
স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল
স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। স্বাস্থ্যই শ্রেষ্ঠ সম্পদ। ধন-সম্পদের ক্ষতি হলে তা আবার পূরণ করা যায়। তবে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হলে তা আর পূরণ করা যায় না। তবে স্বাস্থ্য রক্ষার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সুস্বাস্থ্যের কথা কি আমরা কখনো ভেবে দেখি। সুস্বাস্থ্য যে মহান আল্লাহতালার কত বড় নেয়ামত তা কেবল অসুস্থ হলে বুঝা যায়। মহান আল্লাহতালা সকল কিছুর মালিক। ডাক্তারের চিকিৎসা, নার্সদের সেবা, আয়া ওয়ার্ডবয়দের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, একজন রোগীর সুস্থ হওয়ার পেছনে অবদান রাখেন। ভালো ডাক্তার তার অর্জিত জ্ঞানের মাধ্যমে রোগীর চিকিৎসা করে থাকেন।
নার্সরা ডাক্তারদের চিকিৎসা পদ্ধতি রোগীদের মাঝে প্রয়োগ ও পরিচর্যার মাধ্যমে সেবা প্রদান করে থাকেন। তারা সবাই রাতের ঘুম হারাম করে, দিনের আরাম ত্যাগ করে রোগীদের নিরলস সেবা প্রদান করে থাকেন। আয়া, ধোপাড়া ঘেন্না উপেক্ষা করে সর্বদা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করে থাকেন চিকিৎসার জায়গা ও রোগীদের। এটা শুধু টাকা রোজগার কিংবা সুযোগ সুবিধার জন্য নয়। টাকা রোজগারের সুযোগ-সুবিধা তো অন্য পেশাতেও অর্জন আয় করা যায়। এটা মানবিকতা ও মানবপ্রেম থেকে। আখিরাতের সওয়াব অর্জনের জন্য। ডাক্তার, নার্স, আয়া, ধোপাসহ চিকিৎসার কাজে জড়িত সবাই আমাদের মতোই মানুষ।
আমরা রোগীরা আমাদের আত্মীয়-স্বজনরা যখন চিকিৎসা নিতে কোথাও যাই, বিশেষ করে সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রে তখন অস্থির হয়ে যাই। আমাদের বুঝা উচিত যার সামনে আছি তিনি একজন মানুষ। আর আমরা শত জন। একজনের পক্ষে অনেককে সেবা দিতে কিছুটা হিমশিম খেতে হয়। তাই ধৈর্য ধরা উচিত। তাদের সঠিক সেবা প্রদানের সুযোগ করে দেওয়া উচিত।
ভালো মন্দ সব জায়গাতেই আছে। আমি ভালোর কথা বলছি। ডাক্তার, নার্সরা এমন একটি পেশায় নিয়োজিত যেখানে নিরলস পরিশ্রম করতেই হয়। ফাঁকিবাজির সুযোগ নেই। সংশ্লিষ্টদের মতে, ডাক্তার, নার্স, আয়া, ধোপাদের পেশাক্ষেত্রে সুযোগ সুবিধা বাড়ানো উচিত। কারণ করোনার সময় এটা প্রমাণ হয়েছে আমাদের অন্য পেশার লোক থেকে ডাক্তার, নার্স ও চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত পেশার মানুষ বেশি দরকার। কারণ সবার আগে তাদের প্রয়োজন হয়। তারা সরাসরি সবার প্রথমে মানুষের উপকারে আসেন। পৃথিবীর সমস্ত দুর্যোগে তাদেরই আগে এগিয়ে আসতে হয়। আমাদের ভালো থাকার কারণেই তাদের যতœ আমাদের করতে হবে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মানুষ বেশি। সচেতনতা কম।
অতীতে জ্ঞানী গুণীরা বড় বড় হাসপাতাল তৈরি করে রেখে গেছেন। এখনো বিভিন্ন মেডিক্যালের আশপাশে অনেক জায়গা খালি আছে। আরও মেডিক্যাল ভবন করা উচিত। এটা সময়ের প্রয়োজন। মানুষ যাতে সহজে ও আরামে চিকিৎসাসেবা পেতে পারে। প্রতিটা উপজেলা হাসপাতালে হাজার শয্যার ব্যবস্থা করে মেডিক্যাল চিকিৎসার সুযোগ সুবিধা আরও উন্নত করা যায়। তাহলে মানুষের স্বাস্থ্য খাতে সুযোগ সুবিধা আরও বেশি পাবে।
দেশে টেস্ট ছাড়া বর্তমানে সহজে চিকিৎসা পাওয়া যায় না। তাই মানবজাতির যত রকমের টেস্ট করা হয় তার সব মেশিন বেশি বেশি সরকারি হাসপাতালে স্থাপন করা দরকার। এসব যন্ত্রপাতি বিনাশুল্কে আমদানি ব্যবস্থা করা যেতে পারে। টিকেট দেওয়ার বুথ সংখ্যাও বাড়ানো যেতে পারে। দেশের অ্যাম্বুলেন্স সেবার ব্যবস্থাপনাও খুব খারাপ। মেডিক্যাল সিস্টেম সংবলিত অ্যাম্বুলেন্স বিনাশুল্কে আমদানি ব্যবস্থা করতে হবে। যারা বিপদের সময় মানুষের কাছ থেকে জোর করে জিম্মি করে টাকা সুযোগ-সুবিধা আদায় করে তারা মহা অপরাধী।
তাদের এমন অপরাধের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে দেখা যাচ্ছে বাইরে থেকে রোগী নিয়ে কোন অ্যাম্বুলেন্স আসলে, পরে রোগীকে সে অ্যাম্বুলেন্সে যেতে দেওয়া হয় না। অসুস্থ রোগীকে সামনে রেখে হাসপাতালে অবস্থানরত অ্যাম্বুলেন্সে বেশি ভাড়ায় ব্যবহার করতে বাধ্য করা হয় । এটা কঠোরভাবে বন্ধ করতে হবে। পরিপত্র জারি করে থানাকে বাধ্য করতে হবে এমন অপরাধের দ্রুত ব্যবস্থা নিতে।
সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডাক্তারদের বসার জায়গা অনেক কম। আর রোগীরা গায়ে গা লাগিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। এতে সংক্রামিত হবার ঝুঁকি থাকে। আনসারদের নির্দেশ দিলে রোগীরা ফাঁকা ফাঁকা হয়ে দাঁড়াবে এটা তেমন কঠিন কিছু না। সরকারের আরেকটা মহৎ উদ্যোগ বিনামূল্যে চিকিৎসায় ও খাবার বিতরণ। তবে খাবারের মান এখনও উন্নত হয় নাই। খাবারের মান উন্নত করা প্রয়োজন। সরকার তো কলা, রুটি, দুধ, ডিম রোগীদের দিচ্ছে। সঙ্গে যদি পাঁচ লিটার করে পানি দেওয়া যায় তাহলে অনেক বেশি উপকার হয়। আর রান্না করা খাবার ভাত, মাছ, গোস্ত, ডাল, সবজি সবই প্রতিদিন দেওয়া হচ্ছে।
যদিও খাবারের মান নিয়ে রয়েছে নানা সমালোচনা। কাজেই সরকারি প্রতিটি হাসপাতালে রান্নার আধুনিক ভবন তৈরি করে, প্রতিটি আইটেমের খাবারের আলাদা রান্নার দায়িত্ব যদি আলাদাভাবে দেওয়া চায় তাহলে খাবারের মান ও স্বাদ উন্নত হতে পারে । দক্ষ ব্যবস্থাপনাই পারে এসব অসঙ্গতি দূর করতে। প্রচলিত তদারকি আরও বাড়াতে হবে। সুস্থ জাতি তৈরি না হলে, আর সুস্থ সমাজ ব্যবস্থা না থাকলে উন্নত দেশ হবে না। শুধু অবকাঠামো উন্নয়নের সুফল কেউ পাবে না যদি না মূল সেবার গুণগত মান নিশ্চিত না হয়। সুস্থ জাতি গঠনে খাদ্য এবং চিকিৎসা খাতকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। কৃষক ভালো থাকলেই ভাল খাদ্য আসবে। চিকিৎসক নার্সরা ভালো থাকলেই ভালো চিকিৎসা নিশ্চিত হবে।