ধান্তে নির্ধারিত হয়।’’

এফডিএ দাবি করেছে, ‘‘সমস্ত গ্রেডের জন্য একটি স্বাধীন বেতন নির্ধারণী পর্ষদ গঠনের মাধ্যমে সিভিল সার্ভিসের বেতন কাঠামোকে রাজনীতিমুক্ত ও দীর্ঘমেয়াদে টেকসই করতে হবে।’’


সরকারি কর্মীদের বেতন বৃদ্ধি নিয়ে চলমান বিতর্ক আগামী দিনগুলোতে আরও তীব্র হতে পারে। সরকারি ও বেসামরিক খাতের মধ্যে আস্থার সংকট এবং দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারের অভাব সমাধানে সরকার কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে, তার ওপর নির্ভর করবে ভবিষ্যতের জনশক্তি পরিচালনার দিকনির্দেশনা।

 


সূত্র:https://tinyurl.com/2tvej94c

আফরোজা

×