
ছবি: সংগৃহীত
১৪০০ বছর আগে যখন কোরআন নাযিল হয়, তখন মানুষ বিশ্বাস করতো পৃথিবীতে শুধু মানুষ আর জীবজন্তুর মধ্যেই লিঙ্গ বা জোড়ার ধারণা রয়েছে। তাদের চোখে নারী-পুরুষ ছাড়া অন্য কোন সৃষ্টির মধ্যে লিঙ্গ বৈচিত্র্য ছিলো না। এমনকি মাত্র ১০০ বছর আগেও বিজ্ঞানীরা এই ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলেন না। মানুষ ও পশুপাখি ছাড়া অন্য কোনো জীবজন্তুতে লিঙ্গ বৈচিত্র্যের কথা জানতে পারেননি তারা।
কিন্তু সেই সময়কার মানুষের অজান্তেই, কোরআন মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে এমন এক সত্য ঘোষণা করেছিল যা আজকের আধুনিক বিজ্ঞানও প্রমাণ করে চলেছে।
“সুবহানাল্লাহলাম পবিত্র ও মহান সে সত্তা, যিনি জোড়া সৃষ্টি করেছেন প্রত্যেকটির যা উৎপন্ন করে জমিন আর তাদের নিজেদের ভিতরেও। আর শেষ হবেও যা তারা জানে না।”
আয়াতে ব্যবহৃত আজওয়াজ শব্দটি হলো জাউজুন শব্দের বহুবচন, যার অর্থ “জোড়া” বা “সঙ্গী।” আরবিতে স্বামী-স্ত্রীকে বলা হয় জাউজ ও জাওজা, যা বোঝায়—এক ধরনের সৃষ্টির মধ্যেই দুই বিপরীত দিকের সঙ্গী বা জোড়া থাকতে পারে।
কোরআনে বর্ণিত তিনটি জোড়ার রহস্য
মহান আল্লাহ তাআলা তিনটি জোড়ার কথা উল্লেখ করেছেন:
- ১. মাটির নিচ থেকে উৎপন্ন জোড়া—অর্থাৎ উদ্ভিদে পুংলিঙ্গ ও স্ত্রীলিঙ্গের অস্তিত্ব।
- ২. মানব সৃষ্টির জোড়া—নারী ও পুরুষের অস্তিত্ব।
- ৩. একটি অজানা জোড়া—যা মানুষ জানে না।
সেই সময় মানুষ এই “জোড়া” বলতে মূলত নারী-পুরুষের পার্থক্য বোঝাতো। কিন্তু কোরআনের আয়াতের সেই “যা তারা জানে না” অংশের গভীরতা আজকের বিজ্ঞান উন্মোচন করেছে।
আধুনিক বিজ্ঞানে জোড়ার বিস্ময়
আমরা এখন জানি, পৃথিবীর প্রতিটি কণা, এমনকি পরমাণুর গঠনও জোড়ায় গঠিত। শুধু প্রোটন, নিউট্রন ও ইলেকট্রন নয়, এগুলোও জোড়ার মধ্যে বিদ্যমান।
প্রতিটি প্রোটনের বিপরীতে আছে অ্যান্টি প্রোটন, ইলেকট্রনের বিপরীতে পজিট্রন, নিউট্রনের বিপরীতে এন্টিনিউট্রন। যখন এই জোড়াগুলো মিশে যায়, তখন তারা ধ্বংস হয় এবং শক্তি উৎপন্ন করে।
এই ধারণাটি আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার, যার জন্য ব্রিটিশ বিজ্ঞানী পল ডিরাক ১৯৩৩ সালে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
পদার্থের বিপরীত ধর্মী জোড়া — অ্যান্টিম্যাটার
পদার্থ বিজ্ঞানে প্রতিটি কণার একটি বিপরীত ধর্মী কণা বা অ্যান্টিম্যাটার রয়েছে, যার চার্জ ও ধর্ম পদার্থের সম্পূর্ণ বিপরীত। যেমন, ইলেকট্রন ঋণাত্মক, পজিট্রন ধনাত্মক; প্রোটন ধনাত্মক, অ্যান্টি প্রোটন ঋণাত্মক। কোয়ান্টাম ফিজিক্সে বলা হয়, এই জোড়াগুলোর অস্তিত্ব ও অনস্তিত্ব একই সাথে সর্বত্র ঘটছে।
জীববিজ্ঞানে জোড়ার ধারাবাহিকতা—ডিএনএ
শুধু পদার্থবিজ্ঞান নয়, জীববিজ্ঞানে ও “জোড়া” রয়েছে। আধুনিক গবেষণায় জানা গেছে, ডিএনএর গঠনে রয়েছে বেস পেয়ারিং—এডেনিন থাইমিন, গুয়ানিন সাইটোসিনের জোড়া।
প্রাচীন জ্ঞানে আধুনিক বৈজ্ঞানিক সত্য
এই সমস্ত আবিষ্কারই প্রমাণ করে, প্রায় দেড় হাজার বছর আগে কোরআনে তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে—যা সময়ের সাথে আরও বর্ধিত ও প্রমাণিত হয়েছে।
তুরস্কের বিখ্যাত স্কলার ওস্তাদ সাঈদ নরসি তাই বলেছিলেন, সময় যতই বয়স্ক হবে, কোরআন ততই তরুণ হয়ে উঠবে।
এসএফ