ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৫ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সাক্ষাৎকারে নবনির্বাচিত বিকেএমইএ সভাপতি

চলমান আলোচনা সফল হলে দেশের পোশাকশিল্প বহুদূর এগিয়ে যাবে

জিয়াউল হক মিজান

প্রকাশিত: ০০:১০, ২৫ মে ২০২৫

চলমান আলোচনা সফল হলে দেশের পোশাকশিল্প বহুদূর এগিয়ে যাবে

মোহাম্মদ হাতেম

বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) নবনির্বাচিত সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেছেন, চীনা বিনিয়োগ এবং আমেরিকার সঙ্গে এফটিএসহ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বর্তমানে বিশ্বব্যাপী যে নেগোসিয়েশন চলছে, তা যদি সফলভাবে সম্পন্ন হয়, তবে বাংলাদেশের আরএমজি সেক্টর অনেকদূর এগিয়ে যাবে। আমার বিশ্বাস, বর্তমান সরকার এ কাজটি সফলভাবেই করতে পারবে। সম্প্রতি দৈনিক জনকণ্ঠকে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন গুরুত্বপূর্ণ এই ব্যবসায়ী নেতা। সাক্ষাৎকারের নির্বাচিত অংশ তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- জিয়াউল হক মিজান।
জনকণ্ঠ : দৈনিক জনকণ্ঠের পক্ষ থেকে আপনাকে অভিনন্দন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনায় অনুষ্ঠিত দেশের প্রথম নির্বাচনে আপনি বিকেএমইএ সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। আপনার অনুভূতি জানতে চাই।
মোহাম্মদ হাতেম : আপনাকে এবং দৈনিক জনকণ্ঠের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ। অনেক দিন পর দেশের মানুষ একটি স্বতঃস্ফূর্ত নির্বাচন দেখেছেন। ভোটাররা ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে ভোট দিয়েছেন। আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন, আমাকে পূর্ণ প্যানেলে বিজয়ী করেছেন। এজন্যে বিকেএমইএর সকল সদস্যের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। শীঘ্রই বিজিএমইএ নির্বাচন হবে, নতুন নেতৃত্ব আসবে। এর মাধ্যমে আমাদের সম্ভাবনাময় তৈরি পোশাক শিল্পখাত সামনের দিকে এগিয়ে যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
জনকণ্ঠ : সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করার উদ্যোগ নিয়েছে। বিষয়টিকে আপনারা কীভাবে দেখছেন? 
মোহাম্মদ হাতেম : নিঃসন্দেহে এটি একটি ভালো উদ্যোগ। আমেরিকার কাঁচামাল দিয়ে তৈরি পণ্য সেদেশে রপ্তানির ক্ষেত্রে ডিউটি ফ্রি করার জন্য একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করার কথা আমরা দীর্র্ঘদিন ধরে বলে আসছি। টিকফাতেও এটি বলা হয়েছিল। কিন্তু হয়নি। এখন যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এটাকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। আমরা বাণিজ্য উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়কে ধন্যবাদ জানাই, ওনারা এফটিএর ব্যাপারে ত্বরিত পদক্ষেপ নিয়েছেন। আমাদের বিশ্বাস, এ ধরনের একটা উদ্যোগকে দ্রুত কার্যকর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া ওনাদের পক্ষে সম্ভব। আমরা খুবই আশাবাদী।
জনকণ্ঠ : চীনও তো নতুন করে বিনিয়োগে এগিয়ে আসছে। এর সম্ভাবনা কেমন?
মোহাম্মদ হাতেম : চায়নার সঙ্গে আমাদের নানাভাবে কথাবার্তা হচ্ছে। তাদের বিনিয়োগকারীরা আসছেন। বাণিজ্য প্রতিনিধিদলও আসছে। বিডার সঙ্গে তাদের মিটিং হচ্ছে। আমাদের সঙ্গেও হচ্ছে। চায়না যদি এদেশে বিনিয়োগ বাড়ায়, আমরা যদি সেদেশে রপ্তানি বাড়াতে পারি, সেটা হবে উভয়ের জন্য উইন উইন সিচ্যুয়েশন। তা ছাড়া চায়নার সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য বাড়লে আমাদের সব উন্নয়ন কাজেই চায়নার সহযোগিতা পাওয়া যাবে।
জনকণ্ঠ : আমরা তো আগামী বছর স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হতে যাচ্ছি। বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
মোহাম্মদ হাতেম : আমি গত দুই বছর ধরেই বলছি, গত সরকারের সময়ও বাববার বলেছি যে, ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণের কোনো সক্ষমতা আমাদের নেই। অন্তত: দেশের রপ্তানি খাতের পরিস্থিতি কোনোভাবেই উপযুক্ত নয়। আমাদের যেকোনো মূল্যে এখান থেকে ফিরে আসতে হবে। এর পরও সরকার যেহেতু সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছে, সেক্ষেত্রে আমাদের রপ্তানি খাতগুলোর জন্য কী ব্যবস্থা নেবে, সে বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হওয়া দরকার। আমাদের তো একটা রোডম্যাপ দিতেই হবে। রোডম্যাপ ছাড়া সবাই বসে থাকলে এবং নির্দিষ্ট সময়ে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন হয়ে গেলে তখন আমাদের গভীর সমুদ্রে হাতড়ানো ছাড়া উপায় থাকবে না। আমরাই তো স্টেক হোল্ডার।

আমাদের সঙ্গে তো এ পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি। রপ্তানি খাতকে কী দেওয়া হবে? আমরা বি জিএসপি প্লাস পাবো? এসব নিয়ে তো কোনো কথাই হলো না। ডব্লিওটিও রুলস অনুযায়ী কিন্তু গ্র্যাজুয়েশনের পরও তিন বছর পর্যন্ত ফ্যাসিলিটিগুলো অব্যাহত রাখার সুযোগ আছে। কিন্তু আমরা তো আরও এক বছর আগে থেকেই সব বন্ধ করে দিয়েছি! বাংলাদেশ ব্যাংক এক বছর আগেই সব বন্ধ করে দিয়েছে! আমাদের ইডিএফ বন্ধ, আমাদের ইনসেনটিভ বন্ধ। যেখানে ‘২৬ সালের পরেও তিন বছর নেওয়ার সুযোগ আছে সেখানে এক বছর আগেই সরকার সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দিয়েছে। আমি মনে করি এটা রপ্তানি খাতকে ভীষণভাবে ভোগাচ্ছে। এবং রপ্তানিখাত সক্ষমতা হারাচ্ছে। এর ফলে আমরা দিনদিন প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে যাচ্ছি। 
জনকণ্ঠ : এলডিসিতে থাকা না থাকা তো সরকারের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে না। এটা নির্ধারণ করে জাতিসংঘ। এক্ষেত্রে সরকারের কি কিছু করার আছে?
মোহাম্মদ হাতেম : আছে। আমাদের সামনে দুইটা সুযোগ ছিল। একটা হলো, আমাদের দেশে নতুন সরকার এসেছে। এই সরকার দায়িত্ব নিয়েই বলতে পারত আমাদের এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের রোডম্যাপ তৈরির জন্য সময় দিতে হবে। এটা বলে আবেদন করলে সময় পাওয়ার সুযোগ ছিল। দ্বিতীয় হলো, বিগত সরকারের সময় আমাদের রপ্তানিসহ বিভিন্ন হিসাবে যে অতিরঞ্জিত করা হয়েছে, সবকিছু বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে, সেই হিসাবের ওপর ভিত্তি করে জাতিসংঘ আমাদের এলডিসি থেকে বের করে দিচ্ছে। এটা সরকার বলতে পারত।
জনকণ্ঠ : অর্থনৈতিক সংস্কার কমিশনের রিপোর্টে তো তথ্যগুলো বাড়িয়ে দেখানোর বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।
মোহাম্মদ হাতেম : বলেনি ঠিক, মুখে তো বলছে। সরকারের বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থা এ সত্যতা স্বীকার করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকই তো স্বীকার করলো, রপ্তানির যে ফিগার দেখানো হয়েছে তা সঠিক নয়। তারা রপ্তানি ফিগার কারেকশনও করেছে। ৪৭ বিলিয়ন রপ্তানি দেখানো হলো। এটা যে সঠিক নয়, আমি সেটা ২০২২ সালে ডিসেম্বরের তিন কি চার তারিখেই বলেছি। আমি স্পষ্ট করে বলেছি, এই রপ্তানি আমরা করিনি, আমাদের সঙ্গে এই হিসাবের মিল নেই। আমরা বারবার বলেছি, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো যে হিসাব দিয়ে যাচ্ছে তার সঙ্গে আমরা একমত না। তার অর্থ দাঁড়ায় একটা ভুল তথ্যের ভিত্তিতে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এটা আমাদের জন্য চরম ক্ষতির কারণ হবে।
জনকণ্ঠ : সব কিছু তো চূড়ান্ত। এখন কি সরকারের কিছু করার আছে?
মোহাম্মদ হাতেম : আছে। সরকারপ্রধান যদি এখনো একটা চিঠি দেন যে, ভুল ফিগারের ভিত্তিতে আমাদের এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন হচ্ছে। তখন আমরা আকটা যৌক্তিক সময় যেতে পারি। এক্ষেত্রে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ও আইএমএফসহ অনেকেই আমাদের সহযোগিতা করবে বলে আমার বিশ্বাস।
জনকণ্ঠ : সরকারের কি সে অবস্থান নেবে বলে আপনার মনে হচ্ছে?
মোহাম্মদ হাতেম : অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে সে সম্ভাবনা কম। কিন্তু সরকার যদি গ্র্যাজুয়েশনের সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলে, ব্যবসায়ী হিসেবে আমরা তো সে সিদ্ধান্ত মেনে নিতে বাধ্য। তখন আমাদের দায়িত্ব হবে সে সিদ্ধান্তের আলোকে সরকারকে সহযোগিতা করা। আর সরকারের দায়িত্ব হবে আমাদের সঙ্গে নিয়ে বসা। আমরা একটা রোডম্যাপ চাই। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার আমাদের কীভাবে সহযোগিতা করবে তার একটা রোডম্যাপ এখনই দরবার। তাহলে হয়তো সরকারের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একসঙ্গে কাজ শুরু 
করতে পারব।
জনকণ্ঠ : যে তিনটি ব্যারোমিটারের ওপর ভিত্তি করে জাতিসংঘ আমাদের এলডিসি উত্তরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার সবগুলোতেই তো আমাদের অবস্থা বেশ ভালো। তারপরও আপনারা ভয় পাচ্ছেন কেন?
মোহাম্মদ হাতেম : আমি প্র্যাকটিক্যাল ফিল্ডের মানুষ। আমি তো দেখছি আমাদের ব্যবসায়ীরা ভালো নেই। তারা মরে যাচ্ছে। তারা ব্যবসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছে। খেলাপি হয়ে যাচ্ছে। যে পলিসি আমাদের ব্যবসায়ীদের ধ্বংস করে দিচ্ছে, অর্থনীতিকে পিছিয়ে দিচ্ছে সেই পলিসিকেই তারা বলছেন বেস্ট পলিসি।

দেশে বেস্ট পলিসি চলছে অথচ ব্যবসায়ীরা আইসিইউতে আছেন! কেউ যখন আইসিইউতে থাকেন, তখন তার বেস্ট প্র্যাকটিস করার সুযোগ থাকে না। তাকে নিবিড় পরিচর্যা দিয়ে যতœ করে সুস্থ করে তুলতে হয়। স্পেশাল ট্রিটমেন্ট দিয়ে আইসিইউ থেকে বের করে আনতে হয়। তা না করে আমাকে যদি বেস্ট প্র্যাকটিসে বাধ্য করা হয়ে তবে আমি বলবো ইন্ডাস্ট্রির জন্য এটা মরণ ফাঁদ। 
জনকণ্ঠ : কী তথ্যের ভিত্তিতে আপনি দাবি করছেন যে, ব্যবসায়ীরা আইসিইউতে আছেন?
মোহাম্মদ হাতেম : গত এক বছরে অন্তত ২০০ ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে গেছে। এটা বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব, আপনাদের মিডিয়ারও হিসাব। আরও অনেক ফ্যাক্টরি বন্ধ হতে যাচ্ছে। আমরা নানা রকম প্রতিকূলতা মোকাবিলা করছি। রপ্তানি খাতের যে পরিস্থিতি, আমাদের যে প্রাইস, ব্যাংকিং খাতের চরম অসহযোগিতা, ব্যাক  টু ব্যাক এলসি হচ্ছে দেরিতে। আমরা প্রতিনিয়ত শিপমেন্ট ডেট ফেল করছি। এতে করে আমি ডিসকাউন্ট খাচ্ছি। অর্থনৈতিকভাবে আমি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। ঋণের একটা কিস্তি ফেল করলে আমি ঋণখেলাপি হয়ে যাচ্ছি। এসব কিছু মিলিয়েই ব্যবসায়ীদের জন্য মরণ ফাঁদ তৈরি হয়েছে।

আপরদিকে আমাদের ফ্যাসিলিটিগুলোর দিকে দেখেন, ১০ হাজার কোটি টাকার একটা ইডিএফ ফ্যাসিলিটি ছিল, ১০ হাজার কোটি টাকার প্রি শিপমেন্ট ফান্ড ছিল। আমরা ফাইভ পার্সেন্টে ঋণ পেতাম। এগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। ইনসেনটিভ বন্ধ। ইন্টার্নশিপ ১৫-১৬ পার্সেন্ট। এতো কিছু নিয়ে কি ইন্ডাস্ট্রির পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব? এজন্যই বলছি ইন্ডাস্ট্রি আইসিইউতে আছে। আইসিইউ থেকে তাদের স্পেশাল ট্রিটমেন্ট দিয়ে বের করে আনতে হবে।
জনকণ্ঠ : সরকার পরিবর্তনের কারণে কি ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে আপনি মনে করেন?
মোহাম্মদ হাতেম : না, সরকার পরিবর্তনের কারণে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এমন কথার সঙ্গে আমি পুরোপুরি একমত না। সরকার চেষ্টা করছে ক্ষতিগ্রস্তদের টেনে তোলার জন্য। তবে হ্যাঁ, একটু স্লো এগুচ্ছে। যখন যে পলিসিটা হওয়া দরকার, সেটা হতে যদি তিনমাস-ছয়মাস দেরি হয়, ততক্ষণে বাজার আমাদের হাতছাড়া হয়ে যায়। আমি মনে করি সে জায়গাটাতে সরকারকে আরও তৎপর হতে হবে। পাশাপাশি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শ্রম মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় এই তিনটা মন্ত্রণালয়ে যেসব পলিসি রয়েছে সেগুলোকে ঢেলে সাজাতে হবে। এনবিআরের অনেক পলিসি আছে যেগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে। ব্যাংকিং খাতের চরম অসহযোগিতা চলছে। এই অসহযোগিতা থেকে আমাদের বের করতে হবে। মনে রাখতে হবে, ক্যান্সার হলে কিন্তু রোগী সঙ্গে সঙ্গে মরে না। দুই তিন বছর সময় লাগে। উপযুক্ত চিকিৎসা পেলে ক্যান্সার থেকেও মানুষ উদ্ধার হয়ে আসে। 
জনকণ্ঠ : রাজনৈতিক কারণে যেসব ব্যবসায়ী পলাতক রয়েছেন তাদের কারখানাগুলোর ভবিষ্যৎ কী?
মোহাম্মদ হাতেম : এক্ষেত্রে আমার বক্তব্য হলো, প্রতিষ্ঠানের যিনি মালিক তিনি হয়তো রাজনীতি করেছেন, প্রতিষ্ঠান তো রাজনীতি করেনি। মালিক হয়তো দেশত্যাগ করেছেন কিন্তু প্রতিষ্ঠান তো আছে। এসব প্রতিষ্ঠান যাতে চলমান থাকে এ জন্য বিজিএমইএ-বিকেএমইএ থেকে যা করা দরকার আমরা করে যাচ্ছি। কিন্তু সরকারেরও কিছু করণীয় আছে। মালিকের অনুপস্থিতিতে বহিরাগত কারো দ্বারা যেন প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেটা সরকারকেই দেখতে হবে। সরকার দেখছেও।
জনকণ্ঠ : ইতিমধ্যে যেসব কারখানা বন্ধ হয়েছে, যেসব শ্রমিক চাকরি হারিয়েছে তাদের কী হবে?
মোহাম্মদ হাতেম : কিছু ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়েছে আবার নতুন নতুন ফ্যাক্টরি হচ্ছেও। ওসব জায়গায় চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। এক্ষেত্রে বেক্সিমকোসহ যেসব কারখানার শ্রমিকদের পূর্ণ সযোগ-সুবিধা দিয়ে বিদায় করা হয়েছে তাদের অনেকেই টাকা নিয়ে গ্রামে চলে গেছে। ছোটখাটো ব্যবসা করছে। আবার অনেকে নতুন ফ্যাক্টরিতে যোগ দিচ্ছে। তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
জনকণ্ঠ : সামনে বাজেট আসছে। বাজেট সম্পর্কে আরএমজি সেক্টরের প্রত্যাশা কী?
মোহাম্মদ হাতেম : বাজেটের ব্যাপারে আমরা আশাবাদী এনবিআর আমাদের দাবিগুলো নিয়ে কাজ করবে। বিশেষ করে করনীতি নিয়ে এবার অনেকগুলো সম্ভাবনা রয়েছে। অনেকদিন ধরেই আমরা বলে আসছি আমাদের করনীতি ব্যবসা-বিনিয়োগের জন্য প্রতিবন্ধক। এই পলিসিতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। পাশাপাশি ভ্যাট ও কাস্টমস পলিসি নিয়ে এবার আমরা আশাবাদী কিছু ভালো সিদ্ধান্ত আসবে। কারণ এনবিআরের বর্তমান চেয়ারম্যান অত্যন্ত ডায়নামিক। তিনি আমাদের সমস্যাগুলো বোঝেন।
জনকণ্ঠ : কিন্তু সরকার তো এনবিআর ভেঙেই দিয়েছে।
মোহাম্মদ হাতেম : এনবিআর ভেঙে দিলেও এতে কোনো সমস্যা হবে না। এনবিআর ভেঙে দেওয়ার দাবি আমাদের দীর্ঘদিনের। এখন যে কমিশন হয়েছে তাদের ওপর আমাদেন যথেষ্ট আস্থা আছে। আমি মনে করি সরকার সঠিক পথেই আছে। 
জনকণ্ঠ : চট্টগ্রাম বন্দর আধুনিকায়নে সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে। বিশেষ করে বিদেশি ম্যানেজমেন্টকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
মোহাম্মদ হাতেম : আমি আপনাকে জোর দিয়ে বলতে পারি, চট্টগ্রাম বন্দরের যে সক্ষমতা তার চেয়ে অনেক বেশি সার্ভিস তারা আমাদের দিয়ে আসছেন। এজন্যে আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। পাশাপাশি সরকার যে বন্দর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বিদেশিদের হাতে দিতে চাচ্ছে, আমি মনে করি এটি সঠিক সিদ্ধান্ত। কারণ এক্সপার্ট বিদেশিরা যদি বন্দর ব্যবস্থাপনায় আসে, পাশাপাশি আমাদের দেশের যে লোকগুলো যেখানে যুক্ত থাকবে, তারা কিন্তু বিশ্বের সর্বাধুনিক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবে। এতে পরবর্তীতে আমরা আমাদের লোকদের দ্বারাও বন্দর পরিচালনা করতে পারব। এই সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। এটি একটি সাহসী সিদ্ধান্ত, সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত।
জনকণ্ঠ : আগামী এক বছর পরে দেশের তৈরি পোশাক শিল্পকে আপনি কোন অবস্থানে দেখতে চান?
মোহাম্মদ হাতেম : বর্তমানে বিশ্বব্যাপী আমাদের যে নেগোসিয়েশন পর্ব চলছে, আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য নেগোসিয়েশনের যে পর্বটা চলছে, এটা যদি সফলভাবে সম্পন্ন হয়, আমরা যদি এফটিএটা সফলভাবে করতে পারি তবে বাংলাদেশের আরএমজি সেক্টর অনেকদূর এগিয়ে যাবে। আমার বিশ্বাস, বর্তমান সরকার এ কাজটি সফলভাবেই করতে পারবে। সরকারের পক্ষ থেকে আমরা আরেকটি বিষয়ে সহযোগিতা চাইব, দীর্ঘদিন ধরেই আমরা বলে আসছি, ম্যানমেইড ফাইবারের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে যেসব বাধা আছে সেগুলো দূর করতে হবে।

কটন আমদানিতে যদি কোনো ডিউটি না থাকে তবে ওখানে কেন থাকবে? বিশ্ববাজারে এখন ম্যানিমেইড ফাইবারের পোশাকের চাহিদা ৭৫ পার্সেন্ট। আমাদের ওই জায়গাটাতে দ্রুত যাওয়া দরকার। ম্যানমেইড ফাইবারে এগোতে পারলে বিশ্ববাজারে আমাদের রপ্তানি অনেকগুণ বেড়ে যাবে। আমরা তখন ডাইভারসিফাইড প্রোডাক্টের দিকে যেতে পারব।

×